দুর্গন্ধ শব্দটি শুনলেই মনের ভিতর কেমন ঘৃণার জিহ্বা উল্টে আসে। বমি বমি ভাব হয়। দুর্গন্ধ কম হোক বা বেশি কোনোটাই সহনীয় নয়। দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে আমরা কত কিছু করি। প্রতিদিন সকাল শুরু হয় ব্রাশ করে। রাতের সর্বশেষ কাজও হয় ব্রাশ করা। প্রতিদিন গোসল করতে হয়। কাপড় কাচতে হয়। এত সব করার পরও গায়ে সুগন্ধি মাখি, ঘরে রুম স্প্রে করি যেন দুর্গন্ধ না থাকে। দুর্গন্ধযুক্ত মানুষের পাশে কেউ বসতে চায় না। তার সঙ্গে কেউ কথা বলতে চায় না। একইভাবে যার আত্মা দুর্গন্ধযুক্ত মৃত্যুর পর তার সঙ্গে ফেরেশতারা কথা বলবেন না। আকাশের দুয়ার তার জন্য খোলা হবে না। দুর্গন্ধযুক্ত আত্মার অধিকারী মানুষের মৃত্যু হয় ভয়াবহ।
হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, রসুল বললেন, কাফের বান্দা যখন দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে আখেরাতের প্রতি রওনা করে, তখন তার কাছে আসমান থেকে কালো চেহারার ফেরেশতা আগমন করেন। তাদের সঙ্গে চট থাকে। দৃষ্টিজুড়ে তারা তার সামনে বসেন। অতঃপর মালাকুল মওত তার মাথার সম্মুখে এসে বসেন। অতঃপর বলেন, হে মন্দ আত্মা! বেরিয়ে আস! আল্লাহর শাস্তি ও ক্রোধের দিকে। ফলে আত্মা ভয়ে প্রতি অঙ্গে ছড়িয়ে যায়। তিনি তাকে এমনভাবে টেনে বের করেন, যেভাবে ভেজা পশম থেকে শিক বের করা হয়। ফলে তার শিরা-উপশিরা ছিঁড়ে যায়। অতঃপর ফেরেশতারা তা গ্রহণ করেন এবং মালাকুল মওতের হাতে মুহূর্তমাত্র রেখে পুনরায় তা গ্রহণ করে সে চটে রেখে দেন। তা থেকে লাশের দুর্গন্ধ আসতে থাকে। তারা তাকে নিয়ে ওপরে আরোহণ করেন। যখন তারা কোনো ফেরেশতার পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন, তারা জিজ্ঞেস করেন, এ কার মন্দ আত্মা? তারা বলে, এ হলো, অমুকের পুত্র অমুকের আত্মা। তারা বিভিন্ন মন্দ নামে তার পরিচয় প্রদান করেন। অতঃপর তারা দুনিয়ার আসমানে উপনীত হয়ে দরজা উন্মুক্ত করার আবেদন জানান। কিন্তু দরজা উন্মুক্ত করা হবে না। অতঃপর রসুল এ আয়াত তিলাওয়াত করেন- ‘যারা আমাদের আয়াতগুলোকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করে এবং সেগুলো মানতে অহংকার করে, তাদের জন্য আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না- যতক্ষণ না উট সুচের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করে। এভাবেই আমি অপরাধীদের প্রতিদান দিই।’ (সুরা আরাফ, আয়াত ৪০।) এরপর আল্লাহতায়ালা বলবেন, এ দুর্গন্ধযুক্ত আত্মার স্থান হবে সিজ্জিন কারাগারে। এরপর রসুল (সা.) তেলাওয়াত করেন- ‘তোমরা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর প্রতি নিবেদিত হও এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক কর না। আর যে কেউ আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে, তার অবস্থা এমন, যেন সে আকাশ থেকে পড়ে গেছে; ফলে হয় পাখি তাকে তুলে নিয়ে গেছে, নয়তো বাতাস তাকে কোনো দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করে দিয়েছে।’ (সুরা হজ্জ, আয়াত ৩১)।
এভাবে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে এবং দুর্গন্ধযুক্ত রুহ দুনিয়ার দেহে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। দুজন ফেরেশতা এসে তাকে বসিয়ে প্রশ্ন করবেন, তোমার রব কে? সে বলবে, হায়, আমি তো জানি না! তারা বলবেন, তোমার ধর্ম কি? সে বলবে, আমি জানি না। অতঃপর তারা বলবেন, তাঁর সম্পর্কে তুমি কী বল, যাকে তোমাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল? সে বলবে, হায়! আমি জানি না। তখন আসমান থেকে ঘোষণা আসবে, বান্দা মিথ্যা বলছে। সুতরাং তার জন্য আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দাও, যেন তার কাছে আগুনের দহন ও লাভা আসে। ফলে আগুনের তীব্র দহন তাকে ঝলসাতে থাকবে। আর কবরকে এত সংকীর্ণ করে দেওয়া হবে যে তার দেহের একদিকের হাড় অপর দিকের সঙ্গে মিশে যাবে। অতঃপর কুশ্রী চেহারা ও কদাকার বস্ত্র পরিহিত, দুর্গন্ধযুক্ত এক ব্যক্তি তার কাছে উপস্থিত হবে। বলবে, দুঃসংবাদ গ্রহণ কর এমন কিছু, যা তোমাকে যন্ত্রণা দেবে। এ হলো সে দিন, যার প্রতিশ্রুতি তোমাকে প্রদান করা হতো। সে বলবে, কে তুমি? উত্তরে দেবে, আমি তোমার মন্দ আমল। তখন সে বলবে, হে রব! কেয়ামত কায়েম করবেন না! কেয়ামত কায়েম করবেন না! (আবু দাউদ, ৪৭৫৩, নাসায়ি, ২০০১।)
অন্য হাদিসে এসেছে, কাফেরের মৃত্যুর সময় হলে একজন ফেরেশতা পশমের তৈরি চট নিয়ে আসে, যাতে থাকে জ্বলন্ত অঙ্গার। বহু কষ্টে তার আত্মা বের করা হয়। তাকে বলা হয়, হে মন্দ আত্মা! বের হয়ে আসো! তোমার রবের প্রতি এমন অবস্থায় যে তুমি দিশাহারা ও ক্রোধে পতিত। বের হয়ে আসো! আল্লাহ কর্তৃক লাঞ্ছনা ও আজাবের দিকে। যখন তার রুহ বের করা হয়, তখন তাকে উক্ত জ্বলন্ত অঙ্গারে রাখা হয়। তার ভিতর থেকে ফুটন্ত পানির শব্দের মতো শব্দ আসতে থাকে। তার রুহকে চটে মুড়ে সিজ্জিনে প্রেরণ করা হয়। (মুসনাদে বাজ্জার, ৯৫৪১; শরহে সুদুর, ১৫।)
লেখক : প্রিন্সিপাল, সেইফ এডুকেশন ইনস্টিটিউট