ডাক বিভাগের উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং প্রযুক্তির সংযোজন সেবার মানোন্নয়নে সম্ভাবনা তৈরি করেছে। তবে কার্যকর রক্ষণাবেক্ষণ, দ্রুত স্থানান্তর এবং সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা না হলে, সরকারি বিনিয়োগের সঠিক ব্যবহার ব্যাহত হতে পারে। আগামী দিনে ডাক বিভাগ চিঠি ও পার্সেল পরিবহনব্যবস্থাকে আধুনিক ও জনবান্ধব করতে কতটা অগ্রসর হয়, তাই দেখার বিষয়।
বাংলাদেশ ডাক বিভাগ দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, যার মাধ্যমে সারা দেশে চিঠিপত্র, পার্সেল ও ডকুমেন্ট সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে দেশে মোট ৯,৮৮৬টি ডাকঘর রয়েছে, যার মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতে বিভাগীয় পর্যায়ের জিপিও এবং জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে প্রধান, উপ ও শাখা ডাকঘর অন্তর্ভুক্ত। এসব ডাকঘরে প্রায় ৪০ হাজার কর্মচারী নিয়োজিত আছেন, যারা ডাকসেবার বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
ডাক বিভাগের কার্যক্রম চারটি প্রধান ধাপে সম্পন্ন হয় : ইস্যু, সর্টিং, পরিবহন এবং বিলি। এর মধ্যে সর্টিং ধাপটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যা মেইল প্রসেসিং সেন্টার বা হাবগুলোতে পরিচালিত হয়। বর্তমানে দেশে ২৪টি এমপিসি রয়েছে, যার মধ্যে ১৪টি আধুনিক ডিজাইনে নির্মিত হয়েছে। এই সেন্টারগুলোতে ঢ-জধু মেশিন, ঋড়ৎশ খরভঃ, ইধৎপড়ফব ঝপধহহবৎ, ইধৎপড়ফব চৎরহঃবৎ, ঐধহফ ঞৎধপশবৎ, এবং বিভিন্ন প্রকার ট্রলিসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে। এতে ম্যানুয়াল কাজের চাপ কমেছে এবং সর্টিং প্রক্রিয়া দ্রুততর ও দক্ষ হয়েছে। তবে সব এমপিসিতে উন্নয়ন কাজ সমানভাবে অগ্রসর হয়নি। যেমন, তেজগাঁও এবং হবিগঞ্জ এমপিসিতে নির্মাণকাজ শেষ হলেও, অফিস স্থানান্তর কার্যক্রম সম্পন্ন হয়নি। এতে সরকারি বিনিয়োগের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয়নি এবং সেবার মানের উন্নয়নে সম্ভাবনা সীমিত রয়ে গেছে। গোপালগঞ্জ এমপিসিতে প্রতিদিন গড়ে ৮০টি ব্যাগ বন্ধন ও ৫০টি ব্যাগ গ্রহণের কাজ হয়, যা সেবার পরিমাণ ও চাহিদার একটি নির্দেশক। ডাক বিভাগে বর্তমানে ডোমেস্টিক মেইল মনিটরিং সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে ব্যাগ বন্ধন ও গ্রহণের তথ্য ডিজিটালি সংরক্ষণ করা হয়। এতে প্রেরক বা প্রাপক সহজেই ট্র্যাকিং করে জানতে পারে তার চিঠি, পার্সেল বা নথি কোথায় আছে। এ প্রযুক্তির ফলে সেবার স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এখনো একটি চ্যালেঞ্জ। এমপিসিগুলোতে ৪ ডিগ্রি থেকে +২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত চিলার চেম্বার স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে মাছ, মাংস, সবজি, ফলসহ পচনশীল পণ্য সংরক্ষণ এবং প্রেরণ করা সম্ভব। এ ছাড়া থার্মাল আইচ বক্স ব্যবহারের মাধ্যমে এই পণ্যগুলো ২৪ ঘণ্টা ভালো রাখা যায়, যা দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পণ্য পরিবহন সহজ করছে।
সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ডাক বিভাগের মেইল প্রসেসিং ফ্যাসিলিটি ও চিলার চেম্বারগুলো প্রাইভেট খাতের সঙ্গে পার্টনারশিপের মাধ্যমে ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছেন। এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সরকারি সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে এবং সেবার মান ও আয়ের পরিমাণ বাড়তে পারে।