ফেসবুকে পাওয়া গেল স্বপ্নের তারকাকে। পত্রিকায় নিউজ হলো ওই তারকার নামে কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই। তার নামে ফেক মানে ভুয়া আইডি খোলা হয়েছে। ভক্তের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ। ওই তারকারও ঘুম হারাম। তার নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে তাকে না জানি কোন বিপদে ফেলে এ অপরাধ চক্র। দীর্ঘদিন ধরে শোবিজ জগতের তারকারা এভাবে প্রতারিত হয়ে আসছেন। সঙ্গে আরও কত বিড়ম্বনা। সম্প্রতি নতুন করে আবারও এমন বিড়ম্বনায় পড়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী ববিতা। বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করা অভিনেত্রী ববিতা চলতি মাসের শুরুতে জানালেন আজ পর্যন্ত তিনি কোনো ফেসবুক আইডি খোলেননি। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে কানাডায় বসবাস করা তাঁর একমাত্র পুত্র অনিকেরও কোনো ফেসবুক আইডি নেই। তারপরও সম্প্রতি চরম উদ্বেগে তিনি লক্ষ করছেন তাদের দুজনের নামে একাধিক ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে দুর্বৃত্তরা নানা ছবি আর স্ট্যাটাস পোস্ট করে চলেছেন। এতে তিনি চরম আতঙ্কিত। কারণ দুর্বৃত্তরা যদি এসব অ্যাকাউন্টে দেশ ও ধর্মবিরোধী কিংবা আপত্তিকর কোনো স্ট্যাটাস পোস্ট করে তাহলে মা ও ছেলের ভাবমূর্তি চরমভাবে নষ্ট হবে। তিনি জানান, দেশে ফিরে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান।
এদিকে তাঁর বোন অভিনেত্রী চম্পাও জানান, তাঁর কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই। অথচ তাঁর নামে কে বা কারা একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলে রীতিমতো চালিয়ে যাচ্ছেন এবং কিছুদিন আগে একটি অ্যাকাউন্টে দেশবিরোধী স্ট্যাটাসও দিয়েছে। এতে তিনি নিজের নিরাপত্তার জন্য বেশ কিছুদিন আগে গুলশান থানায় একটি জিডিও করেছেন। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবনূর জানান, নিজের ইউটিউব চ্যানেলটি হ্যাক করেছিল দুষ্কৃতকারীরা। তা ছাড়া তার নামে রয়েছে একাধিক অ্যাকাউন্ট। এসব অ্যাকাউন্ট খুলে চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইল থেকে শুরু করে সব ধরনের অপকর্ম চালাচ্ছে অপকর্মকারীরা। এতে চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন তিনি। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা কামনা করেছেন তিনি। সম্প্রতি তিনি তার একটি ফেসবুক আইডি ভেরিফায়েড করিয়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিও তাঁর ফেসবুক আইডি ভেরিফায়েড করে নিয়েছেন। শোবিজ তারকাদের নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলার ঘটনা ঘটছে অহরহ। তাদের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে পেজে লাইক বাড়ানোসহ নানা রকম অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এ কাজটি করা হয়ে থাকে। এ দুষ্টু চক্রের নজরে পড়া তারকাদের তালিকা দীর্ঘ। ববিতা, চম্পা, শাবানা, আলমগীর, শাবনূর, মৌসুমী, শাকিব খান, অপু বিশ্বাস, বুবলী, জাহিদ হাসান, মোশাররফ করিম, রিয়াজ, বিপাশা হায়াত, শমী কায়সার, পূর্ণিমা, চঞ্চল চৌধুরী, জয়া আহসান, শাকিলা জাফর, আসিফ আকবর, জেমস, মনির খান, ফেরদৌস, মিশা সওদাগর, হাবিব ওয়াহিদ, কাজী মারুফ, মোনালিসা, তিন্নি, সালমা, ন্যান্সি, কনা, পড়শী, সজল, অপূর্ব, মেহজাবীন, পরীমণি, মাহি, আরেফিন রুমি, সাইমন, বাপ্পী চৌধুরী, আরিফিন শুভ, তানজিন তিশা, সিয়াম আহমেদসহ জনপ্রিয় অসংখ্য তারকার নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি দেখা গেছে। ২০২০ সালে অভিনেতা আলমগীরের নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। ওই ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ধর্মসংক্রান্ত স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলে আলোচনা-সমালোচনা। এ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন এ খ্যাতিমান অভিনেতা। আলমগীর তখন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি বিব্রত। আমার একটি মাত্র ফেসবুক আইডি। এম এ আলমগীর নামের এ আইডিটি আমি ব্যবহার করি। এ আইডি থেকে ধর্ম নিয়ে কোনো পোস্ট দিইনি। ২০২০ সালে অভিনেত্রী মৌসুমীর নামে ফেক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারক চক্র ভক্তদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর স্বামী অভিনেতা ওমর সানী। সানী বলেন, ‘মৌসুমীর নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ খোলাসহ একটা আইডি হ্যাক করে নিয়ে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতারকরা। মৌসুমীর নামে কোনো ফেসবুক আইডি বা পেজ নেই। দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকা প্রবাসী জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবানার নামেও একটি ফেসবুক পেজ বেশ কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তাঁর কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই। ফেক ফেসবুক অ্যাকাউন্টের কথা জেনে এ কিংবদন্তি অভিনেত্রী খুবই উদ্বিগ্ন। চিত্রনায়িকা রোজিনার নামেও কয়েকটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। তিনি বলেন, ‘আমার মাত্র একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তাতে যারা আমার বন্ধু তাদের প্রত্যেককেই আমি চিনি। এর বাইরে কারও সঙ্গে আমার চ্যাট বা কথা হয় না। অথচ কে বা কারা আমার নামে অ্যাকাউন্ট খুলে নানা ফায়দা নেওয়ারও চেষ্টা করছেন।’ মাহিয়া মাহি, শখ, বিদ্যা সিনহা মিম, পড়শী, আঁখি আলমগীর, শাকিব খান, আসিফ আকবর, বাপ্পী চৌধুরী, মৌ, সুজানা জাফর, সজল, তানজিকাসহ প্রায় ৩০ জন আলোচিত তারকার প্রত্যেকের নামে ২০-২৫টি করে ফেক আইডি রয়েছে। প্রতিটি আইডিতেই লেটেস্ট ছবিগুলো আপলোড করা হচ্ছে। অধিকাংশ আইডিতে ফেসবুক ফ্রেন্ডের সংখ্যা ৪ থেকে ৫ হাজারের মধ্যে রয়েছে। মাহি জানান, তাঁর নামে অসংখ্য ভুয়া আইডি রয়েছে। এসব আইডি থেকে তাঁকে নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। অভিনেত্রী পপি ফেসবুকে ভুয়া পেজ নিয়ে বেশ বিব্রত। পপি জানান, ‘আসলে কিছুদিন পরপরই দেখা যায় এমন ফেক আইডি খুলে আমার পরিচিত মানুষদের রিকোয়েস্ট পাঠায়। পাশাপাশি নানা ধরনের খারাপ এসএমএস দেয়। যেগুলোর জন্য পরে আমার সম্মানহানি হয়।’ এদিকে ভুয়া আইডির পাশাপাশি আইডি হ্যাকও হচ্ছে জনপ্রিয় তারকাদের। ২০২০ সালে অভিনেতা অপূর্ব, অভিনেত্রী টয়া ও গায়ক ইমরানের ফেসবুক আইডি হ্যাকড হয়। বেশ কয় বছর আগে অভিনেতা, নির্মাতা গাজী রাকায়েতের ফেসবুক আইডি থেকে ইনবক্সের কয়েকটি আপত্তিকর স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছিল। স্ক্রিনশটগুলোতে দেখা যায়- একটি মেয়েকে গাজী রাকায়েত আপত্তিকর কাজের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, কেউ তাঁর আইডি হ্যাক করেছে। মূলত ভিপিএন অ্যাড্রেস ব্যবহার করে ইমেইল ও ফেসবুক প্রোফাইল হ্যাক করা হয়। কয়েক বছর আগে অভিনেত্রী শ্রাবন্তীর ফেসবুক আইডিও নাকি হ্যাক হয়েছিল। সেখান থেকে সবার কাছে নানাভাবে টাকা চাওয়া হয়। আলোচিত হয়েছিল মিস বাংলাদেশ জেসিয়া ইসলামের ফেসবুক হ্যাকের ঘটনাও। গত কয়েক বছর আগে আফরান নিশো ও পূর্ণিমা মজা করে তাদের ৫০টির ওপর আইডির স্ক্রিনশট ফেসবুকে নিজেদের রিয়েল আইডিতে দিয়েছিলেন। এসব ভুয়া আইডি ও পেজ থেকে ছড়ানো হয় নানারকম বিভ্রান্তি, গুজব। অনেকে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন কৌশলে। সেই প্রতারণার দায় নিতে হয় সত্যিকারের তারকাকে। খুদে গানরাজ সাবরিনা পড়শীর নামেও খোলা হয়েছিল হাজারখানেক ভুয়া আইডি ও পেজ। তিনি বলেন, ‘ভুয়া আইডি থেকে অনেক সময় আমার নামে কনসার্টের ঘোষণা দেওয়া হয়। অথচ সেই কনসার্টের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’ ভুয়া ফেসবুক আইডি নিয়ে বিব্রত মডেল ও অভিনেত্রী সারিকা সাবরিন। তাঁর নামে প্রায় অর্ধশতাধিক ফেক আইডি ঘুরে বেড়াচ্ছে ফেসবুকে। সারিকা নামে একটি ফেক আইডি নিয়ে চরম বিব্রত অবস্থায় পড়েছিলেন এ অভিনেত্রী। এ আইডির ফলোয়ারের সংখ্যা ছিল তখন ১ লাখ ১৮ হাজারের মতো। নিয়মিত সচলও আইডিটি। এর আগে তাঁর আইডি হ্যাক করা হয়েছে। এরপর থেকে তিনি আর ফেসবুক ব্যবহার করেন না। পুলিশের সাইবার ক্রাইম সূত্র বলছে, তারকাদের আইডির নিরাপত্তা দুর্বলতার কারণেই অতি সহজেই হ্যাক করতে পারছে হ্যাকাররা। আইডি হ্যাকের পর পাসওয়ার্ড পাল্টে ফেলছে হ্যাকাররা। সেখান থেকে আপত্তিকর ছবি আপলোড বা বিভ্রান্তিমূলক স্ট্যাটাসের কারণে তারকাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশীর ফেসবুক আইডি ও পেজ দুটিই হ্যাক করা হয়েছিল। হ্যাকাররা তাঁর কাছে আইডি ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে টাকা দাবি করেছিল। বিষয়টিতে বিব্রত ঐশী বলেছিলেন, ‘খুবই অস্বস্তিতে আছি। আইডি হ্যাক করে টাকাও দাবি করা হয়েছে। টাকাটা বড় বিষয় নয়, সমস্যা হচ্ছে ফেসবুক না থাকার কারণে আমার ভক্ত, দর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রাইভেসিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’ কয়েক বছর আগে দুবার ফেসবুক আইডি ও পেজ হ্যাক হয়েছিল অভিনেত্রী মেহজাবীনের। পরে ফিরেও পেয়েছেন। হ্যাক হওয়ার বিষয়টি তাঁর কাছে ভয়েরও কারণ। তিনি বলেন, ‘আমার আইডি ভেরিফায়েড। এটি যখন হ্যাক করে তখন ভয়ও পেয়েছিলাম। কারণ হ্যাকাররা কোনো খারাপ ছবি কিংবা বিভ্রান্তিকর স্ট্যাটাস দিয়ে আমাকে বিপদেও ফেলতে পারত। ভেরিফায়েড আইডি থেকে এসব বিষয় ফেসবুক অনুসারীরা বিশ্বাস করতেই পারেন।’ পূর্ণিমার ফেসবুক আইডি দুবার হ্যাক হয়। তা ফেরতও পেয়েছেন। হ্যাক হওয়াটাকে একজন তারকার জন্য বিপজ্জনক মনে করেন পূর্ণিমা। তিনি বলেন, ‘হ্যাক করে হ্যাকার পাসওয়ার্ড নিজের মতো করে নেয়। এরপর ইচ্ছা করলেই হ্যাকার ওই তারকার ফেসবুক আইডিতে আজেবাজে বা বিভ্রান্তিমূলক স্ট্যাটাস দিয়ে তারকাকে বিপদে ফেলতে পারেন। এখন তো একজন তারকার কাছে ফেসবুকই যোগাযোগের বড় মাধ্যম। দেশবাসীকে নিজের কথা জানানো, ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ, সব ফেসবুকের মাধ্যমেই হয়ে থাকে।’ আরিফিন শুভ, সিয়াম আহমেদ, আফরান নিশো ও তানজিন তিশা, রোশান, সজল, অর্ষা, সংগীতশিল্পী হাবিব, মিনারসহ অনেক তারকার বহুবার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়। ভুক্তভোগীরা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ ও আইটি বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে আইডি ও পেজ ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করে থাকেন। একটি বিশেষ সূত্র বলছে, দেশ ও দেশের বাইরে কয়েকটি বিশেষ দল তারকাদের আইডি হ্যাকের সঙ্গে জড়িত। তার মধ্যে আছে ওল্ডম্যাএক্সট্রাম, মাফিয়া গ্রুপ, মাইয়ারালা গ্রুপ, ইম্পিরিয়াল ট্রাইব, আমরা সিলেটবাসী, ডনস টিম ইত্যাদি।