গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাঁচপীর বাজার-কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা সদর সড়কে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ ‘মওলানা ভাসানী সেতু’ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামকে সংযোগকারী এ সেতু চালু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, উন্নয়নের দ্বার খুলবে উত্তরাঞ্চলের, বলছেন স্থানীয়রা। আজ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সেতুটি উদ্বোধন করবেন। স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, সেতুটির মাধ্যমে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে স্বল্প সময় ও খরচে শিল্প ও কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন এবং ছোট ও মাঝারি কলকারখানা প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া নদীর উভয় তীরের সংযোগসহ উন্নত রোড নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার ফলে ওই অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রসার ঘটবে। এলাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং স্থানীয় আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নসহ জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। পর্যটনের সুযোগ সৃষ্টিসহ একটি নতুন পরিবহন করিডর গড়ে ওঠায় রাজধানী ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানের সঙ্গে ভুরুঙ্গামারী স্থলবন্দরসহ কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে ১৩৫ কিলোমিটার। এতে সময় সাশ্রয় হবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা।’
পাঁচপীরের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক হাসান আলী বলেন, তিস্তা সেতু গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের মানুষের জীবন উন্নয়নের এক মাইলফলক। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের চন্ডীপুর ইউনিয়নের ছিচা বাজারের বাসিন্দা শিখন আহমেদ শামিম বলেন, সেতুটি দীর্ঘ দিনের আন্দোলনের ফল। এ সেতু চালু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্বার খুলে যাবে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে দূরপাল্লার কোনো গাড়ি যাতায়াত করে না। সেতুটি চালু হলে অসংখ্য গাড়ি যাতায়াত করবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে এলাকার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে।
গাইবান্ধা জেলা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মাকসুদার রহমান বলেন, ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক থেকে গাইবান্ধা শহর ২১ কিলোমিটার দূরে। এখানকার ব্যবসাবাণিজ্য প্রসার হয়নি। তিস্তা সেতু ও সংযোগ সড়ক চালু হলে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম জেলার মানুষ গাইবান্ধা শহর দিয়ে ঢাকায় যাতায়াতের সুযোগ পাবেন। এতে ব্যবসাবাণিজ্যসহ সব খাতে উন্নয়ন হবে।
গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, দেশে এলজিইডির সবচেয়ে বড় প্রকল্প এই সেতু। সেতু চালুর পর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে, নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে, চরাঞ্চলের কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবেন। দুই জেলার মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে।
এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা নদীর ওপর ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯২৫ কোটি টাকা। এটি একটি প্রি-স্ট্রেসড কংক্রিট গার্ডার সেতু।