বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম আইয়ুব বাচ্চু। ‘এলআরবি’ ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা, রক মিউজিকের অগ্রপথিক এবং গিটার হাতে এক জাদুকরের নাম তিনি। আজ ১৬ আগস্ট এই কিংবদন্তির জন্মদিন। এই দিনে অদ্ভুত মিলও আছে। অন্য এক রক কিংবদন্তি এলভিস প্রিসলির মৃত্যুর দিনও ১৬ আগস্ট! যেন একই দিনে একজনের জন্ম আরেকজনের বিদায়। আজ যখন কেউ গিটার হাতে নেয়, ‘চলো বদলে যাই’ গায়, তখন কোথাও না কোথাও জেগে ওঠেন তিনি। হয়তো প্রবর্তক মোড়ের ‘রুপালি গিটার’-এর ভিতর দিয়েই তিনি আজও বলে যান ‘এই গান আমার নয়, এই গান আমাদের সকলের।’
তিনি নেই, তবু আছেন চিরকাল। গিটার বাজবে, গান বাজবে, আর আইয়ুব বাচ্চু বেঁচে থাকবেন প্রতিটি হৃদয়ে।
চট্টগ্রামের এক সাধারণ গ্রাম্য বাসায় জন্ম হলেও, ১৯৭৮ সাল থেকে শুরু করেন গান। ‘ফিলিংস’-এ হাতেখড়ি, পরে ‘সোলস’-এ ১০ বছর লিড গিটারিস্টের ভূমিকায়। তবে এক যুগান্তকারী মোড় আসে ১৯৯১ সালে, এলআরবি গঠন করেই। প্রথম ডাবল অ্যালবামই বাংলাদেশের ব্যান্ড-সংগীতে এক বিপ্লব, এক নতুন সূচনা। ‘চলো বদলে যাই’, ‘সুখ’, ‘রুপালি গিটার’, ‘বাংলাদেশ’, ‘শেষ চিঠি’, ‘ঘুম ভাঙা শহরে’-এগুলো শুধুই গান নয়; এগুলো যেন প্রজন্মের কণ্ঠস্বর, আশা ও বেদনার প্রতিফলন।
গিটার : তার প্রেম এবং আত্মার সুর
আইয়ুব বাচ্চুর প্রতিটি সুরের মাঝেই ছিল গিটারফর্ম। গিটার ছিল তার আত্মার সঙ্গী। তিনি নিজেই বলেছিলেন, ‘এই গিটার আমার জীবন, আমার অস্ত্র। গিটার-কোলাকুলি নয়, এটি প্রেমের ভাষা, আবেগের প্রতিনিধিত্ব।’ তার সংগ্রহে ছিল দুনিয়ার বিখ্যাত সব ব্র্যান্ডের প্রায় ৬৫টিরও বেশি গিটার। তার মধ্যে Fender Stratocaster, Gibson Les Paul, Ibanez, Jackson, ESP প্রভৃতি সেরা ব্র্যান্ড ছিল বিদ্যমান। বিশেষ করে ফ্যান্সির মধ্যে তার সবচেয়ে প্রিয় Fender Stratocaster-Gi ‘Black Beauty’ যেটিকে বলা হতো কালো রঙের হৃদয়। সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন Fender Stratocaster গিটারটি, যার সঙ্গে তাকে স্টেজে প্রায়ই দেখা যেত। গুজব আছে, এই গিটারটির নাম তিনি রেখেছিলেন ‘ব্ল্যাক বিউটি’। আরেকটি প্রিয় গিটার ছিল সোনালি রঙের Gibson Les Paul, যার ঝকঝকে সাউন্ডে তিনি গেয়েছিলেন ‘চলো বদলে যাই’, ‘রুপালি গিটার’, ‘শেষ চিঠি’-এর মতো অমর সব গান। বাংলাদেশে খুব কম সংগীতশিল্পীরই এত বড় গিটার কালেকশন ছিল যেগুলোর প্রত্যেকটি ছিল ভিন্ন ভিন্ন মুড ও সাউন্ডের জন্য ব্যবহৃত। ২০১৭ সালে গিটারগুলো বিক্রির অঙ্গীকার ছিল, কারণ তার ৬৫টি গিটার রক্ষণাবেক্ষণ বেশ ব্যয়সাধ্য হয়ে পড়েছিল। তার সেই ভাবনা ছিল, নতুন প্রজন্মের মাঝে গিটার বিতরণ করে ‘গিটার প্রতিযোগিতার উদাহরণ তৈরির’।