এমএফএস সেবা বিকাশে টোল পরিশোধ করে এখন যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার নিমেষেই পার হচ্ছে বাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহন। রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে পেমেন্ট সল্যুশন সহজ করেছে নাগরিকদের প্রতিদিনের যাতায়াত।
দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা, ভাঙতি টাকার ঝামেলা আর হর্নের শব্দ যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভারে টোল প্লাজাগুলোয় প্রতিদিনের চিত্র। এই ঝামেলা দূর করতে দৈনন্দিন যাত্রাকে নিরবচ্ছিন্ন করছে আরএফআইডি প্রযুক্তি। ফ্লাইওভারে আরএফআইডি লেনে গাড়ি না থামিয়ে সরাসরি ব্যবহারের ফলে অফিসগামী, শিক্ষার্থী ও জরুরি সেবার গাড়িগুলোর অনেক সময় বাঁচিয়ে দিচ্ছে। শুধু সময় বাঁচানো নয়, বরং পরিবহন ব্যবস্থায় যাত্রীদের আস্থা বাড়াতে ভূমিকা রাখছে এই পদ্ধতি।
যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভারে আরএফআইডি সেবার পুরো সমাধান দিচ্ছে বিকাশ। গাড়ি উইনশিল্ডে লাগানো আরএফআইডি স্টিকারটি টোল পয়েন্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ক্যান হয়ে যায়। ফলে গাড়িগুলো না থেমেই টোল পয়েন্ট অতিক্রম করতে পারে। ‘আরএফআইডি’ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল আদায় হয়ে যাচ্ছে বিকাশ কিংবা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, ম্যানুয়ালি অর্থাৎ হাতে টাকা নিয়ে টোল আদায় করলে ঘণ্টায় বড়জোর ৩০০ থেকে ৪০০ গাড়ি পারাপার করা সম্ভব। আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল আদায় করলে এর চার গুণ বেশি যান পারাপার করা যায়। এতে যানজট কমানোর পাশাপাশি সেতু ও সড়কের পুরোপুরি সক্ষমতা ব্যবহার সম্ভব।
ফ্লাইওভার ব্যবহার করে নিয়মিত আসা-যাওয়া করা ব্যবহারকারীরা ইতোমধ্যে রেজিস্ট্রেশন করে আরএফআইডি স্টিকার নিয়েছেন। তারা বিকাশে টোল পরিশোধ করে যাতায়াত করছেন নির্বিঘ্নে। ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জগামী গণপরিবহনের চালক নিয়ামত আলী ডিজিটাল টোল পেমেন্ট ব্যবস্থাকে ‘ভিআইপি ব্যবস্থা’ মনে করেন।
তাঁর মতে, ‘আগে টোল প্লাজায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো, ক্যাশ টাকায় টোল দিতে হতো। এখন বিকাশ থেকে টোল সরাসরি কেটে নেয়। না থেমেই সরাসরি আসি, সরাসরি যাই। নিজেরে ভিআইপি মনে হয়।’
উন্নত দেশের ব্যবহারকারীদের সঙ্গে তুলনা করে নিজস্ব কার ব্যবহারকারী কবির আহমেদ বলেন, আরএফআইডির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, দিন-রাত যে কোনো সময় নিশ্চিন্তে ফ্লাইওভার ব্যবহার করা যায়। শুধু যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভারই নয়, তিনি দেশের সব টোল সংগ্রহ ডিজিটাল করার আহ্বান জানান।
‘ভাঙতি নিয়ে ঝামেলা করতে হয় না। আমার জন্য এটাই বড় সুবিধা। তাছাড়া, আমার বাসা নারায়ণগঞ্জ হওয়ায় প্রতিদিন আসা-যাওয়া করতে সহজ হয়। বিকাশ থেকেই সব হয়ে যায়’, জানালেন প্রাইভেটকার চালক মো. মানিক।
সবাইকে ক্যাশলেস লেনদেনের মাধ্যমে আরএফআইডি ব্যবহারে উৎসাহিত হতে আহ্বান জানিয়ে ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের হেড অব অপারেশন মো. নাইফ উদ্দিন খান বলেন, আরএফআইডি ব্যবহারের ফলে লাইন কমছে, গতি বাড়ছে। বিকাশ কিংবা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ফ্লাইওভারে আরএফআইডি টোল পেমেন্ট ব্যবহারকারীদের যেমন উপকার করছে, তেমনি আমাদের টোল ব্যবস্থাপনাকেও সহজ করছে।
শুধু বাস, ট্রাক, কারই নয়, মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীদের জন্য রয়েছে বিশেষ স্ক্যান সুবিধা। গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারে মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীরা বিকাশ অ্যাপ থেকে আরএফআইডি রেজিস্ট্রেশন করলে তাদের বাইকের জন্য স্ক্যান স্টিকার দেওয়া হয়। এই স্টিকারযুক্ত মোটরসাইকেল সহজেই স্ক্যান করে পেমেন্ট দিয়ে যাতায়াত করতে পারছে। বিকাশে রেজিস্ট্রেশন করে নিয়মিত স্ক্যান করে ডিজিটাল টোল দিয়ে যাতায়াত করেন আহমেদ জায়ান। তাঁর মতে, বিকাশ অ্যাপ থেকে টোল দিতে পারাটা খুবই সহজ সমাধান। বারবার দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে, খুচরা টাকা দিয়ে টোল দেওয়া খুবই অস্বস্তির। এখন স্ক্যান করে বিকাশ থেকে সরাসরি পেমেন্ট করে দেন তিনি।
বিকাশ অ্যাপ থেকে আরএফআইডি রেজিস্ট্রেশন:
যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভারের বিভিন্ন প্রান্তে বসানো বুথগুলোর পাশাপাশি বিকাশ অ্যাপের টোল আইকন থেকে ‘যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার’ সিলেক্ট করেও আরএফআইডি রেজিস্ট্রেশন করা যাচ্ছে। এখানে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ‘সাবমিট’ করলে গ্রাহকের মোবাইলে একটি ওটিপি চলে আসবে। ওটিপি বসিয়ে নিশ্চিত করলেই গ্রাহকের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়ে যাবে। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হওয়ার পর কাছের রেজিস্ট্রেশন বুথ থেকে আরএফআইডি স্টিকার সংগ্রহ করতে হবে। একই পদ্ধতিতে বিকাশ অ্যাপের টোল আইকন থেকে ‘যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার’ সিলেক্ট করে অ্যাড ট্রিপ অপশন থেকে পে উইথ বিকাশ নির্বাচন করে ট্রিপ সংখ্যা, বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বর, ভেরিফিকেশন কোড ও পিন দিয়ে টোল পরিশোধ সম্পন্ন করতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম