রেকর্ড খেলাপিতে ব্যাংক খাতের অবস্থা এখন বেশ নাজুক। হাসিনা সরকারের পতনের পর ঋণখেলাপির আসল চিত্র এখন বের হয়ে আসছে। এতে স্পষ্ট হয়ে উঠছে ব্যাংক খাতের প্রকৃত চেহারা। সর্বশেষ তথ্যে খেলাপি ঋণের অঙ্ক ছাড়িয়েছে ছয় লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা বা মোট ঋণের ৩৩ শতাংশ।
বছরের পর বছর রাজনৈতিক প্রভাবশালী গোষ্ঠী ব্যাংক থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা ঋণ তুললেও সেগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি দেখানো হয়নি। এটিই এখন বের হচ্ছে। ২০২৫ সালের জুন শেষে মোট ব্যাংকঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৪৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। মাত্র তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা।
এক বছরের ব্যবধানে এই ঋণের পরিমাণ বেড়েছে চার লাখ ৫৫ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুনে খেলাপি ঋণের অঙ্ক ছিল দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। মাত্র এক বছরের মধ্যে খেলাপির পরিমাণ তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যাকে সত্যিই উদ্বেগজনক বলছেন বিশ্লেষকরা। ঋণখেলাপিতে যখন ব্যাংক খাতের অবস্থা নাজুক হয়ে ওঠে, তখনই পাঁচটি দুর্বল ব্যাংককে মার্জার বা একীভূত করার কাজ প্রায় চূড়ান্ত করে এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঋণখেলাপি চক্রের এমন লাগামহীন কর্মকাণ্ডে ব্যাংকগুলো বিপর্যয়ে পড়ায় তারল্য সংকট বাড়ছে এবং নতুন ঋণ বিতরণ কঠিন হয়ে পড়ছে। ব্যবসায়ীরাও উচ্চ সুদের চাপে পড়ছেন, অথচ ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা পার পাচ্ছে। এতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমছে, আমানতকারীরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, খেলাপি ঋণ হঠাৎ এত বেড়ে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি বড় কারণ চিহ্নিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। প্রথমত, শেখ হাসিনার সময়ে বহু নামে-বেনামে ঋণ দেওয়া হয়েছিল, যা গোপন রাখা হয়েছিল। এখন সেগুলো বেরিয়ে আসছে। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণের জন্য খেলাপি ঘোষণার সময়সীমা আগের ছয় মাস থেকে কমিয়ে তিন মাসে নামানো হয়েছে। এর ফলে খেলাপির অঙ্ক দ্রুত বেড়েছে। তৃতীয়ত, কৃষি ও এসএমই ঋণে যে বিশেষ সুবিধা দিয়ে খেলাপি ঘোষণায় ছাড় দেওয়া হতো, সেটি বাতিল করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত ১৬ বছরে রাজনৈতিক প্রভাবে অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিলেও তার যথাযথ ব্যবহার হয়নি। অনেকে সেই টাকা বিদেশে পাচার করেছেন এবং বর্তমানে পলাতক। অন্যদিকে যাঁরা আওয়ামী লীগের আমলে রাজনৈতিক চাপে ব্যবসা করতে পারেননি, তাঁরাও এখনো খেলাপির খাতা থেকে মুক্ত হতে পারেননি। এ অবস্থাকে বিশেষজ্ঞরা একটি ‘ট্রানজিশন পিরিয়ড’ হিসেবে দেখছেন। তাঁদের আশা, আগামী কয়েক প্রান্তিকের মধ্যে ব্যাবসায়িক কর্মকাণ্ড সচল হলে খেলাপি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধীরে ধীরে কমে আসবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক দেশের জিডিপির উল্লেখযোগ্য অংশের সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ব্যাংক খাত খেলাপি ঋণের দিক থেকে এখন অস্থির ও অনিশ্চিত সময় পার করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকে মোট বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপির হার ছিল ৪৫ শতাংশ, যা গত ডিসেম্বরে ছিল ৪২.৮৩ শতাংশ। অন্যদিকে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের হার ২০ শতাংশে উঠেছে, যা ডিসেম্বরে ছিল ১৫.৬০ শতাংশ।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এর পর থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। অর্থনীতিবিদরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছিলেন যে তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নানা অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বের করে নিয়েছেন, যার একটা বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্টের পরে অনেক চালু ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সেই ঋণগুলো খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। তা ছাড়া আগে কিছু কিছু গ্রাহক আদালত থেকে বিশেষ সুবিধায় খেলাপি ঋণকেও নিয়মিত দেখাত, এখন সেই সুযোগ বন্ধ হয়েছে। একই সঙ্গে আইএমএফের ঋণের শর্তের কারণে দেশের খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে ঋণগুলো আদায়ের কোনো বিকল্প নেই। যেকোনোভাবে আদায়প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে এবং ঋণগুলো আদায় করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের নীতি সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জুনের পর থেকে ওই নীতি সহায়তা কার্যকর হবে। আশা করি, এর পর থেকে খেলাপি ঋণ কমে আসবে।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণা পরিচালক ড. শাহ মো. আহসান হাবিব বলেন, ‘ঋণখেলাপি বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের সবচেয়ে জটিল সমস্যা। কিন্তু এত দিন এটা ঢেকে রাখতাম। যেকোনো সমস্যা সামাধানের জন্য সবার আগে সমস্যাটা বুঝতে হয়, কিন্তু এত দিন বুঝতে দেওয়া হয়নি। তবে খেলাপি প্রকাশ করা আমাদের দায়িত্ব। আমি মনে করি, এই সরকারের সফলতার জায়গা হলো সমস্যা বের করার চেষ্ট করছে। তাই কার্পেটের নিচের অনেক খেলাপি এখন বের হয়ে আসছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার বদলের পর আগের আমলের অনেক রাজনৈতিক নেতাকর্মী পালিয়ে গেছেন। লুকিয়ে রাখা খেলাপি এবং পালিয়ে যাওয়া গ্রাহকদের অপরিশোধিত ঋণগুলো মিলে ফিগারটা বড় হয়ে গেছে। এখন এগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করে কাউকে হেল্প এবং কাউকে আইনের আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশে ঋণখেলাপিদের আইনের আওতায় আনার কোনো উদাহরণ নেই। তাই অনেকে মনে করে, ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে ফেরত দিতে হয় না। কিন্তু তাদের আইনের আওতায় আনার কোনো বিকল্প নেই। নেপালে রাস্তাঘাটে, টেলিভিশনে খেলাপি গ্রাহকদের নাম প্রকাশ করে সামাজিকভাবে হেনস্তা করা হয়। আমাদেরও একই কাজ করতে হবে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বড় অঙ্কের টাকা ঋণ দিতে নানা সুবিধা দেওয়া হয়। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কাগজে-কলমে কম দেখাতে নেওয়া হয় একের পর এক সুযোগসন্ধানী নীতিমালা। সরকার পরিবর্তনের পর সেই নীতি থেকে সরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি খেলাপি ঋণে জর্জরিত ইসলামী ধারার পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সূত্রগুলো বলছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ও বহুল সমালোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়া ব্যাংকগুলোর ঋণের প্রকৃত চিত্র বের হতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেশি বেড়েছে। একইভাবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেশ বেড়ে
রেকর্ড খেলাপিতে নাজুক ব্যাংক
রেকর্ড খেলাপিতে ব্যাংক খাতের অবস্থা এখন বেশ নাজুক। হাসিনা সরকারের পতনের পর ঋণখেলাপির আসল চিত্র এখন বের হয়ে আসছে। এতে স্পষ্ট হয়ে উঠছে ব্যাংক খাতের প্রকৃত চেহারা। সর্বশেষ তথ্যে খেলাপি ঋণের অঙ্ক ছাড়িয়েছে ছয় লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা বা মোট ঋণের ৩৩ শতাংশ।
বছরের পর বছর রাজনৈতিক প্রভাবশালী গোষ্ঠী ব্যাংক থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা ঋণ তুললেও সেগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি দেখানো হয়নি। এটিই এখন বের হচ্ছে। ২০২৫ সালের জুন শেষে মোট ব্যাংকঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৪৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। মাত্র তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা।
এক বছরের ব্যবধানে এই ঋণের পরিমাণ বেড়েছে চার লাখ ৫৫ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুনে খেলাপি ঋণের অঙ্ক ছিল দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। মাত্র এক বছরের মধ্যে খেলাপির পরিমাণ তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যাকে সত্যিই উদ্বেগজনক বলছেন বিশ্লেষকরা। ঋণখেলাপিতে যখন ব্যাংক খাতের অবস্থা নাজুক হয়ে ওঠে, তখনই পাঁচটি দুর্বল ব্যাংককে মার্জার বা একীভূত করার কাজ প্রায় চূড়ান্ত করে এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঋণখেলাপি চক্রের এমন লাগামহীন কর্মকাণ্ডে ব্যাংকগুলো বিপর্যয়ে পড়ায় তারল্য সংকট বাড়ছে এবং নতুন ঋণ বিতরণ কঠিন হয়ে পড়ছে। ব্যবসায়ীরাও উচ্চ সুদের চাপে পড়ছেন, অথচ ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা পার পাচ্ছে। এতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমছে, আমানতকারীরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, খেলাপি ঋণ হঠাৎ এত বেড়ে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি বড় কারণ চিহ্নিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। প্রথমত, শেখ হাসিনার সময়ে বহু নামে-বেনামে ঋণ দেওয়া হয়েছিল, যা গোপন রাখা হয়েছিল। এখন সেগুলো বেরিয়ে আসছে। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণের জন্য খেলাপি ঘোষণার সময়সীমা আগের ছয় মাস থেকে কমিয়ে তিন মাসে নামানো হয়েছে। এর ফলে খেলাপির অঙ্ক দ্রুত বেড়েছে। তৃতীয়ত, কৃষি ও এসএমই ঋণে যে বিশেষ সুবিধা দিয়ে খেলাপি ঘোষণায় ছাড় দেওয়া হতো, সেটি বাতিল করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত ১৬ বছরে রাজনৈতিক প্রভাবে অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিলেও তার যথাযথ ব্যবহার হয়নি। অনেকে সেই টাকা বিদেশে পাচার করেছেন এবং বর্তমানে পলাতক। অন্যদিকে যাঁরা আওয়ামী লীগের আমলে রাজনৈতিক চাপে ব্যবসা করতে পারেননি, তাঁরাও এখনো খেলাপির খাতা থেকে মুক্ত হতে পারেননি। এ অবস্থাকে বিশেষজ্ঞরা একটি ‘ট্রানজিশন পিরিয়ড’ হিসেবে দেখছেন। তাঁদের আশা, আগামী কয়েক প্রান্তিকের মধ্যে ব্যাবসায়িক কর্মকাণ্ড সচল হলে খেলাপি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধীরে ধীরে কমে আসবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক দেশের জিডিপির উল্লেখযোগ্য অংশের সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ব্যাংক খাত খেলাপি ঋণের দিক থেকে এখন অস্থির ও অনিশ্চিত সময় পার করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকে মোট বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপির হার ছিল ৪৫ শতাংশ, যা গত ডিসেম্বরে ছিল ৪২.৮৩ শতাংশ। অন্যদিকে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের হার ২০ শতাংশে উঠেছে, যা ডিসেম্বরে ছিল ১৫.৬০ শতাংশ।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এর পর থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। অর্থনীতিবিদরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছিলেন যে তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নানা অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বের করে নিয়েছেন, যার একটা বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্টের পরে অনেক চালু ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সেই ঋণগুলো খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। তা ছাড়া আগে কিছু কিছু গ্রাহক আদালত থেকে বিশেষ সুবিধায় খেলাপি ঋণকেও নিয়মিত দেখাত, এখন সেই সুযোগ বন্ধ হয়েছে। একই সঙ্গে আইএমএফের ঋণের শর্তের কারণে দেশের খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে ঋণগুলো আদায়ের কোনো বিকল্প নেই। যেকোনোভাবে আদায়প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে এবং ঋণগুলো আদায় করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের নীতি সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জুনের পর থেকে ওই নীতি সহায়তা কার্যকর হবে। আশা করি, এর পর থেকে খেলাপি ঋণ কমে আসবে।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণা পরিচালক ড. শাহ মো. আহসান হাবিব বলেন, ‘ঋণখেলাপি বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের সবচেয়ে জটিল সমস্যা। কিন্তু এত দিন এটা ঢেকে রাখতাম। যেকোনো সমস্যা সামাধানের জন্য সবার আগে সমস্যাটা বুঝতে হয়, কিন্তু এত দিন বুঝতে দেওয়া হয়নি। তবে খেলাপি প্রকাশ করা আমাদের দায়িত্ব। আমি মনে করি, এই সরকারের সফলতার জায়গা হলো সমস্যা বের করার চেষ্ট করছে। তাই কার্পেটের নিচের অনেক খেলাপি এখন বের হয়ে আসছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার বদলের পর আগের আমলের অনেক রাজনৈতিক নেতাকর্মী পালিয়ে গেছেন। লুকিয়ে রাখা খেলাপি এবং পালিয়ে যাওয়া গ্রাহকদের অপরিশোধিত ঋণগুলো মিলে ফিগারটা বড় হয়ে গেছে। এখন এগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করে কাউকে হেল্প এবং কাউকে আইনের আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশে ঋণখেলাপিদের আইনের আওতায় আনার কোনো উদাহরণ নেই। তাই অনেকে মনে করে, ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে ফেরত দিতে হয় না। কিন্তু তাদের আইনের আওতায় আনার কোনো বিকল্প নেই। নেপালে রাস্তাঘাটে, টেলিভিশনে খেলাপি গ্রাহকদের নাম প্রকাশ করে সামাজিকভাবে হেনস্তা করা হয়। আমাদেরও একই কাজ করতে হবে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বড় অঙ্কের টাকা ঋণ দিতে নানা সুবিধা দেওয়া হয়। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কাগজে-কলমে কম দেখাতে নেওয়া হয় একের পর এক সুযোগসন্ধানী নীতিমালা। সরকার পরিবর্তনের পর সেই নীতি থেকে সরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি খেলাপি ঋণে জর্জরিত ইসলামী ধারার পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সূত্রগুলো বলছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ও বহুল সমালোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়া ব্যাংকগুলোর ঋণের প্রকৃত চিত্র বের হতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেশি বেড়েছে। একইভাবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেশ বেড়েছে। বিগত সরকারের আমলে কিছু বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। এতেও বেড়েছে খেলাপি ঋণ।
জানা যায়, খেলাপি ঋণের এমন ভয়াবহতার কারণে অনেক ব্যাংকে তারল্য সংকট চলছে। তারা যে নতুন করে বেসরকারি খাতে ঋণ দেবে সেই পরিস্থিতিও নেই। এতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের বেসরকারি খাত ও ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা চাহিদা অনুযায়ী ঋণ পাচ্ছেন না। এর ফলে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান ব্যাহত হচ্ছে। সরকারও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মোটাদাগে এর সুফল পাচ্ছে না অর্থনীতি; বরং এর প্রভাবে অর্থনীতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।
তথ্য সূত্র- কালের কণ্ঠ।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ
ছে। বিগত সরকারের আমলে কিছু বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। এতেও বেড়েছে খেলাপি ঋণ।
জানা যায়, খেলাপি ঋণের এমন ভয়াবহতার কারণে অনেক ব্যাংকে তারল্য সংকট চলছে। তারা যে নতুন করে বেসরকারি খাতে ঋণ দেবে সেই পরিস্থিতিও নেই। এতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের বেসরকারি খাত ও ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা চাহিদা অনুযায়ী ঋণ পাচ্ছেন না। এর ফলে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান ব্যাহত হচ্ছে। সরকারও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মোটাদাগে এর সুফল পাচ্ছে না অর্থনীতি; বরং এর প্রভাবে অর্থনীতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।
তথ্য সূত্র- কালের কণ্ঠ।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ