কারও দগ্ধ শরীরে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া ইউনিফর্মের অংশ লেপ্টে আছে। কারও পুরো শরীর আগুনে পোড়া, শুধু পায়ে স্কুলের জুতা। পোড়া দেহ নিয়ে এভাবেই হেঁটে হেঁটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের হতে থাকে শিশুরা। উত্তরার দিয়াবাড়ী মাইলস্টোন কলেজের চিত্র এটি। গতকাল দুপুরে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে বিধ্বস্ত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকট শব্দের পর মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির একটি দোতলা ভবনে। রুমের ভিতরে থাকা ছাত্র-শিক্ষকদের বুঝে ওঠার আগেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই ঝলসে যায় অনেকের শরীর। পোড়া শরীর নিয়ে বের হতে থাকে দগ্ধ শিশুরা। দুর্ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনী একযোগে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। এ সময় স্ট্রেচার না পেয়ে একাধিক দগ্ধ শিশুকে কোলে তুলে উদ্ধার করতে দেখা যায় সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাইলস্টোন স্কুলের একটি ভবনের সামনে প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। প্রজেক্ট-২ নামে ওই ভবনটি দোতলা। ওই ভবনে দুটি তলা মিলিয়ে মোট ১৬টি ক্লাসরুম ও চারটি শিক্ষকদের রুম রয়েছে।
স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানান, যে ভবনটির সামনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয় সেখানে প্রাথমিক পর্যায়ের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস হতো। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শ্রেণিকক্ষের সামনে বিমানটি আছড়ে পড়ে। বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার কিছুক্ষণ আগেই প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের ছুটি হয়ে যায়। তবে তখনও ভবনে কিছু শিক্ষার্থী ছিল। এ ছাড়া প্রাথমিক স্কুল ছুটির পর ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ওই ভবনে কোচিং করত।
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর ভয়াবহ আগুন থেকে বেঁচে ফেরা একজন আহত শিক্ষক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনাটি এতটাই আকস্মিক ছিল যে, কারওরই কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোর সুযোগ ছিল না।’ তিনি বলেন, ‘আমার হাত পুড়ে গিয়েছে। মুখ ও কান ঝলসে গেছে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল।’ ওই শিক্ষক জানান, স্কুল ছুটির সময় শিক্ষার্থীরা গেটে অপেক্ষা করছিল। ঠিক এ সময়েই বিমানটি ভবনের সামনে আছড়ে পড়ে। কী ঘটছে, তা বোঝার আগেই চারপাশে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, আমার হাত, মুখ ও কান ঝলসে গেছে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। এ সময় দ্রুত ওয়াশরুমে গিয়ে একটি ভেজা কাপড় নিয়ে এসে নিজের নাক-মুখ ঢাকি। কাছে থাকা বাচ্চাদেরও আমি একই কাজ করতে বলি। তাদের অনেকের শার্টে ততক্ষণে আগুন ধরে যায়। আমি তাদের নিচু হয়ে থাকতে এবং মুখ ঢাকতে বলি।