বাংলাদেশসহ তিন দেশের অমুসলিম শরণার্থীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারত। এই তিন দেশ হলো- বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই তিন দেশের যেসব অমুসলিম শরণার্থী, যারা ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে বাঁচতে পাসপোর্ট কিংবা অন্যান্য ভ্রমণ নথিপত্র ছাড়াই ভারতে প্রবেশ করেছেন, এমন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা দেশটিতে অতিরিক্ত সময়ের জন্য অবস্থান করতে পারবেন।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে কার্যকর হওয়া ভারতের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ফরেনার্স অ্যাক্ট-২০২৫ এর আওতায় তাদেরকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে না।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ধর্মীয় নির্যাতন থেকে বাঁচতে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের যে সদস্যরা পাসপোর্ট কিংবা অন্যান্য ভ্রমণ নথি ছাড়াই ভারতে প্রবেশ করেছেন, তারা সেখানে অবস্থানের অনুমতি পাবেন। এমনকি যাদের নথির মেয়াদ দেশটিতে প্রবেশের পর শেষ হয়ে গেছে, তাদের বিরুদ্ধেও কোনও ধরনের শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সিএএ’র মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশের নিপীড়িত সংখ্যালঘুরা ভারতে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আগে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আসা শরণার্থীরা এতদিন এই আবেদন করতে পারতেন। নতুন ঘোষণার মাধ্যমে সেই সময়সীমা বেড়েছে। এখন ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ থেকে যে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি, খ্রিস্টানরা ভারতে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে আশ্রয় নিয়েছেন, তারা সবাই সিএএ-তে আবেদন করতে পারবেন।
মুসলিম সম্প্রদায়ের নাম উল্লেখ না করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওই নির্দেশিকায় আরও স্পষ্ট বলা হয়েছে, ভিন দেশের নাগরিক, যারা অবৈধভাবে ভারতে বসবাস করছেন, তাদের নিজেদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে। যদি কোনও ব্যক্তি বৈধ নথি না দেখাতে পারেন, তাহলে তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হবে। তবে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু নাগরিক, হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও পার্সিরা, যারা ধর্মীয় অত্যাচার থেকে বাঁচতে ভারতে এসেছেন, তাদের ফেরত পাঠানো হবে না।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ফরেনার্স (এক্সেম্পশন) আদেশ ২০২৫ অনুযায়ী, নেপাল ও ভুটানের নাগরিকদের পাশাপাশি তিব্বতিরা, যারা ১৯৫৯ সাল থেকে ২০০৩ সালের ৩০ মের মধ্যে কাঠমান্ডুতে ভারতীয় দূতাবাস কর্তৃক জারি করা বিশেষ প্রবেশ অনুমতিপত্র নিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন এবং সংশ্লিষ্ট বিদেশি নিবন্ধন কর্মকর্তার কাছে নিবন্ধন করেছিলেন, তাদেরও একই ধরনের ছাড় দেওয়া হয়েছে।
তবে নেপাল ও ভুটানের নাগরিকরা যদি চীন, ম্যাকাও, হংকং বা পাকিস্তান হয়ে ভারতে প্রবেশ কিংবা প্রস্থান করেন, তাহলে তারা আইনের ২১ নম্বর ধারার সুবিধা পাবেন না। এই ধারা অনুযায়ী, বৈধ পাসপোর্ট অথবা ভিসা ছাড়া ভারতে প্রবেশ করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫ লাখ রুপি জরিমানা হতে পারে। ২৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ভারতে থেকে গেলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৩ লাখ রুপি জরিমানা হতে পারে।
দেশটির এই আইন বাস্তবায়নের ক্ষমতা রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে দেওয়া হয়েছে। সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনের বিধি লঙ্ঘনের জরিমানার পরিমাণও জানিয়ে দিয়েছে। তবে আইনে অব্যাহতি পাওয়া ছাড়া বৈধ পাসপোর্ট কিংবা ভিসা ছাড়া যারা ভারতে প্রবেশ করবেন, তাদের সংশ্লিষ্ট ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে ৫ লাখ রুপি জরিমানা দিতে হবে।
ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত অবস্থানের জন্য ধাপে ধাপে জরিমানা দিতে হবে। আইনে বলা হয়েছে, তিব্বতি, মঙ্গোলিয়ার বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের দীর্ঘমেয়াদি ভিসাধারীদের অতিরিক্ত সময় ধরে অবস্থানের কারণে জরিমানা গুনতে হবে।
প্রসঙ্গত, ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে দেশগুলোর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে ভারতের নাগরিকত্ব পান, সেই কারণে ২০১৯ সালে সিএএ বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস করেছিল দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। সংশোধনী আইনে জানানো হয়েছে, নাগরিকত্বের আবেদন জানানোর আগে অন্তত এক বছর এবং তার আগে ১৪ বছরের মধ্যে অন্তত পাঁচ বছর ভারতে থেকেছেন, তারাই নাগরিকত্ব পাবেন। তবে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরামের বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে ওই আইনে কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে। সূত্র: এনডিটিভি, ইকোনমিক টাইমস, ইকোনমিক টাইমস
বিডি প্রতিদিন/একেএ