শব্দদূষণ শুধু বধিরই করে না, কমিয়ে দেয় মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাও। লোপ পায় স্মৃতিশক্তি। বাড়িয়ে তোলে উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, অনিদ্রা, কিডনি সমস্যা ও মানসিক রোগসহ নানান শারীরিক ও মানসিক জটিলতা। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, যার প্রভাব পড়ে পারিবারিক জীবনেও। কমিয়ে দেয় সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা। শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পূর্ণতা না পাওয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে শিশুদের ওপর। কমে যায় স্মৃতিশক্তি ও শেখার ক্ষমতা। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে আছে ঢাকার শিশুরা। কারণ, বিশ্বের মধ্যে শব্দদূষণে শীর্ষ শহরটির নাম ঢাকা।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) ৬১টি দেশের মধ্য থেকে শব্দদূষণে শীর্ষ ১০টি শহরের তালিকা করেছে। সেই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ঢাকার নাম, যার গড় শব্দদূষণ মাত্রা ১১৯ ডেসিবল। অথচ বাংলাদেশে এলাকার ধরনভেদে শব্দের নির্ধারিত মাত্রা ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ ডেসিবল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৮০ ডেসিবলের বেশি মাত্রার শব্দের মধ্যে দীর্ঘদিন থাকলে মানুষ স্থায়ীভাবে বধির হয়ে যেতে পারে। জার্মানিতে দুই বছর ধরে চলা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এয়ারপোর্টের কাছে বসবাসকারী শিশুদের দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেয়েছে।
এদিকে রাজধানীর ৭৫ ভাগ শব্দদূষণের জন্য যানবাহনকে (হর্ন) দায়ী করেছে ইউএনইপি। আবাসিক এলাকা বা নীরব এলাকা হিসেবে স্বীকৃত হাসপাতালের আশপাশেও রাত-দিন উচ্চশব্দে বাজছে গাড়ির হর্ন। রাস্তার পাশের স্কুলগুলোর সামনে ‘হর্ন বাজানো নিষেধ’ লেখা সাইনবোর্ড থাকলেও কেউ তা মানে না। শাহবাগ মোড়ে রাস্তার দুই পাশে হাসপাতাল থাকলেও সেখানে হর্নের শব্দে পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকা দুষ্কর। গত বছর অক্টোবরে ঢাকার বিমানবন্দরের আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকায় হর্ন নিষিদ্ধ করেন পরিবেশ উপদেষ্টা। অথচ এক বছরে সেখানে মাত্র ১৩টি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। সচিবালয় এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করে সাইনবোর্ড লাগানো হলেও সকাল থেকে সেখানে মাইক নিয়ে শুরু হয় সভা-সমাবেশ। অভিযোগ রয়েছে, দেশে যেখানে শব্দদূষণের সর্বোচ্চ মাত্রা ৭৫ ডেসিবল নির্ধারিত, সেখানে ৮০ থেকে ১০০ ডেসিবল মাত্রার হর্ন আমদানি হচ্ছে। যানবাহনের সঙ্গে বিল্টইন যে হর্ন আসছে, তারও শব্দদূষণ ক্ষমতা ৮০ ডেসিবলের বেশি। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন থাকলেও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই।