আশা করা হয়েছিল, বাংলাদেশে আর আওয়ামী স্টাইলে কাউকে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, খুন, নাশকতার শিকার হতে হবে না। কিন্তু বাস্তবতা বিপরীত। সামান্য কদিন দুর্বৃত্তরা অবস্থা বোঝার জন্য গা-ঢাকা দিয়েছিল। তার সুফলও পাওয়া গিয়েছিল সামাজিক পরিবেশ ও নিত্যপণ্যের বাজারে। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য না থাকায় বিভিন্ন পণ্যের দাম কমে সহনীয় পর্যায়ে ছিল। কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বাজারে, সড়ক-পরিবহনে, হাতবদল হওয়া চাঁদাবাজ চক্র ফের সক্রিয় হয়। তাদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে সাধারণের জীবন। অস্থির হয় বাজার। খুনখারাবি, টার্গেট কিলিং, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। শুধু রাজধানীতেই গত ১০ মাসে প্রায় ২০০ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। একের পর এক টার্গেট কিলিং হচ্ছে দিনদুপুরে, প্রকাশ্যে। তার ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে সমাজমাধ্যমে। শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ ভাবতে বাধ্য হচ্ছে যে, ‘ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত চুলোর মধ্যে পড়তে যাচ্ছে নাকি জাতি!’ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এতটা লেজেগোবরে অবস্থা হতাশাজনক। যদিও অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রায় পুরোটা সময়ই সেনাবাহিনী মাঠে রয়েছে। অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, ১৮ কোটি মানুষের দেশে তুলনামূলক স্বল্পসংখ্যক জনবল নিয়ে সব অপরাধ প্রতিহত করা সম্ভব নয়। বিশেষত রাজনৈতিক মদতপুষ্ট দুষ্টচক্র এ দেশে বরাবরই নানা অপকর্মে জড়িত। তাদের দৌরাত্ম্য এবং দম্ভ অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের পর্যন্ত চ্যালেঞ্জ করে বসে। আটক দুর্বৃত্ত ছিনিয়ে নেয়। থানা-পুলিশকে হুমকি দেয়। থমকে যায় আইনি প্রক্রিয়া। কিন্তু বর্তমান রাষ্ট্রীয় প্রেক্ষাপটে ঘুরে দাঁড়াতে হবে আইনশৃঙ্খরা রক্ষায় নিয়োজিত সব বাহিনীকে। কাউকেই ছাড় নয়। দুর্বৃত্তায়নের দিন আজ অতীত। পেশাদারি দৃঢ়তায় মাথা উঁচু করে, দর্পিত পদক্ষেপ নিক বাহিনী। অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে তা কার্যকর করা হোক। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতৃবৃন্দের। তারা তৃণমূল পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের কঠোর বার্তা দেবেন- চাঁদাবাজি, খুন-জখম-দখলের চক্রে জড়িত না হওয়ার। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বহুবার এ নির্দেশনা দিয়েছেন। অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। ছোটবড় অন্যান্য দলের নেতাদেরও এ ব্যাপারে অভিন্ন অবস্থান নিতে হবে। না হলে সদ্য সাবেক অপরাধ চক্রের যে করুণ পরিণতি ঘটছে, একই ভাগ্যলিখন অপেক্ষা করবে অন্যদের জন্যও।