রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা বা পোষ্য কোটা ইস্যুতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের টানাপোড়েন শুধু আর ক্যাম্পাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সেটি ছড়িয়ে পড়েছে ক্যাম্পাসের বাইরের এলাকায়। এ সংকটকে বলা হচ্ছে ‘স্থানীয় চাপ’। তিন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার সঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। তা না হলে নিজেরাই ‘বিচার’ করার হুমকি দিচ্ছেন।
পোষ্য কোটা ইস্যুতে গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মাঈন উদ্দিন, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও ছাপাখানার ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম শিক্ষার্থীদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও রাকসু নির্বাচনের জিএস প্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার অনুসারীদের নিয়ে ওই তিনজনকে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে মাঠে নেমেছেন ক্যাম্পাসের আশপাশের বাসিন্দারা। গত সোমবার সকালে এই স্থানীয় ব্যক্তিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এবং মঙ্গলবার সকালে কাজলা গেটে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন। বিকালে সমাবেশ হয় বিনোদপুর বাজারে। মতিহারের সচেতন এলাকাবাসীর ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি সালাহউদ্দিন আম্মারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে স্থানীয়রাই তাকে প্রতিহত করবেন। তারা ‘বিচার’ নিজের হাতেই তুলে নেবেন। এ সময় বক্তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের উদাহরণও দেন। ওই সমাবেশে কাজলা কেডি ক্লাবের সভাপতি আবদুল কুদ্দুস ডলার, সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল বাবু, স্থানীয় বাসিন্দা মো. রানা, প্রকৌশলী আমজাদ আলীসহ অনেকে বক্তব্য দেন।
এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ১৫ সদস্যের একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব নিজেই এ কমিটির আহ্বায়ক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মকর্তারাও তো বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে থাকেন। অনেকে স্থানীয় বাসিন্দা। তাদের অনেক আত্মীয়স্বজন আছেন। ঝামেলা করে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ক্যাম্পাসে লাঞ্ছিত করলে একটি প্রভাব তো এলাকায় পড়বেই।’ স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনার কারণে আতঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে রাকসু নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার পর প্রচার-প্রচারণা একেবারে থেমে গেছে। গতকাল ক্যাম্পাসে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা চালাতে দেখা যায়নি। নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ায় এখন প্রচারণা চালানো যাবে কি না, তাও অনেক প্রার্থী জানেন না। রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মেহেদী হাসান মারুফ বলেন, ‘প্রচারণা চালানো যাবে কি না, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে আমরা স্পষ্ট কোনো বার্তা পাইনি। তবে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী কম, ছুটির আমেজ বিরাজ করছে। তাই প্রচার হচ্ছে না।’
আজ বৃহস্পতিবার রাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। সোমবার রাতে ভোটের তারিখ পিছিয়ে ১৬ অক্টোবর ঠিক করেছে নির্বাচন কমিশন।