অতিবৃষ্টি ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে নরসিংদীতে সবজির বাজারগুলোতে দেখা দিয়েছে অস্থিতিশীলতা। হঠাৎ করেই গত কয়েক সপ্তাহ জুড়ে সব ধরনের সবজির দাম কেজি প্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ৩০ টাকা পযর্ন্ত। এতে সাধারণ ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। তবে পাইকারি বাজারে সবজির দাম কিছুটা কম থাকলেও মধ্যস্বত্বভোগী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে কোন কোন সবজির দাম দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। বাজারে সবজি কিনতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সুষ্ঠু তদারকি না থাকায় এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নিয়মিত মনিটরিং প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহ কয়েক আগেও যে শাকসবজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেসব সবজি বর্তমানে তা ৭০ থেকে ৯০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বেগুন, কাঁচামরিচ, আলু, শসা, পেঁয়াজকলি, ঢেঁড়সসহ প্রায় সব ধরনের সবজির দামই অতিরিক্ত হারে বেড়েছে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই খাদ্যপণ্য কিনতে গিয়ে ভোক্তাদের ‘এমসিএম’ (মুখ চেপে মেনে নেওয়া) অবস্থা তৈরি হয়েছে।
জানা যায়, নরসিংদীর সবজির কদর এখন দেশজুড়ে। ঢাকাসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার সবজির চাহিদার একাংশের যোগান আসে এই জেলা থেকে। আর নরসিংদীতে উৎপাদিত এসব সবজি দিয়ে দেশের ৪০ শতাংশ সবজির চাহিদা মিটানো হয়। স্থানীয় কৃষকদের নারায়ণপুর, বারৈচা, মরজাল, জঙ্গলী শিবপুর, কামারটেক, চৈতন্য, সৃষ্টিগড় এবং কোন্দালপাড়া এলাকায় মহাসড়কের ওপর রেখেই বেচাকেনা হচ্ছে। সোম, বুধ এবং শুক্রবার হাট বসছে বারৈচায়। জঙ্গলী শিবপুরে রোববার ও বৃহস্পতিবার, নারায়ণপুরে শনি ও মঙ্গলবার, সৃষ্টিগড়ে মঙ্গলবার এবং কোন্দালপড়ায় বসছে সোম ও শুক্রবার। মরজাল, কামারটেক এবং চৈতন্য এলাকায় বর্তমানে সপ্তাহের প্রতিদিনই বসছে সবজির হাট।
সরেজমিনে সোমবার সকালে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বারৈচা সবজির হাটে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা ভ্যানে করে ক্ষেত থেকে সবজি নিয়ে হাটে আসছে। মহাসড়কের উপর ভ্যান রেখেই পাইকারদের সাথে দরকষাকষি করছেন। দরে বনিবনা হলে বিক্রি করছে।
বারৈচা পাইকারী সবজির বাজার প্রতি কেজি করলা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, প্রতি কেজি কাঁকরল আকার ও প্রকার বেধে ৩৫ থেকে ৫০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা,শসা ৩০ টাকা, বেগুন ২০ থেকে ২৫টাকা, ছরিকচু ২৫ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, প্রতি কেজি বটবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা,কাচামরিচ প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে।
নরসিংদী খুচরা সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি করলা পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা, প্রতি কেজি কাঁকরল আকার ও প্রকার বেধে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, বেগুন ৪০,ছরিকচু ৪০ টাকা, ঢেঁড়শ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ১৫০ টাকা, প্রতি কেজি বটবটি ৮০ টাকা, লতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাচামরিচ প্রতি কেজি ২৪০ টাকা কাচা পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ ধরে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন,আমার দুই কানি ক্ষেতে কাকরলের চাষ করেছি। এবারের বৃষ্টিতে আমার জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে ক্ষেতের সকল গাছ মরে গেছে। এতে নষ্ট হয়ে গেছে সকল ফসল।
অপর কৃষক মোবারক বলেন, অতি বৃষ্টির কারণে ক্ষেতের সকল সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া এবার ফলনও কম। তাই বাজারে সবজির সরবরাহ কম। বিধায় দাম আগের তুলনায় বেশি।
বারৈচা বাজারের পাইকারী ব্যাবসায়ী জাবেদ মিয়া বলেন, আমাদের শিবপুর,বেলাবো,রায়পুরা ও মনোহরদীতে এবার সবজির উৎপাদন কম। তাই কৃষকরা অল্প পরিমানের সবজি নিয়ে আসে। কিন্তু দাম আনেক বেশি।
সবজি বিক্রেতা মুকুল হোসেন বলেন, আড়তেই সবজির দাম বেশি। বর্তমানে নরসিংদীর স্থানীয় উৎপাদিত সবজি বাজারে নেই বলেই চলে। সবই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আনতে হচ্ছে। এতে করে খরচ বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।
খুচরা বাজারের ক্রেতারা অভিযোগ করে বলেন, পাইকারি বাজারে সবজির দাম কিছুটা কম থাকলেও খুচরা পর্যায়ে এসে তা দ্বিগুণের কাছাকাছি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। মধ্যস্বত্বভোগী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণেই বাজারে এই অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে।
একজন ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এক বেগ সবজি কিনতে এখন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা লেগে যাচ্ছে। আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষদের পক্ষে এটা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব।
অন্যদিকে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, ধারাবাহিক বৃষ্টি ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মাঠে সবজি নষ্ট হয়েছে। ফলে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। সেই প্রভাবেই বাজারে দামের ঊর্ধ্বগতি।
নরসিংদী কৃষি অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক মো: আব্দুল হাই বলেন,নরসিংদীর উৎপাদিত সবজি রাজধানী ঢাকা সহ দেশের ৪০ শতাংশ সবজির চাহিদা মিটিয়ে থাকে। এ বছর নরসিংদী জেলায় প্রায় ৭ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গড়ে প্রায় ২০ টনের মতো সবজি উৎপাদন হয়েছে। বাজারে কৃষকরা দাম ভালো পাচ্ছেন।
বাজারে সবজির দাম অতিরিক্ত কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে কিছু এলাকার সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। তাই বাজারে দাম একটু বেশি। তবে আগামী সপ্তাহের মধ্যে দাম কমে আসবে বলে আশা রাখছি।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল