বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতি বাংলাদেশ দৃশ্যত উদার নীতি প্রণয়ন করেছে অনেক দেশের চেয়ে। বিনিয়োগের জন্য তাত্ত্বিক বিচারে বাংলাদেশ লোভনীয় স্থান হিসেবে বিবেচনারও যোগ্যতা রাখে। প্রথমত বাংলাদেশ ১৮ কোটি মানুষের দেশ। যার অভ্যন্তরীণ বাজার বেশ বড়। দ্বিতীয়ত এ দেশে শ্রম এখনো বেশ সস্তা। তৃতীয়ত বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তি চীনের খুব কাছে। আর তৃতীয় অর্থনৈতিক শক্তি ভারতের অবস্থান বাংলাদেশের তিন দিকে। তারপরও সত্যি হলো বিশ্বের ৩৪তম অর্থনীতি হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাশার চেয়ে কম। একের পর এক ইপিজেড নির্মাণ করেও বিনিয়োগে সুখবর নেই। অর্থনৈতিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বিনিয়োগের বাধার জন্য পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করেছে। অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, সীমিত অর্থায়ন, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা, বিদেশি সংস্থাগুলোর জন্য অন্যায্য করের বোঝা ও দুর্নীতিকে তারা বাধা বলে মনে করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২৫ সালের বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিবেশ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত এক দশকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতা কমাতে ধীরে ধীরে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। বিদ্যুৎ পরিষেবা আরও ভালোভাবে নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা রয়েছে। তারপরও বিদেশি বিনিয়োগ এখনো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসন সংস্কারের কাজ শুরু করে। কিন্তু দৃশ্যপটের বেশির ভাগই অপরিবর্তিত রয়েছে। ২০২৪ সালে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া আর বেশি আমদানির কারণে বাংলাদেশ বড় ধরনের বৈদেশিক লেনদেনের ঘাটতিতে পড়ে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২৫ সালের মার্চে ২০ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। যা ২০২১ সালে ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। প্রতিবেদনে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে ধীরগতির এই দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারব্যবস্থাও বিকল্প বিরোধ মীমাংসা ব্যবস্থার অভাবকে দায়ী করা হয়েছে। বিনিয়োগের স্বার্থে এ ক্ষেত্রে সরকারকে দ্রুত সাফল্যের পরিচয় দিতে হবে।