অনন্য উচ্চতার পথে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীন। শুক্রবার বেইজিংয়ের পিপলস গ্রেট হলে চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে শি জিনপিং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে পরের ধাপে তুলে নিতে কাজ করার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেন। ড. ইউনূস শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় চীনের জোরালো ভূমিকা কামনা করেন। শি জিনপিং বাংলাদেশে তাঁর দেশের বিনিয়োগ এবং উৎপাদন প্রতিষ্ঠান স্থানান্তরে সে দেশের উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার আশ্বাস দেন। দুই শীর্ষ নেতার আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয়ে একটি চুক্তি ও আটটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। সেই সঙ্গে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে পাঁচটি ঘোষণা আসে। মোটাদাগে পাওয়ার হিসাব হচ্ছে- চীন থেকে ২১০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি পেল বাংলাদেশ। চীনের প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিশেষ চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলে শতকোটি ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে। মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণ, চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত সহায়তার পরিকল্পনা করেছে। সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে- অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানিয়ে চীন গত আগস্ট থেকে সরকারের নেওয়া সংস্কার কর্মসূচি ও অগ্রগতির প্রশংসা করেছে। উভয় পক্ষের কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্ব আরও সুসংহত ও গভীর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। ঢাকা ও বেইজিং জলবিদ্যুৎ, পূর্বাভাস, বন্যা প্রতিরোধ ও দুর্যোগ হ্রাস, নদীখনন, পানিসম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন এবং সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি বিনিময়ের ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করবে। তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনঃসংস্কার প্রকল্পে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। এক চীন নীতির প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করেছে। অন্যদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে চীন। এ ছাড়া চীনের পানিসম্পদমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের শত শত নদী ও পানিব্যবস্থাপনা পরিচালনার জন্য চীন থেকে ৫০ বছরের মহাপরিকল্পনা চেয়েছেন। বিশেষ করে তিস্তা নদীব্যবস্থাপনা এবং রাজধানীর চারপাশের নদীগুলোর দূষিত পানি পরিষ্কারে বিশেষ সহায়তা কামনা করেন। চীনের মন্ত্রী এ ব্যাপারে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সব মিলে বিশেষ মর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর বাংলাদেশের জন্য বিরাট অর্জন হিসেবে মূল্যায়ন করা যায়। দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের আন্তরিক আলোচনার ফলাফল হিসেবে স্বাক্ষরিত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক এবং সব প্রতিশ্রুতি যথাযথ বাস্তবায়িত হোক। ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক ঈর্ষণীয় নতুন উচ্চতা স্পর্শ করুক।