বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার কাজ। ৩৩ বছর ধরে তারা টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পাবে। পরবর্তী সময়ে তা আরও ১৫ বছর বাড়ানোর সুযোগও রাখা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার ভার বিদেশিদের হাতে দেওয়ার বিরুদ্ধে জনমত থাকা সত্ত্বেও নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকার এ-সংক্রান্ত চুক্তি করার সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল শুধু নয়, রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ-টার্মিনালও সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান মেডলগ এসএর হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। অচিরেই এ ব্যাপারে সরকারি অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। বর্তমানে চালু থাকা টার্মিনালটি হস্তান্তরের চুক্তি হবে সুইস কোম্পানির সঙ্গে। চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে প্রথম ধাপে দুটি টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার চুক্তিকে পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কর্তাব্যক্তিরা নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে জোরেশোরে আলোচনা চালাচ্ছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকতেই চুক্তি সম্পাদনে তারা বদ্ধপরিকর। ডিসেম্বরে ওই টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াও চলছে। বে-টার্মিনাল প্রকল্পের দুটি টার্মিনালও যাবে বিদেশিদের হাতে। চিটাগং কনটেইনার টার্মিনালেও বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে বিদেশিরা। এর ফলে বন্দরের হাতে থাকবে শুধু একটি টার্মিনাল। বিদেশিদের হাতে দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা চট্টগ্রাম বন্দর তুলে দেওয়া হচ্ছে দৃশ্যত মহৎ উদ্দেশে। অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের গভীর বিশ্বাস, এর ফলে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে চট্টগ্রাম বন্দর। দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার ইতি ঘটবে। তবে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী এবং দেশের রাজনৈতিক মহল সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নয়। কোনো কোনো দেশ তাদের বন্দর সুপরিচালনার জন্য বিদেশি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দিয়েছে এটি সত্যি। তবে বন্দরের দায়িত্ব বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ায় বিভিন্ন দেশের জন্য কী বিড়ম্বনা ডেকে এনেছে, তা বিবেচনা না করে অন্তর্বর্তী সরকার এমন একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিলে সেটি হবে দুর্ভাগ্যজনক।