রাজা ত্রিভুবন মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ১৯১১ সালের ১১ ডিসেম্বর সিংহাসনে আরোহণ করেন। রাজকার্য দেখাশোনা করতেন রাজমাতা দিব্যেশ্বরী লক্ষ্মী দেবী।
১৯৩০ দশকের মাঝামাঝি নেপাল শাসনে রানাদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে জনরোষ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। নেপাল প্রজা পরিষদ সারা দেশে রানা পরিবারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। রাজা ত্রিভুবন প্রজা পরিষদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান। প্রভাবশালী রানা পরিবার আন্দোলন দমনে কঠিন পথ বেছে নেয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনী কঠোরভাবে প্রতিবাদী জনতাকে স্তব্ধ করে দেয়। আন্দোলনের নেতাদের মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
সংবিধান অনুযায়ী নেপালের রাজা একাধারে ঈশ্বরের অবতার ও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হলেও কার্যত তারা ছিল ঠুঁটো জগন্নাথ। সবকিছু রাজার নামে পরিচালিত হলেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল রানাদের হাতে। প্রতি বৃহস্পতিবার রাজাকে মহাক্ষমতাধর প্রধানমন্ত্রীর সিংহদরবারে সাক্ষাতের জন্য ডাকা হতো। সেখানে তাঁকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। রাজা যে ক্ষমতাহীন তা প্রমাণে এমন অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হতো।
রাজা ত্রিভুবন যুবরাজ মহেন্দ্রসহ রাজপরিবারকে নিয়ে ভারতীয় দূতাবাসে আশ্রয় নেন। একমাত্র ছোট নাতি জ্ঞানেন্দ্রকে সঙ্গে নিতে পারেননি। রাজার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে রানা মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক ডাকেন এবং চার বছরের শিশু জ্ঞানেন্দ্রকে নেপালের রাজা ঘোষণা করেন। ১০ নভেম্বর দুটি ভারতীয় বিমান কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে নামে। শিশু জ্ঞানেন্দ্রকে বাদ দিয়ে পুরো রাজপরিবার ভারতে চলে যায়। দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে সিংহাসনহারা ত্রিভুবনকে রাজকীয় মর্যাদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা রাজা ত্রিভুবনকে অভ্যর্থনা জানান। এদিকে রাজাকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রতিবাদে নেপালজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ দানা বেঁধে ওঠে। দিল্লিতে রাজার সঙ্গে বৈঠকে তাঁকে সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং নেপালি কংগ্রেস ও রানা পরিবারকে নিয়ে সরকার গঠনের চুক্তি হয়। তবে এবার আর ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে নয়। সত্যিকারের ক্ষমতাধর রাজা হিসেবে সিংহাসনে বসেন রাজা ত্রিভুবন বীর বিক্রম শাহ। তিনি রানা পরিবারের বংশানুক্রমিক শাসনের অবসান ঘটান।
আরশান আজাদ