সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যে প্রতিশ্রুতি, সেটিতে কমিশন অটল বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। এ ছাড়া জনগণ কাক্সিক্ষত মাত্রায় ভোট কেন্দ্রে এলে কেন্দ্র ও ভোটবাক্স দখল করতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন সিইসি। গতকাল নির্বাচন ভবনে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তা কামনা করেন তিনি।
সিইসি বলেন, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে আমাদের যে প্রতিশ্রুতি, সেটিতে আমরা অটল। তবে রাজনৈতিক দলগুলোকে সহযোগিতা করতে হবে। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা উৎসবমুখর নির্বাচনের কথা বলেন। আপনারা (রাজনৈতিক নেতারা) নির্বাচনের মূল প্লেয়ার। আপনাদের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে এগোতে চাই। আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতিতে অটল রয়েছি। আমরা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর। নিরপেক্ষ, সুন্দরভাবে ভোট করতে গেলে আপনাদের সহযোগিতা লাগবে। দল, ভোটার সবাইকে নিয়েই নির্বাচন করতে হবে।
তিনি বলেন, গত দুই-তিনটা নির্বাচনে দেখেছি ভোটাররা আসতে চান না। আপনারা চাইলেই আসবে। ভোটাররা আপনাদের দ্বারা প্রভাবিত হন। আপনার আহ্বান তারা নেবেন। আপনারা যে ডাক দেবেন সেটির আওয়াজ অনেক বড়। ইমপ্যাক্ট অনেক বেশি হবে। জনগণ কাক্সিক্ষত মাত্রায় ভোট কেন্দ্রে এলে কিন্তু কেন্দ্র দখল, ভোটবাক্স দখল করতে পারবে না। কাজেই জনগণকে ডাক দেওয়ার ভূমিকা প্রত্যাশা করি। সংলাপে অন্য নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ বিভিন্ন দলের নেতারা অংশ নিয়েছেন।
গণভোট নিয়ে করণীয় কী : অধ্যাদেশের অপেক্ষায় ইসি সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের ঘোষণা সরকারের তরফে এলেও এ বিষয়ে নিজেদের করণীয় ঠিক করতে অধ্যাদেশ জারির অপেক্ষায় থাকার কথা বলেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বিকালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের সমাপনী বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এ কথা বলেন।
সমাপনী বক্তব্যে সিইসি বলেন, অধ্যাদেশটা হলে তখন আমার একটা দায়বদ্ধতা আসবে এ ব্যাপারে বক্তব্য দেওয়ার। কিন্তু রাজনীতিবিদরা অনেকে জিজ্ঞাসা করছেন, কীভাবে করবেন, কীভাবে এগুলোর জবাব দেবেন, কতটা বাক্স করবেন। এগুলোর সব চিন্তা, এক্সারসাইজ শুরু করব আমরা অধ্যাদেশটা হওয়ার পর।
তিনি বলেন, বয়স হওয়ার পর থেকে দেশের রাজনীতিকদের দেখে আসছি। ছাত্র অবস্থায় মান্না ভাইকে পেয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা হিসেবে। স্যারের (মঈন খান) সঙ্গে তো চাকরিই করেছি। রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ডিল করতে করতে এবং এ দেশের নির্বাচন দেখতে দেখতে, পাকিস্তান আমল থেকে দেখে এসেছি, বেসিক ডেমোক্রেসি থেকে সবকিছু।
সিইসি বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমাদের কম অভিজ্ঞতা হয়নি; যথেষ্ট অভিজ্ঞতা হয়েছে। শুধু আমাদের উচিত হবে, দেশের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, সামাজিক বাস্তবতাটা মেনে নিয়ে চিন্তাভাবনাটা করা।
নাসির উদ্দিন বলেন, আমি আর খোলাসা করে বলতে চাই না। এগুলোর হিটওয়েব আমি ফিল করি এখানে বসে। রাজনৈতিক বাস্তবতার হিটওয়েবটা আমাকে ফিল করতে হয়। কারণ, এটা খুব মসৃণ বাস্তবতা নয়। সামাজিক বাস্তবতাও সেরকম। এগুলো বিবেচনায় নিয়েই আমাদের এগোতে হচ্ছে।
নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে মন্তব্য করে সিইসি বলেন, এমন নয় যে কোনো নির্বাচন কমিশনের পক্ষে, আপনাদেরও যদি এখানে বসিয়ে দিই, এগুলোকে উপেক্ষা করে যাওয়া সম্ভব নয়। বাস্তবতা যেটা আছে, সেটা বিবেচনায় নিয়ে আপনাকে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে হবে। বাস্তবতাটা পুরোপুরি উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।
সিইসি বলেন, সবকিছু যদি ঐকমত্য কমিশনের জন্য বসে থাকতাম, আমি জানি না নির্বাচন আদৌ করতে পারতাম কি না। তিনি বলেন, গণভোটের কথা এসেছে। আগে আইনটা তো হতে হবে। ওখানে বলা আছে, ঘোষণার মধ্যে বলা আছে, একটা আইন হবে, যেটা ইলেকশন কমিশনকে অথরাইজড করবে, প্রেসক্রাইব করে দেবে, কী বিষয়ে গণভোট হবে, কীভাবে হবে ইত্যাদি।
সর্বশেষ ১৯৯১ সালের গণভোট আইনের প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, ওই আইনটা তো হতে হবে। ওই আইনটা হলে তখন আমার একটা দায়বদ্ধতা আসবে এ ব্যাপারে বক্তব্য দেওয়ার। সব চিন্তা, এক্সারসাইজ শুরু করব আমরা ওই আইনটা হওয়ার পরে। এর আগে তো আমি জানি না, হোয়াট কোর্স ইট উইল টেক।
সংলাপে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনি আচরণবিধি মানলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনি আচরণ প্রয়োগের ক্ষেত্রে যদি আরও কোনো পরিপত্র জারি করে স্পষ্টকরণের প্রয়োজন হয়, তা করা হবে। আমি নিশ্চিত কমিশন এগুলো নিয়ে আলোচনা করবে। কয়েকটি বিষয় আছে, যেগুলোর বিষয়ে সম্ভবত একটু ক্লারিফিকেশন প্রয়োজন।