ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারী সীমান্তবর্তী মন্ডুমালা গ্রামে দাঁড়িয়ে আছে এক বিস্ময়কর আমগাছ। প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এই সূর্যপুরী জাতের আমগাছটি শুধুই একটি গাছ নয়, এটি এখন ইতিহাস, বিস্ময় আর পর্যটনকেন্দ্র।
দূর থেকে দেখলে গাছটিকে অনেকেই বিশাল আকৃতির বটগাছ মনে করেন। মূল কাণ্ড থেকে বের হওয়া শাখাগুলো কিছুটা ওপরে উঠেই আবার মাটিতে নেমে গিয়ে নতুন করে ওপরে উঠেছে- যেন নদীর ঢেউয়ের মতো উঁচু-নিচু। গাছটির উচ্চতা আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ ফুট, আর শাখাগুলোর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ থেকে ৫০ ফুট পর্যন্ত বিস্তৃত। এই শাখাগুলোতে অনায়াসে হাঁটাচলা বা বসাও সম্ভব।
গাছটি বিস্তৃত প্রায় ৭৩ শতক জমির ওপর। এবারে গাছটিতে ফলন হয়েছে প্রায় ১৫০ মণ। গাছের বর্তমান মালিক স্থানীয় বাসিন্দা দুই ভাই সাইদুর রহমান ও নূর ইসলাম। তাঁরা জানান, গত বছর ফলন কিছুটা কম ছিল, তবে এবার প্রচুর আম ধরেছে। ২০২৩ সালে এই গাছ থেকে প্রায় দুই লাখ টাকার আম বিক্রি হয়েছিল। এবারে ফলন বেশি হওয়ায় তাঁরা আরও বেশি বিক্রির আশা করছেন।
গাছের আমের চাহিদা রয়েছে বেশ। প্রতিদিন গড়ে ৩০ কেজিরও বেশি আম বিক্রি হচ্ছে এখান থেকে। বাজারে যেখানে প্রতি কেজি আম বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকায়, সেখানে এই গাছের আম বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১০০ টাকায়। দর্শনার্থীরা আমের স্বাদ নিতে উচ্চমূল্য দিয়েও কিনতে আগ্রহী। কেউ কেউ গাছের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, আবার কেউ নিচে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন।
গাছটি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষ। প্রবেশের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকার টিকিট। দর্শনার্থীরা জানান, এমন গাছ সম্পর্কে তারা অনেক গল্প শুনেছেন, এমনকি টেলিভিশনেও দেখেছেন, কিন্তু সামনে থেকে দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। আমের স্বাদও বেশ প্রশংসনীয়।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা জানান, সূর্যপুরী একটি জনপ্রিয় আমের জাত যা মূলত ঠাকুরগাঁওয়েই ভালোভাবে জন্মে। জেলার পরিচিতি বাড়াতে সূর্যপুরী আমকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই শতবর্ষী গাছ শুধু একটি বৃক্ষ নয়, এটি এখন ঠাকুরগাঁওয়ের একটি ঐতিহ্য ও পর্যটন আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ