টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের স্বল্পমহেড়া-জামুর্কী দুই কিলোমিটার সড়কের জন্য দুর্ভোগ পোহাচ্ছে তিন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। সামান্য বৃষ্টিতে এ রাস্তা জলাবদ্ধতায় হাঁটুসমান কাদা হয়। এ কারণে বর্ষা মৌসুমে এই অঞ্চলে মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যায় কয়েক গুণ। বিশেষ করে কোমলমতি শিক্ষার্থী, অসুস্থদের হাসপাতালে নিতে ও কৃষি পণ্য শহরে নিতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে এ এলাকার মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, বাসাইল, দেলদুয়ার ও মির্জাপুর উপজেলার বাসিন্দারা এ সড়ক দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও জামুর্কী হাটে যাতায়াত করে থাকেন। কড়াইল, ভাতকুড়া, ছাওয়ালি মহেড়া, আদাবাড়ি, জামুর্কী, গোড়ান, সাঁটিয়াচড়া, গনুটিয়া, ধল্লা, বানিয়ারা গ্রামের হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতে এ সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বেহাল এ সড়ক দিয়ে অসুস্থদের হাসপাতালে নিতে পড়তে হয় দুর্ভোগে। একই কারণে আর্থসামাজিক উন্নয়নেও পিছিয়ে পড়েছে এ এলাকা।
বয়োজ্যেষ্ঠরা জানান, ব্রিটিশ শাসনামলের আগে সড়কটি নির্মাণ হলেও কখনই উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। মির্জাপুরে ১৮৯০-এ নির্মিত মহেড়া জমিদার বাড়িতে ১৯৭২ সালে আঞ্চলিক পুলিশ প্রশিক্ষণ স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়, যা বর্তমানে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার (পিটিসি) নামে পরিচিত। জেলার মির্জাপুর, বাসাইল ও দেলদুয়ার উপজেলা থেকে পিটিসিতে যাতায়াতে একমাত্র পথ এ সড়ক। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক নেতারা শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়েছেন, উন্নয়নে কাজ করেনি কেউ, অভিযোগ এলাকাবাসীর। মহেড়া জমিদারবাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য, যা এখন পিকনিক স্পট। এ সড়কের বেহাল দশার কারণে স্থানীয় ও দর্শনার্থীরা প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে ওই পিকনিক স্পটে আসা-যাওয়া করতে বাধ্য হয়। এ ছাড়া স্বল্পমহেড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাফিজিয়া মাদরাসা, ইবতেদায়ি মাদরাসা, গবড়া গ্রামবাংলা টেকনিক্যাল কলেজ, মহেড়া আনন্দ উচ্চবিদ্যালয়, ছাওয়ালি ভাতকুড়া আছম বেগম কুণ্ডেশ্বরী বালিকা বিদ্যালয়, জামুর্কী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জামুর্কী নবাব স্যার আবদুল গণি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়, ডুবাইল জাগরণী সমাজকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডুবাইল হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা রয়েছে এ সড়ক-সংলগ্ন স্থানে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। পথচারী আবদুর রশিদ বলেন, এ রাস্তা দিয়ে চলাচলে বেশি সমস্যা হয় বৃষ্টির সময়। মানুষের সাহায্য ছাড়া এ রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় না। বাপ-দাদার আমল থেকে দেখে আসছেন এ রাস্তা। স্কুলছাত্র রাতুল, আরেফিন, রত্না আক্তার ও সেলিনা আক্তার জানান, আমাদের স্কুলেই প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ ছাত্রছাত্রী। আরও স্কুল-মাদরাসা আছে। বেশি কষ্ট হয় বৃষ্টি ও বর্ষার সময়। অন্য সড়ক দিয়ে পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়, তখন আমরা স্কুলে সময়মতো পৌঁছাতে পারি না। জামুর্কী নবাব স্যার আবদুল গণি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাদেক আলী মিয়া বলেন, জন্ম থেকে দেখছি এ রাস্তা, কোনো উন্নয়ন নেই। আশপাশের গ্রামসহ তিন থানার লোক এ রাস্তায় চলাচল করে। শিশুদের লেখাপড়া, কৃষিকাজ, ফসল আনা-নেওয়া, গ্রাম থেকে শহরে যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
টাঙ্গাইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, মির্জাপুর উপজেলার স্বল্পমহেড়া-জামুর্কী সড়কের দুই কিলোমিটার কাঁচা অংশ এলজিইডির আইডিভুক্ত করা হয়েছে। ডিপিবি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আশা করা যায়, খুব দ্রুতই ডিপিবি প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তাটি পাকাকরণের কাজ বাস্তবায়ন হবে।