ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর থেকে মেঘনা টোলপ্লাজা পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার অংশে প্রতিনিয়ত হচ্ছে ডাকাতি-ছিনতাই। রাত হলেই এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকদের পড়তে হচ্ছে ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের কবলে। গত ৭ মাসে এখানে অনেক ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি প্রাণও দিতে হয়েছে। তাই এবারের ঈদযাত্রা নিয়ে যানবাহন চালকরা বেশ আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন ৩০ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করে। বছরের দুই ঈদ কেন্দ্র করে এ মহাসড়কে পরিবহনের চাপ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। আর এ সময়ে ছিনতাইকারী ও ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নেয়। জানা যায়, গত ৭ মাসে মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে মেঘনা টোলপ্লাজা পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার অংশে ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি ডাকাতিতে মানুষের মনে ভীতি তৈরি হয়েছে। এ কারণে ওই অংশকে ডাকাতদের হটস্পট হিসেবে গণ্য করেছেন পরিবহন চালকরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া অংশে ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর রাতে সাংগঠনিক কাজে ঢাকা থেকে বান্দরবানের লামায় যাওয়ার পথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের মাইক্রোবাস আটকে দেয় একদল ছিনতাইকারী। ওই সময় সমন্বয়কদের ওপর আঘাত করে মোবাইল, মানিব্যাগসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি আবু হানিফ ও রাজিব ভূঁইয়া নামে দুই প্রবাসী ঢাকা থেকে কুমিল্লা যাওয়ার পথে মহাসড়কের বন্দর এলাকার কেওঢালা এলাকায় ডাকাতদের কবলে পড়েন। তাদের অর্থসহ সব কিছু লুট করে নিয়ে যায় ডাকাত দল।
২৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে মহাসড়কের সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়নের আষাড়িয়ারচর এলাকার সাধু পেপার মিলের সামনে সিরাজুল ইসলাম নামে এক কুয়েত প্রবাসী ডাকাতির শিকার হন। সেই রাতে ভুক্তভোগীকে বহনকারী গাড়িতে হামলা চালিয়ে পাসপোর্টসহ প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতকারীরা। ১৫ মার্চ দুপুরে মহাসড়কের সোনারগাঁয়ের দড়িকান্দি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ‘দিবা এন্টারপ্রাইজ’ নামক একটি বেসরকারি কোম্পানির ম্যানেজারের মাইক্রোবাসের গতিরোধ করে ফিল্মি স্টাইলে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে এ বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হাইওয়েতে ডাকাতির ছয়টি মামলা হয়েছে।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি কাজী ওয়াহিদ মোরশেদ জানান, ঈদযাত্রায় যাত্রীদের নিরাপত্তায় টহল টিম বাড়িয়ে দিয়েছি। মহাসড়কে যে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে সর্বদা সতর্ক আছি। আমাদের টহল টিম আরও বাড়বে। আশা করি কোনো ভোগান্তি হবে না।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসিফ ইমাম বলেন, ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষ যেন স্বস্তি ও নিরাপদে বাড়ি যেতে পারে সেজন্য পাঁচটি টহল টিম দেওয়া হয়েছে। আরও টহল টিম বাড়ানো হবে। মহাসড়কে ডাকাতি-ছিনতাই রোধে আমরা বাড়তি সিসি টিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করেছি। মহাসড়কজুড়ে ঈদের আগে ও পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে।