মধু মাস জ্যৈষ্ঠের শুরুতে রাজধানীর ছোটবড় বাজার ছেয়ে গেছে রসালো ফলে। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, জামরুল, আনারস, বেতফল, গাব, তালশাঁসসহ নানান ফলের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। অন্যদিকে মৌসুম শেষ হলেও বেল, বাঙ্গি ও তরমুজও পাওয়া যাচ্ছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, বাদামতলী, বাবুবাজার, রামপুরা, শান্তিনগর, মিরপুর, পল্লবী, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটসহ বিভিন্ন বাজারে মৌসুমি ফলের বেচাকেনা চলছে হরদমে। রাজধানীর স্থায়ী বাজার ছাড়াও ভ্যানগাড়ি ও ভ্রাম্যমাণ দোকানে পসরা সাজিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে রসালো ফল। রসালো ফলের ম-ম গন্ধে মুখর পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলো। সর্বত্র মৌসুমি ফল পাওয়া গেলেও দাম কিছুটা চড়া। বিশেষ করে আম ও লিচুর দাম বেশি। এতে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মানুষ পরিমাণে কম করে আম ও লিচু কিনছেন। রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের সমাগমে ব্যস্ত সময় কাটছে ফল বিক্রেতাদের। কেউ বসে আছেন লিচু নিয়ে, কারও সামনে কাঁঠালের স্তূপ, কেউবা আম-আনারসের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। বিক্রেতারা জানান, বাজারে উঠতে শুরু করেছে মৌসুমি ফল। আগামী এক থেকে দেড় মাস বাজারে এসব ফলের ব্যাপক চাহিদা থাকবে। বেচাকেনাও হবে জমজমাট। রামপুরা বাজারের লিচু বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমানে বাজারে যে লিচু আসছে সেগুলো আকারে কিছুটা ছোট। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, পাবনার ঈশ্বরদী ও রাজশাহী থেকে লিচু কিনে এনেছেন বিক্রেতারা। বাজারে পাওয়া যাচ্ছে রাজশাহীর বোম্বে ও ঠাকুরগাঁওয়ের দেলোয়ারি লিচু। আগামী সপ্তাহ থেকে আসবে দিনাজপুরের লিচু। তিনি আরও বলেন, এখন ঠাকুরগাঁওয়ের ১০০ দেলোয়ারি লিচু ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা ও রাজশাহীর ১০০ বোম্বে লিচু ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজশাহী, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলার লিচু বাজারে এলে এক সপ্তাহের মধ্যেই দাম কমে আসবে। এদিকে হিমসাগর, গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ ও গুটি জাতের আমও বিক্রি হচ্ছে বাজারে। বিক্রেতা ফরিদুল হক জানান, সবেমাত্র আম উঠতে শুরু করেছে। তাই চাহিদা বেশি। দাম তুলনামূলকভাবে কমই আছে। এখন সাতক্ষীরার আম বেশি আসছে। এসব আম আগামী ১০-১৫ দিন বাজারে থাকবে জানিয়ে শান্তিনগর বাজারের বিক্রেতা মাইকেল হোসেন বলেন, এরপর অন্যান্য জাতের আম এলে এগুলোর চাহিদা ও জোগান কমতে থাকবে। বর্তমানে প্রতি কেজি গুটি আম ৮০ টাকা, গোবিন্দভোগ ১০০ টাকা, গোপালভোগ ১০০ টাকা ও হিমসাগর বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকায়। শুধু আম, লিচুই নয়, বাজারে উঠেছে কালোজাম, কাঁঠাল, আমরুজসহ বাহারি সব ফল। তাল ৩০ টাকা, প্রতি কেজি লাল আমরুজ ২০০ টাকা, সাদা আমরুজ ৮০ টাকা ও আনারস ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কাঁঠাল এখনো তেমন না উঠলেও মান ও আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে। প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ১২০-৩৫০ টাকা পর্যন্ত। তালের শাঁস বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ১০ টাকা। তিন পিসের তাল বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। এ ছাড়া দেশি ফলের মধ্যে প্রতি কেজি ডেউয়া ২০০, আমড়া ১০০, জামরুল ১৮০, ছফেদা ২০০, জাম ১৫০-৩০০ টাকা এবং ড্রাগন ফল ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পুরান ঢাকার সদরঘাটের খুচরা ফল বিক্রেতা সুমন মোল্লা বলেন, এ সময়টাতে সব ফল একসঙ্গে বাজারে আসে। তবে মৌসুমের শুরুতে হওয়ায় কিছু কিছু ফলের দাম একটু বেশি।
কারওয়ান বাজারের ক্রেতা সজিব মাহমুদ বলেন, বাজারে মৌসুমের প্রথম ফল ওঠায় বাচ্চাদের জন্য লিচু আর আম কিনলাম।
বাজারের পাশাপাশি নগরীর প্রায় প্রতিটি পাড়ামহল্লা ও ফুটপাতে ভ্যানে করেও মৌসুমি ফল বিক্রি করছেন ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা। তবে বাজারের চেয়ে এসব ভ্যানে ফলের দাম তুলনামূলক কম। ব্যবসায়ীরা জানান, ভ্যানে বিক্রি করলে দোকান ভাড়া দিতে হয় না, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য খরচও নেই। তাই কিছুটা কম দামে বিক্রি করা যায়।