মানবজীবনের সবচেয়ে মহার্ঘ উপহার যদি কিছু হয়, তবে তা হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার ভালোবাসা। আর সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য হলো তাঁর ঘৃণা। মানুষ চিরকাল চেষ্টা করে মানুষের ভালোবাসা, সম্মান আর প্রশংসা অর্জনের জন্য; কিন্তু তা অর্জনে বেশির ভাগ মানুষই ব্যর্থ হয়। মানুষের প্রকৃত ভালোবাসা ও সম্মান অর্জনে করণীয় কী হবে, তা জানিয়ে দিয়েছেন আমাদের প্রিয় নবী (সা.)।
ভালোবাসা কিংবা ঘৃণার উৎস আসলে মানুষের হাতে নয়, বরং তা নির্ধারিত হয় আসমানেই। তাই আসমানের মালিক কাকে, কিভাবে সম্মান ও ভালোবাসার পাত্র বানাবেন, তা জানা এবং সে অনুযায়ী আমল করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যদি আল্লাহ কারো ওপর রাগান্বিত হন, তিনি জিবরাইল (আ.)-কে বলেন, ‘আমি অমুককে ঘৃণা করি, তুমিও তাকে ঘৃণা করো।’ এরপর আকাশবাসীরাও তাকে ঘৃণা করে, অবশেষে পৃথিবীতেও মানুষ তার প্রতি বিরূপ হয়। (মুসলিম, হাদিস : ২৬৩৭)
অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন তখন তিনি জিবরাইল (আ.)-কে ডেকে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালোবাসেন, কাজেই তুমিও তাকে ভালোবাসো। তখন জিবরাইল (আ.)-ও তাকে ভালোবাসেন এবং জিবরাইল (আ.) আকাশের অধিবাসীদের মধ্যে ঘোষণা দেন যে আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালোবাসেন। কাজেই তোমরাও তাকে ভালোবাসো। তখন আকাশের অধিবাসী তাকে ভালোবাসতে থাকে। অতঃপর পৃথিবীতেও তাকে সম্মানিত করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৩২০৯)
এ দুটি হাদিস এমন এক বাস্তবতা উন্মোচন করে, যা আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের নিয়তি নির্ধারণ করে।
আসমান থেকে জমিনে ভালোবাসার ধারা
মানুষের চোখে যেসব মহামানব চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন, তাঁদের জনপ্রিয়তা শুধু প্রচারণার ফসল নয়; আল্লাহর ভালোবাসাই তাঁদের মর্যাদার আসল ভিত্তি। কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, দয়াময় তাদের জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করবেন।’ (সুরা : মরিয়ম, আয়াত : ৯৬)
ভালোবাসা অর্জনের পথ
প্রশ্ন আসে, আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করব কিভাবে? উত্তর দিয়েছেন স্বয়ং কোরআন, ‘বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমাকে অনুসরণ করো; আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসবেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)
অতএব, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা ছাড়া আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের পথ নেই।
সাহাবায়ে কিরামের জীবনে এর অসংখ্য উদাহরণ পাওয়া যায়। যেমন— বিলাল (রা.) ছিলেন এক নিপীড়িত দাস। সমাজ তাঁকে অযোগ্য ভেবেছিল; কিন্তু আল্লাহর নিকট তাঁর ঈমান ও ত্যাগ এত প্রিয় হলো যে মহানবী (সা.) তাঁর পদচারণের শব্দ জান্নাতে শুনতে পান। (বুখারি, হাদিস : ১১৪৯)
মানুষের চোখে ছোট, অথচ আল্লাহর ভালোবাসার কারণে তিনি হয়ে গেলেন মহান।
এই হাদিসদ্বয় আমাদের শেখায়, মানুষের ভালোবাসা বা ঘৃণা আসমানি সিদ্ধান্তের প্রতিফলন। প্রকৃত মর্যাদার উৎস আল্লাহর সন্তুষ্টি, কোনো রাজনীতি বা প্রচারণা নয়। আল্লাহকে রাজি করাতে হলে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণ করতে হবে, পাপ থেকে দূরে থাকতে হবে।
মানবজীবনের সাফল্য বা ব্যর্থতা নির্ধারিত হয় একমাত্র আল্লাহর ভালোবাসা বা ঘৃণার মাধ্যমে। যিনি আল্লাহর প্রিয় হন, আসমান তাঁকে ভালোবাসে, জমিন তাঁকে সম্মান করে। আর যে আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হয়, তার প্রতি আকাশ ও জমিন দুটোই বিরূপ হয়। তাই প্রত্যেক মুমিনের প্রার্থনা হওয়া উচিত, ‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে আপনার প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং আমাদের জন্য আপনার সন্তুষ্টি নির্ধারণ করুন।’
লেখক : শিক্ষার্থী, তাকমিল ফিল হাদিস, জামিয়া ইমদাদিয়া দারুল উলুম মুসলিম বাজার, মিরপুর, ঢাকা