ঘূর্ণিঝড় 'শক্তি'-এর তাণ্ডবে কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ের আঘাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে ৮৪টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে এবং ৬২টি ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিঁড়ে গেছে প্রায় ৪৫০টি স্থানে, হেলে গেছে দুই শতাধিক পোল, ভেঙেছে শতাধিক ক্রস আর্ম ও দেড়শতাধিক ইনসুলেটর।
এছাড়া, তিন শতাধিক স্থানে মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পল্লী বিদ্যুৎ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন চারটি সমিতির প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় আড়াই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার ৬০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও পুরোপুরি বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে, কারণ প্রতিটি সমিতির প্রায় ৩০ শতাংশ লাইনম্যান ঢাকায় আন্দোলনে থাকায় মেরামত কার্যক্রমে ধীরগতি দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধীনে চারটি উপজেলায় ২৫টি খুঁটি ভেঙে ১৯টি ট্রান্সফরমার বিকল হয় এবং ১৫৫টি স্থানে তার ছিঁড়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চান্দিনা উপজেলায়। কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর আওতায় ৬টি উপজেলায় ৭টি খুঁটি ও ১৩টি ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, যেখানে ৪৩টি খুঁটি ও ১৮টি ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে পড়ে, এবং ১৮০টি স্থানে বিদ্যুৎ লাইন ছিঁড়ে যায়। সমিতি-৪ এর ৩টি উপজেলায় ৯টি খুঁটি ও ১২টি ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় ১৭৬টি স্থানে।
চান্দিনার শ্রীমন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, 'টানা দুই দিন বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখা যায়নি। ফ্রিজের খাবার পচে গেছে।'
এ বিষয়ে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মো. আবু রায়হান জানান, 'ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকেই আমাদের কর্মীরা মাঠে কাজ করছে। বর্তমানে সবগুলো লাইনই চালু রয়েছে, তবে শনিবার আবার ঝড়ো বাতাসে কিছু জায়গায় সমস্যা হয়েছে, যা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে।'
আন্দোলনের কারণে লাইনম্যানদের সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমরা বাইরের লোক নিয়োগ দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, যেন কাজ থেমে না থাকে।'
বিডি প্রতিদিন/মুসা