রংপুর অঞ্চলের কৃষি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে জমির উর্বরতা, পরিবেশ ও কৃষকদের স্বাস্থ্য। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, জমিতে জৈব সার ব্যবহারের হার উদ্বেগজনকভাবে কমে যাওয়ায় এ অঞ্চলের মাটির স্বাস্থ্য দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ৭ লাখ ৩২ হাজার হেক্টর। এর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে। ফলে মাটির উর্বরতা দ্রুত কমে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি স্বাস্থ্যকর মাটিতে ৫ শতাংশ জৈব পদার্থ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু রংপুর অঞ্চলের জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ ১ থেকে ১ দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে। এছাড়া ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ জমিতে দস্তার ঘাটতি রয়েছে। ফলে কৃষিজমিগুলোর প্রাণশক্তি হারাচ্ছে দ্রুত।
অপরিকল্পিত চাষাবাদ, লাগাতার একই ফসলের চাষ, নগরায়ণ, শিল্পায়ন, বন উজাড়, দূষণ ও ইটভাটায় মাটির উপরিভাগ তুলে নেওয়ার কারণে মাটির গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে বলে জানান কৃষিবিদরা।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ফসলের উৎপাদনও কমে যেতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, কৃষকদের সুষম সার ব্যবহারে উৎসাহিত করতে ‘খামারী অ্যাপ’ চালু করা হয়েছে, যেখানে তারা প্রয়োজনীয় পরামর্শ পাচ্ছেন।
কৃষিবিদদের মতে, অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার শুধু মাটির ক্ষতি নয়, কৃষকদের স্বাস্থ্যের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কৃষক কীটনাশকজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন। এদের মধ্যে চোখ জ্বালা, ত্বকে ফোসকা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, এমনকি দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসার ও প্রজননজনিত জটিলতা দেখা দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাটির টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য জৈব সারের ব্যবহার বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। বিশেষ করে গৃহপালিত পশুপাখির বর্জ্য ও গোবর জৈব সার হিসেবে জমিতে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মৃত্তিকা গবেষকরা।
জমির প্রাণশক্তি ফিরিয়ে আনতে জৈব সার ব্যবহারের বিকল্প নেই—বলেও জানান কৃষিবিদরা।
বিডি-প্রতিদিন/সুজন