অভিনেত্রী আফসানা মিমি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের চারটি নাটকে কাজ করেছেন। সেই চারটি কাজই মিমিকে এনে দেয় দর্শকপ্রিয়তা। সেই সঙ্গে অভিনেত্রীকে এক অনন্য অভিজ্ঞতার স্বাদ দিয়েছিল ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘সবুজ সাথী’, এবং ‘অদেখা ভুবন’ নামের নাটকগুলো। কালজয়ী নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’-এর বকুল চরিত্র দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের নাটকে মিমির কাজ শুরু। মিমি বলেন, ‘দর্শক হিসেবে আমি উনার প্রথম নাটক দেখি ‘এই সব দিনরাত্রি’, তারপরে দেখেছি ‘বহুব্রীহি’ ও ‘অয়োময়’। এরপর উনার সঙ্গে আমার কাজের সুযোগ হয়েছিল। উনার সঙ্গে আমি চারটা কাজ করেছি। উনি একজন মানুষ ছিলেন যিনি মানুষের হৃদয় ছুঁতে পারতেন।’ এ অভিনেত্রী দুঃখ করে বলেন, হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবির কাজ আমাকে ফিরিয়ে দিতে হয়েছিল। মিমি বলেন, প্রায় এক মাসের প্রস্তুতি নিয়ে শুটিংয়ে গিয়ে মাত্র তিন দিনেই ফিরে এসেছি। বাড়ি থেকে গোছগাছ করে এক মাসের প্রস্তুতি নিয়ে স্পটে গিয়েও ফিরে আসি। আর আমার ছেড়ে দেওয়া ‘শাহানা’ নামের চরিত্রটিতে অভিনয় করে দর্শক-সমালোচকদের আলোচনায় আসেন রুমানা ইসলাম মুক্তি। মিমির কথায়- কাজ শুরুর পর চরিত্রের সঙ্গে ‘সংযোগ হারিয়ে ফেলি, তৈরি হয় অনাগ্রহ। যখন সিনেমাটার কাজের প্রস্তাব আসে আমি তো খুব এক্সাইটেড। তবে সিনেমাটা করতে গিয়ে হুমায়ূন ভাইয়ের সঙ্গে আমার এক ধরনের সংকট তৈরি হয়। হুমায়ূন ভাই আমাকে যে চরিত্রের জন্য চেয়েছিলেন আমি শুটিংয়ে গিয়ে ওই চরিত্রটা নিয়ে অনাগ্রহী হয়ে পড়ি।’
‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমায় দুটি প্রধান নারী চরিত্র ছিল। একজন ডাক্তার শাহানা, দ্বিতীয়জন হলেন গ্রামের মেয়ে কুসুম। ডাক্তার শাহানা চরিত্রে নেওয়া হয়েছিল মিমিকে। কাজটি না করার কারণ হিসেবে মিমি বলেন, ‘এক দিন শুটিং করার পর আমি নিজের মধ্যে শাহানাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। হুমায়ূন ভাইকে গিয়ে বললাম, ‘আমি কাজটা করব না। আমার ইচ্ছা করছে না।’ হুমায়ূন আহমেদ খুব নম্রভাবেই তাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন বলে জানিয়ে মিমি বলেন, হুমায়ূন ভাই বললেন, ‘কেন আমায় বলো?’ আমি বললাম, ‘আমার ইচ্ছা করছে না। আমি একাত্ম হতে পারছি না। আপনি আমাকে ছুটি দিয়ে দেন।’ এরপর হুমায়ূন ভাই বললেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি যাও।’ তবে মিমিকে ফিরিয়ে আনতে হুমায়ূন আহমেদ তাকে চিরকুটও লিখে পাঠিয়েছিলেন। ‘উনি দুবার ছোট ছোট করে চিরকুট লিখে পাঠিয়েছিলেন, যেখানে কাজটিতে ফিরতে বলেছিলেন তিনি। তখন আমি সবিনয়ে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলি, আমি একাত্ম হতে পারছি না। আমার মনে হয়েছিল পার্শ্বচরিত্র হিসেবে এটা খুব গুরুত্ব পাবে না’। এরপর আর হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আমার কোনো কাজ হয়নি। মিমি বলেন, ‘আমি সে সময় জেনেবুঝেই কাজটি ছেড়ে এসেছি। তবে আমার নির্বুদ্ধিতা ছিল।’ সেটা কেমন? উত্তরে মিমি বলেন, ভালো একজন মানুষ, ভালো একজন লেখক এবং পরিচালকের সঙ্গে কাজ করা থেকে তিনি নিজেই নিজেকে বঞ্চিত করেছেন। ১৯৯৯ সালে মুক্তি পাওয়া এ সিনেমাটি সাতটি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়।