খ্যাতনামা চলচ্চিত্রকার শফি বিক্রমপুরী। মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার মত্তগ্রামে নানার বাড়িতে জন্ম তার। তিনি এ দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের সোনালি যুগের অত্যন্ত সফল একজন নির্মাতা। ১৯৬৪ সালে হলিউডের বিখ্যাত ইংরেজি ছবি এঞ্জেলিক এবং ফান্টুমাসের মাধ্যমে তিনি পরিবেশনার কাজ শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে দক্ষিণাঞ্চলের লোকজ প্রেমকাহিনি অবলম্বনে নির্মিত ‘গুনাই বিবি’ ছবিতে একজন অংশীদার হিসেবে বিনিয়োগ করেন। এরপর কয়েকটি বাংলা এবং উর্দুু ছবিও তিনি পরিবেশনা করেন। ১৯৭২ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সুভাষ দত্ত পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী পরিবেশনা করেন। একই সালের নভেম্বরে ঢাকার জোনাকী সিনেমা হলে এ ছবিটির প্রেস শো করা হয়। সে সময়ের দেশবরেণ্য ও নন্দিত ব্যক্তিবর্গ ছবিটি দেখেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানও সিনেমা হলে বসে ছবিটি দেখেন। ছবিটি মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হলে সেখান থেকে মেরিট অব ডিপ্লোমা পুরস্কার পায়। এরপর তার প্রযোজনায় নির্মিত ফোক ফ্যান্টাসি জাদুর ছবি ‘ডাকু মনসুর’, ‘বাহাদুর’ ও ‘রাজদুলারী’ এ তিনটি পরপর সুপারহিট হওয়ায় চলচ্চিত্র অঙ্গনে চমক সৃষ্টি হয়। ১৯৭৮ সালের ২০ জানুয়ারি মুক্তিপ্রাপ্ত সম্পূর্ণ রঙিন ছবি ‘রাজদুলারী’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে। এরপর তিনি ‘সবুজসাথী’, ‘সকাল সন্ধ্যা’ , ‘মাটির কোলে’, ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘শান্তি-অশান্তি’, ‘শশীপুন্ন, ‘জজসাহেব’, ‘দেনমোহর’ ও ‘অবুঝ মনের ভালোবাসা’সহ অনেক জনপ্রিয় ছবি উপহার দিয়েছেন। তিনি অনেক জনপ্রিয় শিল্পী ও কুশলীকে চলচ্চিত্রে প্রথম আত্মপ্রকাশের সুযোগ করে দেন। তার লেখা অত্যন্ত আলোচিত গ্রন্থ আমার দেখা ঢাকার পঁচাত্তর বছর (১৯৪৭-২০২২)। ১৯৪৩ সালের ৪ জুলাই মুন্সিগঞ্জ জেলার (সাবেক বিক্রমপুর পরগনা) শ্রীনগর থানার মত্তগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শফি বিক্রমপুরী। ১৯৪৮ সাল থেকে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন তিনি। ১৯৭২ সালে খ্যাতিমান পরিচালক সুভাষ দত্ত পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সিনেমা ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’ ছাড়াও শহিদুল হক খান পরিচালিত ‘কলমিলতা’ সিনেমাটি যৌথভাবে প্রযোজনা ও পরিবেশনা করেন। ১৯৮৯ সালে ঢাকার মালিবাগে ‘পদ্মা ’ এবং ‘সুরমা’ নামে দুটি সিনেমা হল নির্মাণ করে প্রদর্শক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের সিনেমা হল মালিক সমিতির সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া একজন সমাজসেবক হিসেবে তিনি বিক্রমপুরে প্রতিষ্ঠা করেছেন অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন তিনি। ২০২৩ সালের ১৮ অক্টোবর মারা যান এই বরেণ্য চলচ্চিত্রকার।