দীর্ঘ দিন ধরে ঝুলে আছে সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ। এতে তিন উপজেলার মানুষের আশা পরিণত হয়েছে হতাশায়। ভোগান্তি নিয়ে নৌকায় নদী পারাপার হচ্ছেন মানুষ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে যাদুকাটার ওপর সেতু নির্মাণ শুরু করে এলজিইডি। পল্লি সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৭৫০ মিটার দীর্ঘ এ সেতুর চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছিল ৮৫ কোটি টাকা। কাজ পায় ‘তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সাত বছরের মাথায় এসে ৩০ ভাগ কাজ বাকি রেখে সম্প্রতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতি প্রশ্রয়ে শুরু থেকেই ঢিমেতালে কাজ করায় নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে যাতায়াত ভোগান্তি দূর হয়নি এই অঞ্চলের মানুষের। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ম্যানেজার মিয়া মোহাম্মদ নাসির বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে প্রতিষ্ঠানের অবস্থা ভালো না। কর্মচারীরা ঠিকমতো বেতন-ভাতা পান না। তারপরও আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করে দেওয়ার টার্গেট নিয়ে আমরা এগোচ্ছি।’
সেতুর পাশর্^বর্তী লাউড়েরগড় গ্রামের আবদুল হালিম বলেন, কাজ শুরুর পর থেকে দেখে আসছি, এই কাজ করা হয়, এই বন্ধ রাখা হয়। এভাবে সাত বছর পার করেও কাজ সমাপ্ত করা হয়নি। এই সেতু ঘিরে আমাদের মাঝে যে প্রত্যাশা, তা পূরণ হয়নি। স্থানীয়রা জানান, সেতুটি হলে জেলার তাহিরপুর, মধ্যনগর ও ধর্মাপাশা উপজেলার মানুষের সদরের সঙ্গে যাতায়াত সহজ হবে। পর্যটন এলাকা টাঙ্গুয়ার হাওড়, নীলাদ্রি লেক, বারেকের টিলা ও শিমুল বাগানেও সহজে যেতে পারবেন ভ্রমণপিপাসুরা। পাশাপাশি বাগলি, চারাগাঁও ও বড়ছড়া শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি করা কয়লা এবং চুনাপথর সহজে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা যাবে।
তাহিরপুুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হক বলেন, যাদুকাটা নদীর ওপর সেতুর দাবি বহু দিনের। এটি নির্মাণ হলে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পর্যটট বিকাশ ত্বরান্বিত হবে। আমাদের দাবি, কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুততার সঙ্গে সেতুর বাকি কাজ সমাপ্ত করে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।
সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, চুক্তি বাতিলের পর দ্রুত কাজ সমাপ্ত করে দেওয়ার জন্য প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে মৌখিকভাবে অঙ্গীকার করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর ভিত্তিতে আবার শুরু হয়েছে কাজ। অগ্রগতি সন্তোষজনক হলে চুক্তি পুনর্বহালের চিন্তা করবেন কর্তৃপক্ষ।
তিনি আরও বলেন, চূড়ান্তভাবে চুক্তি বাতিল হলে বাকি কাজের মূল্যের ওপর শতকরা ১০ ভাগ জরিমানা দেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করে বাকি কাজ সমাপ্ত করা হবে।