লালমনিরহাটে কয়েক বছর ধরে কোরবানির পশু উৎপাদন হয় চাহিদার চেয়ে বেশি। উদ্বৃত্ত এসব পশুর মূল ক্রেতা ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ক্রেতারা। তবে আগের বছরগুলোতে বেশি হাসিল আদায়, দালালের দৌরাত্ম্যের কারণে এবার পাইকার বা পশু ক্রেতাদেরই দেখা মিলছে না হাটগুলোতে। দালালের কারণে সাধারণ ক্রেতাদের মাঝেও দেখা গেছে হাটবিমুখতা। এ কারণে জমেনি জেলার বেশির ভাগ হাট। বাইরে থেকে পাইকার না আসায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন লালমনিরহাটের খামারিরা। খামারি মজলুম প্রামাণিক বলেন, ঈদের আর বেশি সময় নেই। এখন পর্যন্ত গরু বিক্রি করতে পেরেছি মাত্র ৫৫টি। খামারে এখনো গরু রয়েছে ২৬৫টি। পাইকার না আসায় বড় বিপদে রয়েছি। গোখাদ্যের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় খরচও প্রতিদিন বাড়তি হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, এ বছর লালমনিরহাটে কোরবানির পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৭৫২টি। খামার ও বাসাবাড়িতে রয়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৩১২টি। সেই হিসাবে উদ্বৃত্ত পশু ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৬১টি। জেলার অন্যতম শিয়ালখোওয়া পশুর হাটের ইজারাদার হিরু বলেন, আগের বছরগুলোতে কোরবানি ঈদের ১৫ থেকে ২০ দিন আগে লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের প্রায় দেড় হাজার হাটে ২৫ লাখের বেশি গরু বিক্রি হতো। যার ৮০ ভাগ ক্রেতাই ছিলেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল থেকে আসা ব্যবসায়ী। এবার তাদের দেখা তেমন মিলছে না। জেলার প্রধান পশুর হাটগুলোর মধ্যে একটি সদরে বড়বাড়ি হাট। সোমবার এ হাট ঘুরে হাতেগোনা দু-একজন পাইকারের দেখা মিললেও বিকিকিনি নেই বললেই চলে। অন্যবার বাইরের পাইকারদের পাশাপাশি স্থানীয় ক্রেতার ভিড় দেখা গেলেও এবার তা চোখে পড়েনি। ঢাকা থেকে আসা পাইকার নিজামউদ্দিন ও বাদশা মিয়া জানান, আগের বছরগুলোতে হাসিলের নামে হাট ইজারাদারের লোকজনের বেশি টাকা আদায় ও দালালদের উৎপাতের কারণে অনেক পাইকার আগ্রহ হারিয়েছেন। এ বছর হাসিলের বিষয়টি শুরু না হলেও দালালদের অসহনীয় উৎপাত রয়েছে। পরিবহন খরচও অনেক বেড়েছে। সবমিলিয়ে বাইরের পাইকার কমেছে। হাটের ইজারাদার লিমন বলেন, সোমবার এখানে গরু উঠেছে ৫ হাজারের মতো। বিক্রি হয়েছে মাত্র ৬৫০টি। অথচ আগের বছরগুলোতে ঈদের ১৫ থেকে ২০ দিন আগে প্রতি হাটে হাজারের বেশি গরু বিক্রি হয়েছে। তখন ৫০টির বেশি ট্রাকে দেশের বিভিন্ন স্থানে গরু গেলেও এই হাটে গেছে মাত্র দুই ট্রাক। দুরাকুটি হাটে গরু নিয়ে আসা ওসমান আলী বলেন, ‘লোকজন খালি দাম পুছ (জিজ্ঞেস) করে, আর যায়। কায়ও সাহস করি দাম করে না, কেনেও না।’ চাপারহাটে পশুর হাটে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। গরু বিক্রেতা হেলাল হক জানান, তার গরুর দাম দেড় লাখ টাকা হবে। কিন্তু বেলা ১টা পর্যন্ত কেউ দামই করেনি।