‘আমি রূপনগরের রাজকন্যা রূপের জাদু এনেছি, ইরান-তুরান পার হয়ে আজ তোমার দেশে এসেছি...’ কিংবদন্তি অভিনেত্রী শবনম এই গানে ঠোঁট মিলিয়ে এ দেশের চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন, দর্শকমনে শিহরণ জাগান। এটি ছিল তাঁর অভিনীত নায়িকা হিসেবে প্রথম ছবি ‘হারানো দিন’-এর গান। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৬১ সালে পরিচালনা করেন ছবিটি। প্রথম ছবিই সুপারহিট। নব্বই দশক পর্যন্ত পাকিস্তান আর বাংলাদেশে প্রায় ১৮৫টি ছবিতে অভিনয় করেন। তারপর শুধুই দর্শকমন জয় করে এগিয়ে যাওয়া তাঁর। পুরান ঢাকার নারিন্দায় ১৯৪০ সালের ১৭ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন ঝর্ণা বসাক। আজ এই রূপনগরের রাজকন্যার আশিতম জন্মদিনে প্রথম তিনি কোনো টিভি চ্যানেলে হাজির হলেন। প্রখ্যাত সাংবাদিক আবদুর রহমানের উপস্থাপনা ও পরিচালনায় ‘শবনম : রূপনগরের রাজকন্যা’ শিরোনামের বিশেষ অনুষ্ঠানে বলেছেন তাঁর স্মৃতিময় জীবনের নানা গল্প। অনুষ্ঠানটি প্রচার হবে আজ রাত ৮টা ২৫ মিনিটে চ্যানেল আইতে। এ ছাড়াও আইসক্রিনে ও চ্যানেল আই অনলাইনে দেখা যাবে এটি। ‘হারানো দিন’ ছবিটির আগে শবনম এহতেশাম পরিচালিত ‘এ দেশ তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে নৃত্যশিল্পী হিসেবে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন।
১৯৬২ সালে উর্দু চলচ্চিত্র এহতেশামের ‘চান্দা’তে অভিনয় করে সমগ্র পাকিস্তানে তারকা-খ্যাতি অর্জন করেন। ষাট থেকে আশি দীর্ঘ তিন দশক ধরে একটানা অভিনয় করে নায়িকা খ্যাতি ধরে রেখেছিলেন তিনি। তিনিই একমাত্র অভিনেত্রী, যিনি পাকিস্তান চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা নিগার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন ১২ বার। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও পাকিস্তান মিলিয়ে অসংখ্য নানা সম্মাননায় সমৃদ্ধ হয় তাঁর অর্জনের ঝুলি।
৪০ বছরের বর্ণাঢ্য চলচ্চিত্র জীবন তাঁর। ১৯৯৯ সালে সর্বশেষ অভিনয় করেছেন ‘আম্মাজান’ চলচ্চিত্রে। বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ক্যাপ্টেন এহতেশাম ‘হারানো দিন’ ছবিতে তাঁকে শবনম নামটি দেন। শবনম নামের অর্থ হলো- ‘ফুলের মধ্যে বিন্দু বিন্দু শিশির ঝরে পড়া।’ ১৯৬৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর শবনম বিয়ে করেন খ্যাতিমান সংগীত পরিচালক রবীণ ঘোষকে। ২০১৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পরলোকগমন করেন রবীণ ঘোষ। একমাত্র পুত্র রনি ঘোষকে নিয়ে ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএসের বাসায় সময় কাটে শবনমের। শবনমের একমাত্র বড় বোন নন্দিতা দাস কলকাতার সিমলা রোডে বাস করেন। মাঝে মধ্যে বোনের কাছেও বেড়াতে যান। এই অভিনেত্রীর বাবা ননী বসাক ছিলেন একজন স্বনামধন্য স্কাউট প্রশিক্ষক ও ফুটবল রেফারি। ১৯৬৮ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে স্থায়ীভাবে বাস করতে থাকেন। সত্তর দশকের শুরুতে ললিউডে (লাহোর) পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকা হিসেবে নিজের স্থান পাকাপোক্ত করেন। ১৯৮৮ সালে ঢাকা ও লাহোরের চলচ্চিত্রে একসঙ্গে অভিনয় করতে থাকেন। আশির দশকে ঢাকার শর্ত, সন্ধি, সহধর্মিণী, যোগাযোগ, আমার সংসার, চোর, জুলি ছবিতে অভিনয় করেন। নব্বই দশকের শেষভাগে ঢাকায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৯৯ সালে সর্বশেষ কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘আম্মাজান’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
ছবিটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায় এবং শবনম এ প্রজন্মের দর্শকদের কাছেও সমান জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এ প্রসঙ্গে শবনম বলেন, ‘আমার ভাগ্য ভালো যে, আমার অভিনীত প্রথম ও শেষ ছবি ছিল আমার ক্যারিয়ারের সেরা ছবি।’