ভূমধ্যসাগর হয়ে ফিলিস্তিনের গাজার উদ্দেশে ত্রাণ নিয়ে যাত্রা করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ১৩টি নৌযান আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই ঘটনায় ৩৭ দেশের ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে আটক করেছে তারা। আটকদের মধ্যে রয়েছেন দুইজন কলম্বিয়ান নাগরিক। এতে করে ইসরায়েলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো। একইসঙ্গে কলম্বিয়া থেকে ইসরায়েলের সমস্ত কূটনৈতিক দলকে চলে যেতে বলেছেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক পোস্টে এই ঘোষণা করেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট।
‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বহরটিতে থাকা দুজন কলম্বিয়ান নাগরিককে আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তির উদ্ধৃতি দিয়ে পেত্রো তার পোস্টে লিখেছেন, যদি এই তথ্য সত্য হয়, তবে এটি নেতানিয়াহুর দ্বারা সংঘটিত একটি নতুন আন্তর্জাতিক অপরাধ।
এরপর রাজনৈতিক তাত্ত্বিক ও দার্শনিক হান্নাহ আরেন্ডটকে উল্লেখ করে পেত্রো লেখেন, হিটলার বিশ্ব রাজনীতিতে এখনো বেঁচে আছেন; আরেন্ডট সঠিক বলেছিলেন।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট পেত্রো। গত সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন তিনি। এছাড়া, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গাজায় গণহত্যার সহযোগী বলেও আখ্যা দেন তিনি। এছাড়া, নিউইয়র্কে একটি ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে অংশ নেন। এতে করে তার ভিসা বাতিল করে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের গাজার ওপর ইসরায়েলের চাপিয়ে দেওয়া ‘অবৈধ’ অবরোধ ভাঙার উদ্দেশে ৪৬টি নৌযানে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে সম্প্রতি যাত্রা শুরু করে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহর। তাদের উদ্দেশ্য হলো ক্ষুধায় জর্জরিত গাজার অভুক্ত মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু এই ত্রাণবহরকে থামাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। হামাসের স্বার্থ রক্ষায় এই ত্রাণবহর গাজার উদ্দেশে যাত্রা করছে বলে অভিযোগ তুলেছে তারা। তবে, ত্রাণবহরের সঙ্গে হামাসের কোনো সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে পারেনি ইসরায়েল।
এই ত্রাণবহরের নৌযানগুলো গাজা উপকূল থেকে ৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে পৌঁছালে অধিকারকর্মীদের আটক করা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। আটকদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের মতো পরিচিত মুখ। এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি নৌবাহিনী ১৩টি জাহাজ থামিয়েছে এবং সেগুলোতে থাকা অধিকারকর্মীদের একটি ইসরায়েলি বন্দরে নিয়ে গেছে।
এর আগেও গত জুন ও জুলাইয়ে গাজাগামী দুটি ত্রাণবাহী নৌযান আন্তর্জাতিক জলসীমায় আটক করে ইসরায়েল। যার একটিতে গ্রেটা থুনবার্গ ছিলেন। তখনও আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনার মুখে পড়েছিল ইসরায়েল।
গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ ও হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন প্রায় ৬৬ হাজার ফিলিস্তিনি। অঞ্চলটিতে তীব্র খাদ্য সংকট ও মানবিক বিপর্যয় চলছে।
সূত্র : রয়টার্স
বিডি প্রতিদিন/কেএ