মানিকগঞ্জের ঘিওরে দীর্ঘদিন পর বিনা বাধায় বিএনপির নেতাকর্মীরা দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেছেন। বুধবার দিনব্যাপী নানা কর্মসূচিতে উপজেলা জুড়ে নেতাকর্মীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। দিনের শুরুতে ঘিওর পাবলিক লাইব্রেরিতে এক পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মানিকগঞ্জ-১ আসনের তিনটি উপজেলা থেকে আসা বিএনপি এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমবেত হন।
হাজারো নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে স্লোগানের নগরীতে পরিণত হয় ঘিওর উপজেলা। হাতে ব্যানার-ফেস্টুন ও নানান প্ল্যাকার্ড নিয়ে নেতাকর্মীরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামে নানান স্লোগান দিতে থাকেন।
২০০৬ সালে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে বিএনপিকে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালনে নানা সীমাবদ্ধতা ও পুলিশি বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে এবার নির্বিঘ্ন ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠান হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়। এই র্যালির নেতৃত্ব দেন বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ারের হোসেনের জ্যেষ্ঠ পুত্র মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও আহ্বায়ক কমিটি সদস্য ড. খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলু।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন মরহুম খোন্দকার আব্দুল হামিদ ডাবলুর পুত্র আমেরিকা প্রবাসী খোন্দকার রুমান, ঘিওর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন, শিবালয় উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি কাজী আব্দুর রাজ্জাক, দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শফিউল আলম বিল্টু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, ঘিওর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মীর কায়সার হামিদ, মানিকগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মহিদুর রহমান, মানিকগঞ্জ জেলা প্রজন্ম দলের সভাপতি ডা. এনামুল হক, ঘিওর উপজেলা কৃষক দলের সহ-সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম চান্দু, শিবালয় উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু খালিদ ডন, দৌলতপুর উপজেলা কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সার্জেন্ট শাহীন, মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্র দলের সাবেক সদস্য মো. জুয়েল রানাসহ যুবদল, শ্রমিকদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, ছাত্রদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। সমাবেশ ও র্যালিতে ঘিওর- দৌলতপুর ও শিবালয়ের উপজেলার বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দীর্ঘসময় পর বাধাহীনভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করতে পারা বিএনপির নতুন জাগরণের প্রতীক। তারা আশা প্রকাশ করেন যে, এ উদ্দীপনা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলু বলেন, আজকের এই দিন আমাদের জন্য গর্বের, আমাদের জন্য উল্লাসের। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জনগণের অধিকার রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেই অঙ্গীকারকে আন্দোলন ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে সমুন্নত রেখেছেন। আজ দেশনেতা তারেক রহমান প্রবাসে থেকেও আমাদের প্রতিটি সংগ্রামে আলোকবর্তিকার মতো দিশা দেখাচ্ছেন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পুলিশ বাহিনীকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে গত ১৭টি বছর আমাদের কোনো দলীয় কর্মসূচি ভালোভাবে পালন করতে দেয়নি। আজকের হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে, মানুষ বিএনপিকে কত ভালোবাসে এবং ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছে।
তিনি বলেন, বিএনপি হচ্ছে এ দেশের গণমানুষের দল ও তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যে স্বপ্ন নিয়ে এই দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই স্বপ্ন পূরণে আজ আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা ও আমাদের দলের নেতাকর্মীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট, মাফিয়া শেখ হাসিনা সরকারকে হঠাতে পারলেও এখনো দেশে পতিত সরকারের দেশী-বিদেশি দোসররা সক্রিয়। তারা নানাভাবে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচাল করে দেশকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে। তারেক রহমানকে দেশে ফিরে আসতে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বাবলু আরও বলেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আজ নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে। জনগণ আর অন্যায়-অবিচার সহ্য করবে না। বিএনপির প্রত্যেক নেতাকর্মীকে এখন দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে এবং মানুষের পাশে থেকে তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে এগিয়ে আসতে হবে। সেইসঙ্গে সবাইকে জণগণের দোরগোড়ায় গিয়ে তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বুঝিয়ে বলতে হবে।
তিনি বলেন, আমার পিতা খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে আপনারা যেভাবে ভালবেসেছেন তা ছিল অতুলনীয়। আমি হয়তোবা তার মতো হতে পারব না, কিন্তু আমার দ্বারা কোনো দুর্নাম হবে না। আমার পিতার আদর্শ নিয়ে আমি আগামী দিনে আপনাদের পাশে থাকতে চাই। আমার দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, আমি আপনাদের নিয়েই এলাকায় উন্নয়ন করতে চাই।
বিডি প্রতিদিন/কেএ