রাজধানীর চানখাঁরপুল মার্কেটটি ২০১৭ সালে নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। নিয়ম অনুযায়ী বরাদ্দপ্রাপ্তদের থেকে বর্গফুট প্রতি ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা নেয় সংস্থাটি। চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানান জটিলতায় ২০২১ সালে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে করপোরেশন। পরে দীর্ঘ সময়ের পর গত বছরের আগস্টে আবার কাজ শুরু হয়। তবে এবার নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার কারণ দেখিয়ে বর্গফুট প্রতি সাড়ে ৬ হাজার থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত টাকা দিতে দোকানিদের এরই মধ্যে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ না করার জরিমানা করপোরেশন বহন না করে দোকানিদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে চানখাঁরপুল মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ডিএসসিসি। নকশা অনুযায়ী ১২ তলা ভিত্তির ওপর ছয় তলা ভবন হবে। এখানে ৩৫৪টি দোকান ও ১৮টি ফোডর্কোট থাকবে। প্রতিটি দোকানের বর্গফুট প্রতি ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তখন মার্কেটটির নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছিল ২৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা (৬ তলা পর্যন্ত)। ওই সময় বরাদ্দ পাওয়া দোকানিদের কাছ থেকে সালামি বাবদ আদায় করা হয় ২১ কোটি ১৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এ টাকা কয়েক কিস্তিতে গ্রহীতাদের কাছ থেকে নেয় ডিএসসিসি। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ওই মার্কেট ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড’। কার্যাদেশ অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর এ মার্কেটের কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালের ১ অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু বেজমেন্টের কাজ করেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ১৩ কোটি টাকা বিল তুলে নেয়। এরপর হঠাৎ বাকি কাজ শেষ না করে চলে যায়। তাদের বারবার চিঠি দিলেও অজ্ঞাত কারণে তারা কাজটি করেনি। পরে সিটি করপোরেশন তাদের সম্পূর্ণ কাজের মূল্যায়ন করে দেনা-পাওনার হিসাব মেটায়। সবশেষ ২০২১ সালে ৮ জুন ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে সংস্থাটি। এরপর দীর্ঘ নানা অজুহাত দেখিয়ে তিন বছর বন্ধ থাকে নির্মাণকাজ। পরে ২০২৪ সালের আগস্টে চানখাঁরপুল মার্কেটের অবশিষ্ট নির্মাণকাজ শেষ করতে নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয় ডিএসসিসি। এখন তারা বেজমেন্টের ওপর থেকে নির্মাণকাজ শুরু করেছে। এদিকে ডিএসসিসি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে জরিমানা গুনতে হচ্ছে বরাদ্দ পাওয়া দোকানিদের। নতুন করে নির্মাণ ব্যয় বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে বর্গফুট প্রতি সাড়ে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা অর্থাৎ ১০ থেকে ১৩ লাখ টাকা দিতে দোকানিদের চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।
জানতে চাইলে বরাদ্দ পাওয়া মোহাম্মদ সোহেল নামে এক দোকানি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মার্কেট নির্মাণের শুরুতে আমাদের কাছ থেকে একটা অংশ টাকা নিয়েছে। এরপর মেয়র তাপসের সময় পুরো টাকা নিয়ে নিয়েছে। গত আট বছর সিটি করপোরেশনের কাছে আমাদের দেওয়া বিশাল অঙ্কের টাকা পড়ে আছে। যদি এখন আবার বলে টাকা তাহলে আমাদের প্রতি জুলুম ছাড়া আর কিছুই নয়। সিটি করপোরেশনের গাফিলতির কারণে এতদিন কাজ বন্ধ ছিল। এখন সেটার দায়বার আমাদের ওপর ছাপাচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির মার্কেট নির্মাণ সেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ঠিকাদারির গাফিলতির কারণে চানখাঁরপুল মার্কেট নির্মাণ বন্ধ ছিল। এখন আবার কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি, আগামী বছরের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে নতুন করে দোকানিদের কাছে টাকা চাওয়া হচ্ছে। তবে অবশ্য দোকানিদের জন্য চাপ হবে। কিন্তু বর্তমানে দোকানের ভেল্যু অনেক বেশি, তাই দোকানিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।