লালমিনরহাটে পাঁচ বছরে তামাক চাষ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এতে জমির উর্বরতা, পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও মাটির গুণাগুণে গুরুতর ক্ষতি হয়। বিষয়টি জেনেও কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না তামাকের আগ্রাসন। সচেতন কৃষকরা বলছেন, কৃষি বিভাগের উদাসীনতা, উৎপাদনের আগে কোম্পানির তামাকের দর নির্ধারণ, বিক্রয়ের নিশ্চয়তা, সুদমুক্ত ঋণ, কোম্পানির প্রতিনিধিদের নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন, পরামর্শ ও প্রতিবছর দাম বৃদ্ধির কারণে তামাক চাষে ঝুঁকছেন এ অঞ্চলের কৃষক। এর প্রভাবে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ জেলার মানুষ। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭ হাজার ৪০০ হেক্টর, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ হাজার ৫৫০ হেক্টর, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭ হাজার ৪৪০ হেক্টর, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯ হাজার ৮৬৫ হেক্টর ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৫ হাজার ৫৭ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় এবার প্রায় দ্বিগুণ তামাক চাষ হয়েছে।
জানা গেছে, দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের ৮০ ভাগ মানুষ কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। বিগত বছরগুলোয় এ জেলায় ধান, গম, সরিষা, ভুট্টা, আলু, আখ, বেগুন, লাউ, শিম, মুলা ও কপিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি ব্যাপকভাবে উৎপাদন হতো। কিন্তু সবজি চাষে টানা কয়েক বছর লোকসান গুনে কৃষকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। সরকারের কৃষি বিভাগের প্রয়োজনীয় পরামর্শ না পেয়ে সবজি চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কৃষকরা। ফলে জেলা সদরের তিস্তা থেকে বুড়িমারী পর্যন্ত তামাক আবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। কৃষি বিভাগের দায়িত্বে অবহেলার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো চালিয়ে যাচ্ছে কার্যক্রম। কৃষকদের তামাক চাষের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণসহ বিনামূল্যে বীজ, সহজ শর্তে ঋণ, সার, কীটনাশক ও নগদ অর্থ দিচ্ছে তারা। প্রতিবছর লোভনীয় অফারসহ তামাকের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নে চরাঞ্চলের তামাক চাষি বাহার উদ্দিন ও আবদুর রহমান জানান, তামাক কোম্পানিগুলোর নিয়োগ করা সুপারভাইজাররা প্রতিনিয়ত মাঠে গিয়ে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন। বাজারে তামাকের যথেষ্ট চাহিদা। বিক্রি করতে ঝামেলা হয় না কৃষকদের। কৃষকদের সুবিধার জন্য কোম্পানিগুলো এ জেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তুলেছে বড় বড় ক্রয় কেন্দ্র ও গোডাউন। তামাক খেতে কাজ করছে মা-শিশু, বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। তামাক চাষের কারণে পরিবারের সদস্য সবসময় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে। লালমনিরহাট সিভিল সার্জন নির্মলেন্দু রায় সাংবাদিকদের বলেন, তামাক চাষ ও সেবন মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তামাক পাতার বিড়ি, সিগারেট, গুল, খইনি ও জর্দাসহ নানান ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করায় বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, স্ট্রোক, চর্ম, যৌন, ক্যান্সারসহ নানা রোগ। তামাক চাষের কারণে কৃষকদের পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন মা ও শিশুসহ সাধারণ মানুষ। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, কৃষি জমি এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য তামাক চাষ মারাত্মক ক্ষতিকর। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সভা সেমিনার ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহ করা হচ্ছে।