দেশের শিক্ষা সেক্টরে পুরোপুরি শৃঙ্খলা এখনো ফেরেনি। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সব ক্ষেত্রেই যেন হযবরল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। আন্দোলনের জেরে এরই মধ্যে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যসহ শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের পদ থেকে সরে যেতে হয়েছে। খোলা থাকা কয়েক বিশ্ববিদ্যালয়েও অস্থিরতা বিরাজ করছে। থেমে থেমে মাঝে মধ্যে আন্দোলনে সরব হয়ে উঠছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একাডেমিক কার্যক্রমে ঘটছে ছন্দপতন। আর এতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হচ্ছে সেশনজট। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক তদবিরে পরিচালনা পর্ষদ গঠনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রয়েছে দ্বন্দ্ব-অসন্তোষ। এসব কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়ছে শিখন ঘাটতি।
মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের বেসরকারি কয়েক লাখ শিক্ষক-কর্মচারী এখনো এপ্রিল মাসের বেতন পাননি। এর জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রশাসনিক ব্যর্থতাকে কারণ হিসেবে বলছেন শিক্ষকরা। গত ফেব্রুয়ারির শেষে এই ডিজিকে নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। বেতন-ভাতা না পাওয়া বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা এরই মধ্যে মাউশি ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দিয়েছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আজাদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চলতি মাসের শুরুতে এপ্রিলের বেতন প্রস্তুতের কথা ছিল। কিন্তু ইএমআইএস সেলের সিস্টেম এনালিস্ট ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় এই প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। একজন ব্যক্তির কারণে সারা দেশের শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন আটকে থাকার যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে তার বিকল্প ভাবার সুযোগ নেই। বেতন আটকে থাকায় শিক্ষকরা মাউশি ঘেরাও করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কারা এসব আন্দোলন করছেন খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন’। বেসরকারি স্কুল-কলেজ শিক্ষকরা প্রায় প্রতিদিনই দাবি-দাওয়া আদায়ের আন্দোলনে সরব রয়েছেন। তারা শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ, শতভাগ উৎসব ভাতা, পূর্ণাঙ্গ বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতার দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ এর সভাপতি হিসেবে রয়েছেন। ছয় দাবিতে আন্দোলনরত কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা ঢাকা পলিটেকনিকে সংবাদ সম্মেলন করে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ রিট বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। আন্দোলনরত কারিগরি ছাত্ররা ক্লাসে ফিরলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো স্বস্তি আসেনি।
এদিকে সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা ফের আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি ও আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে নবগঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রমে ছন্দপতন লক্ষ্য করা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকেই খেয়াল রাখছি। আলোচনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হবে বলে প্রত্যাশা করি।