বাংলাদেশের আন্তব্যাংক স্বল্পমেয়াদি ঋণ বাজার বা কলমানি মার্কেটে লেনদেনের গতি হঠাৎ কমে এসেছে। জুন মাসে ব্যাংকগুলো তাদের অতিরিক্ত অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিভার্স রেপো নামে পরিচিত স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটিতে (এসডিএফ) রাখার প্রবণতা বাড়িয়েছে, যার ফলে কলমানি বাজারে তারল্যের সরবরাহে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুন মাসে কলমানি মার্কেটে মোট লেনদেন হয়েছে ৮৮,৭৯০.২৪ কোটি টাকা, যা মে মাসের তুলনায় ১৪.৬১ শতাংশ কম। অন্যদিকে, একই সময়ে ব্যাংকগুলোর এসডিএফ ব্যবহারের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২,৭৩০ কোটি টাকা যা মে মাসের তুলনায় ১৫৭.৭১ শতাংশ বেশি। মে মাসে এ পরিমাণ ছিল ২৮,২২২ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কলমানি মার্কেটে গড় সুদের হার জুনে ১০.৩২ শতাংশ থাকা সত্ত্বেও, মাত্র ৮.৫০ শতাংশ সুদে এসডিএফে অর্থ রাখা ব্যাংকগুলোর জন্য অবাক করার মতো। তাদের মতে, এটি বোঝায় যে ব্যাংকগুলো এখন মুনাফার চেয়ে নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রক স্বাচ্ছন্দ্যকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ব্যাংকাররা জানান, খেলাপি ঋণের হার বৃদ্ধির আশঙ্কা, করপোরেট গভার্ন্যান্সজনিত সমস্যা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নজরদারির ফলে এক ব্যাংকের প্রতি অন্য ব্যাংকের আস্থা কমে গেছে। ফলে অনেক ব্যাংক এখন এমনকি রাতারাতি ঋণ দিতেও অনীহা প্রকাশ করছে। এর ফলে তারা অতিরিক্ত অর্থ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখছে, যেখানে ক্ষতির ঝুঁকি নেই বললেই চলে।
এসডিএফ ব্যবস্থাটি মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের সুদহার করিডর কাঠামোর অধীনে পরিচালিত একটি নীতিগত ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ এক রাতের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে পারে। যদিও এতে রিটার্ন কম, তবে বিনিয়োগ নিরাপদ এবং নিয়ন্ত্রক নিশ্চয়তা থাকে। ব্যাংকারদের ভাষ্যমতে, আগে কলমানি মার্কেটে সক্রিয় থাকা বড় বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও এখন এ বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
অন্যদিকে, কিছু তারল্য সংকটে ভোগা ব্যাংক ১০.৫০ শতাংশ পর্যন্ত সুদের প্রস্তাব দেওয়ার পরেও অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ পাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তাদের স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে, যার সুদহার আরও বেশি ১১.৫০ শতাংশ। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, যদি এ আস্থা সংকট ও নিয়ন্ত্রক চাপ অব্যাহত থাকে, তাহলে কলমানি বাজার কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে যা সমগ্র আর্থিক ব্যবস্থার তারল্য পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। উল্লেখযোগ্যভাবে, বাংলাদেশ ব্যাংক জুলাইয়ের শুরুতে এসডিএফের হার আরও কমিয়ে ৮.০০ শতাংশ করেছে, যা বোঝায় যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন বাজারে ঋণ কার্যক্রম বাড়াতে উৎসাহ দিচ্ছে এবং ব্যবস্থার অতিরিক্ত স্থবিরতার বিষয়টি অনুধাবন করছে।