দেশি নায়িকার হাত ধরে ঢাকাই ছবিতে অভিষেক এবং সাফল্য লাভ যে নায়কের সেই শাকিব খান এখন বিদেশি নায়িকা ছাড়া নাকি অভিনয়ই করতে চান না। শাকিব-অপু ও শাকিব-বুবলী জুটির অধ্যায় সমাপ্তির পর কয়েক বছর ধরে শাকিব বলতে গেলে প্রায় সব ছবিতেই বিদেশি নায়িকার সঙ্গে অভিনয় করেছেন এবং বিদেশি নায়িকার সঙ্গে অভিনয়ের জন্য রীতিমতো নাকি শর্ত জুড়ে দেন নির্মাতাদের। তার আগামী ছবি ‘ওয়ানস আপন এ টাইম ইন ঢাকা’তেও নাকি তিনি চাইছেন তার বিপরীতে অভিনয় করুক কলকাতার ছোটপর্দার নায়িকা মধুমিতা সরকার। বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গেছে, কলকাতার আরেকটি ছবি যেটি নাকি যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে সেই ছবিতে শাকিব আবার কলকাতার নায়িকা ইধিকাকেই চাইছেন। সূত্র জানায়, এ ছবিটি নির্মাণ হবে কলকাতার গুপ্ত ফিল্মসের ব্যানারে এবং নির্মাণ করবেন ওপার বাংলার নির্মাতা অভিজিত ওরফে রানা। এতে শাকিব অভিনয় করবেন দুই ভাইয়ের চরিত্রে- মানে দ্বৈত চরিত্রে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি ছবিতে শাকিবের অভিনয়ের কথা চলছে। এসব ছবিতেও শাকিবের চাহিদা বিদেশি নায়িকা বলে জানা গেছে। ১৯৯৯ সালে প্রথম মুক্তি পায় শাকিব অভিনীত সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘অনন্ত ভালোবাসা’ ছবিটি। এতে তার নায়িকা ছিলেন অভিনেত্রী মৌসুমীর বোন ইরিন জামান। এর আগে অবশ্য একই বছর তিনি প্রথম চলচ্চিত্রের ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান আফতাব খান টুলু পরিচালিত ‘সবাই তো সুখী হতে চায়’ ছবির জন্য। এ ছবির নায়িকাও ছিলেন নতুন মুখ কারিশমা শেখ। এরপর বিতর্কিত নায়িকা হিসেবে আখ্যা পাওয়া মুনমুন, ময়ূরী, পলিসহ অনেকের সঙ্গেই স্বেচ্ছায় কাজ করেছেন শাকিব। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। শাবনূর, পপি, মৌসুমী, পূর্ণিমা- মানে তখনকার শীর্ষ নায়িকাদের সঙ্গেও কাজ করে চলচ্চিত্র জগতে নায়ক হিসেবে নিজের ভিত মজবুত করেন। কাজ করেছেন অভিনেত্রী জয়া আহসান, তিশা, ববি, বিদ্যা সিনহা মিমের সঙ্গেও। এরপর অভিনয় করেছেন পূজা চেরীর সঙ্গে। ২০০৬ সালে এফ আই মানিকের ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবিতে জুটি বাঁধেন নতুন নায়িকা অপু বিশ্বাসের সঙ্গে। ছবিটি বড়মাপের ব্যবসায়িক সফলতা পাওয়ার পর শাকিব একাধারে অপুর সঙ্গে বেশির ভাগ ছবিতে জুটি বেঁধে হয়ে যান ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক। শোনা যায়, তারা নাকি একসঙ্গে ৭০টিরও বেশি ছবিতে জুটি বাঁধেন। এরপর অপুর সঙ্গে ব্যক্তিগত কারণে সম্পর্কের অবনতি ঘটলে ২০১৭ সাল থেকে তিনি অভিনয় শুরু করেন শবনম বুবলীর সঙ্গে। এ জুটিও একাধারে বেশ কিছু ছবি উপহার দিয়েছেন। এক সময় বুবলীর সঙ্গেও শাকিবের সম্পর্কের অবনতি হলে তিনি ঝুঁকে পড়েন বিদেশি নায়িকাদের প্রতি। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো ‘প্রিয়তমা’ এবং ‘রাজকুমার’ ছবি দুটি। এ দুই ছবিতে শবনম বুবলীর অভিনয়ের ঘোষণা শাকিব তার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির আগেই দিয়েছিলেন। পরে এ ছবিগুলোতে বুবলীর পরিবর্তে তিনি নেন যথাক্রমে কলকাতার টিভি সিরিয়ালের নায়িকা ইধিকা পাল ও হলিউডের এক্সট্রা শিল্পী কোর্টনি কফিকে। অবশ্য এর আগে ২০১৭ সালে অপুর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হলে তিনি অভিনয় শুরু করেন কলকাতার শ্রাবন্তী, পাওলি দাম, শুভশ্রী, পায়েল, নুসরাত, সায়ন্তিকাসহ আরও কয়েকজন টলি নায়িকার সঙ্গে। ২০০৯ সালে অবশ্য তিনি প্রথমবার কলকাতার নায়িকা স্বস্তিকার সঙ্গে অভিনয় করেন

এফ আই মানিকের ‘সবার উপরে’ ছবিতে। ২০২১ সালে অভিনয় করেন কলকাতার ‘সি’ গ্রেডের নায়িকা দর্শনা বণিকের সঙ্গে ওয়াজেদ আলী সুমনের ‘অন্তরাত্মা’ ছবিতে। গত বছর মুক্তি পাওয়া রায়হান রাফির ‘তুফান’ ছবিতে শাকিব নেচেছেন টলিউড নায়িকা মিমি চক্রবর্তীর সঙ্গে। অন্যদিকে গত বছর মুক্তি পাওয়া অনন্য মামুনের ‘দরদ’ ছবিতে তাকে দেখা যায় বলিউডের ‘সি’ গ্রেডের নায়িকা সোনাল চৌহানের সঙ্গে জুটি বাঁধতে। এ ছাড়া মেহেদী হাসানের ‘বরবাদ’ ছবিতে তিনি আইটেম গান করেছেন কলকাতার নায়িকা নুসরাতের সঙ্গে। এ ছবির নায়িকাও কলকাতার সেই টিভি সিরিয়ালের নায়িকা ইধিকা পাল। যার সঙ্গে এর আগে শাকিব জুটি বেঁধেছিলেন ‘প্রিয়তমা’ ছবিতে। ঢালিউড, টলিউড, বলিউড ও হলিউডের নায়িকার সঙ্গে কাজ করার পর এবার তিনি নাকি কাজ করতে চান পাকিস্তানি অভিনেত্রীদের সঙ্গে। তাহলে কি বাংলাদেশি অভিনেত্রীদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন শাকিব? এমন প্রশ্নই উঁকি দিচ্ছে সমালোচকদের মনে। এ ছাড়া পাকিস্তানের সিনেমার নায়িকা ও সেই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন শাকিব গত বছরে। টলিউড, বলিউড নায়িকাদের সঙ্গে অভিনয় করার পর বাংলাদেশি অভিনেত্রী বাদ দিয়ে পাকিস্তানি অভিনেত্রীদের সঙ্গে এখন শাকিব কাজের ইচ্ছা পোষণ করায় সমালোচকরা বলছেন, ‘তাহলে কি এখন শাকিব বিদেশি নায়িকাপ্রীতিতে ভুগছেন। সমালোচকরা এ-ও বলছেন, আমাদের চলচ্চিত্র জগতে এখন নায়িকার কোনো অভাব নেই। কাজের অভাবে তারা প্রায় বেকার। এ অবস্থা দেখার পরও শাকিব কীভাবে বিদেশি নায়িকাপ্রীতিতে ভুগছেন?’ বহুদিন ধরেই অনেকেরই প্রশ্ন, দেশি নায়িকাদের কেন এড়িয়ে যাচ্ছেন শাকিব। অবশ্য এই প্রশ্নের জবাবও দিলেন তিনি। বলেন, ‘আমি নিজেই দেশি নায়িকাদের শিডিউল পাচ্ছি না। যেহেতু বছরের দুই-তিনটা সিনেমা করি তাই আমার শিডিউলও বেশি লাগে। অনেক সময় কয়েক মাস সিনেমার শুটিং চলে। কিন্তু আমাদের যারা দেশি নায়িকা আছে, তারা অনেক বেশি কাজ করে এজন্য তাদের ব্যস্ত থাকতে হয়। তাদের শিডিউল পেলেই আবার কাজ করা হবে।’ কিন্তু তার এই জবাবকে খোঁড়া যুক্তি হিসেবে দেখছেন এ দেশের চলচ্চিত্রবোদ্ধারা। তাদের কথায়, ‘আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ কমে গেছে কমপক্ষে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। এ অবস্থায় সব শিল্পীই প্রায় বেকার জীবনযাপন করছেন। তাই শাকিবের বলা দেশি নায়িকাদের শিডিউল না পাওয়ার বিষয়টি একেবারেই হাস্যকর।’