গাজামুখী মানবিক নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরায়েলের হামলা ও মানবাধিকারকর্মীদের আটকের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। মালয়েশিয়ার পর ইসরায়েলি এই হস্তক্ষেপকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে আখ্যা দিয়েছে তুরস্ক।
গাজামুখী ত্রাণ বহর আটকে দেয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে স্পেন, ইতালি, জার্মানি, তুরস্ক ও গ্রিসসহ বহু দেশে। আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো ও কলম্বিয়ায় রাস্তায় নেমেছে মানুষ। গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে রওয়ানা দেয়া নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা স্থানীয় সময় বুধবার গভীর রাতে ইসরায়েলি বাধার মুখে পড়ে।
বহরের বেশ কয়েকটি জাহাজ থামিয়ে তাতে উঠে পরে ইসরায়েলি নৌ সেনারা। বন্ধ করে দেয়া হয় নৌযান থেকে চলা সরাসরি সম্প্রচার। পরে নৌযানে থাকা মানবাধিকার কর্মীদের আটক করে সেখানেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে আছেন সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও।
সামাজিক মাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আটককৃতদের ইসরায়েলের একটি নৌ বন্দরে নেয়া হচ্ছে। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানিয়েছে, নৌবহরের অন্তত ১৩টি জাহাজ আটক করেছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। জাহাজগুলোতে থাকা দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবককে আটক করে ইসরায়েলের একটি বন্দরে নেয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে ‘ভীতি প্রদর্শন ও জবরদস্তি’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গাজায় খাদ্য ও জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের বাধা দিয়ে ইসরায়েল মানবতার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছে। ফ্লোটিলার আটক হওয়া ১৩টি জাহাজে ১২ জন মালয়েশীয় নাগরিকও রয়েছেন।
এদিকে, তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলাকে ফ্যাসিবাদী ও সামরিকতাবাদী নীতির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা আটক হওয়া তুর্কি নাগরিকদের মুক্তির দাবিতে আইনি পদক্ষেপ নেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস ঘটনাটিকে শান্তিপূর্ণ মানবিক উদ্যোগের ওপর হামলা আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ফ্লোটিলার সদস্যদের আন্তর্জাতিক আইন মেনে আচরণ করতে হবে। একই সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ফ্লোটিলায় থাকা আইরিশ নাগরিকদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ফরাসি সদস্য এমা ফুরো বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইসরায়েলকে অবরুদ্ধ করো, বৈশ্বিক অর্থনীতি পঙ্গু করে দাও, গাজার অবরোধ ও গণহত্যা শেষ করো। এমা নিজেও ফ্লোটিলার একটি জাহাজে অবস্থান করছেন।
গাজামুখী ফ্লোটিলায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে বিশ্বের বিভিন্ন বড় শহরে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে আন্দোলনকারীরা আটক হওয়া কর্মীদের মুক্তি দাবি করেন। ইসরায়েলের হাতে আটক হওয়া জাহাজগুলোর একটিতে রয়েছেন আর্জেন্টাইন আইনপ্রণেতা সেলেস্ট ফিয়েরো।
বিক্ষোভ হয়েছে আঙ্কারা, মেক্সিকো সিটি, বোগোতা, এবং মাদ্রিদের রাস্তায়ও। তারা ইসরায়েলের হামলা ও কর্মী আটককে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা গাজার মানুষের জন্য অবরোধ ভাঙতে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোরও দাবি জানান। ইসরায়েলি হামলার পর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের মানবিক মিশন থেমে থাকবে না।
তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা ও রয়টার্স।
বিডি-প্রতিদিন/শআ