রাজধানীর টঙ্গী থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ইতালিতে পাচারের সময় সাড়ে ছয় কেজি ভয়ঙ্কর মাদক কিটামিন জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)। এই মাদকদ্রব্য বিশেষ কায়দায় তোয়ালের ভেতরে দ্রবীভূত অবস্থায় রাখা ছিল। এ ঘটনায় চাঁদপুর ও ফরিদপুর থেকে দুজনকে গ্রেফতার সংস্থাটি।
রবিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিএনসি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মহাপরিচালক হাসান মারুফ এ তথ্য জানান।
কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাচারের চেষ্টা
ডিএনসি মহাপরিচালক জানান, দীর্ঘদিন ধরেই কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করে পাচার কার্যক্রম চালাচ্ছে আন্তর্জাতিক মাদক চক্র। এ বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারির অংশ হিসেবে টঙ্গীতে একটি কুরিয়ার সার্ভিসে অভিযান চালানো হয়। এরপর তাদেরই সহযোগিতায় ঢাকা থেকে ইতালাগামী একটি পার্সেল জব্দ করা হয়।
তিনি জানান, অস্বাভাবিক ওজন এবং সন্দেহজনক অবস্থার কারণে পার্সেলটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, একটি খাকি রংয়ের কার্টনের ভেতরে সাতটি সাদা তোয়ালে রাখা। ডিএনসির রাসায়নিক পরীক্ষক ঘটনাস্থলেই পরীক্ষা চালিয়ে তোয়ালের ভেতর থেকে দ্রবীভূত অবস্থায় ৬.৪৪ কেজি কিটামিন শনাক্ত করেন।
জব্দ করা পার্সেলের প্রেরকের ঠিকানা, সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে চাঁদপুরের মতলব উত্তর এলাকা থেকে প্রেরক মো. মাসুদুর রহমান জিলানীকে (২৮) গ্রেফতার করা হয়। পরে অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই চালান ফরিদপুরের মো. আরিফুর রহমান খোকার (৪৩) সহযোগিতায় বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা হচ্ছিল।
এরপর ডিএনসির একটি অভিযানিক দল ফরিদপুরের সালথা থানার আটঘর বাজার থেকে খোকাকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে দুটি অ্যান্ড্রয়েড ও একটি বাটন মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনিও কুরিয়ারের মাধ্যমে কিটামিন পাচারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
তোয়ালে দিয়ে পাচারের কৌশল
ডিএনসি জানিয়েছে, পাচারকারীরা কেমিক্যাল ইমপ্রেগনেশন পদ্ধতিতে তোয়ালে মাদকের দ্রবণে ভিজিয়ে শুকিয়ে ফেলে। এতে কাপড়টি দেখতে স্বাভাবিক মনে হলেও ভেতরে মাদক মিশে থাকে। পরে বিশেষ কেমিক্যাল বা ল্যাব প্রসেসের মাধ্যমে কাপড় থেকে মাদক আলাদা করা হয়।
কিটামিনের ভয়াবহতা
ডিএনসি জানিয়েছে, কিটামিন মূলত একটি ডিসোসিয়েটিভ অ্যানেস্থেটিক ওষুধ, যা একসময় অস্ত্রোপচারের আগে রোগীকে অজ্ঞান করার জন্য ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে এটি পার্টি ড্রাগ হিসেবে অপব্যবহার হচ্ছে। কিটামিন স্বল্পমেয়াদে বিভ্রান্তি, হ্যালুসিনেশন ও শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করে এবং দীর্ঘমেয়াদে কিডনি, মূত্রথলি ও মানসিক স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে। নিয়মিত সেবনে এটি জীবনহানির ঝুঁকি বাড়ায়।
আন্তর্জাতিক চক্রের সংশ্লিষ্টতা
ডিএনসি মহাপরিচালক হাসান মারুফ জানান, এই চক্রের সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তবে ঢাকায় তাদের কোনো সদস্য অবস্থান করে না। তারা মাদক সংগ্রহের পর প্রক্রিয়াজাত করে কুরিয়ারের মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। এবার যে চালানটি জব্দ হয়েছে, তার গন্তব্য ছিল ইতালি।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরও কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
ডিএনসি মহাপরিচালক বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মাদকপাচারের রুট কিনা, সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। তবে প্রতিটি দেশেই চাহিদার ভিত্তিতে মাদক প্রবেশ করে। ইয়াবার ক্ষেত্রেও আমাদের সীমান্ত এলাকায় বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
জনবল সংকটের কারণে গোয়েন্দা কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতা রয়েছে জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, সারা দেশে অপারেশন ও গোয়েন্দা কার্যক্রমে মাত্র ১ হাজার ৬২২ জন কাজ করছেন। সীমিত জনবল দিয়েই আমরা অভিযান চালাচ্ছি। গত ছয় মাসে আমাদের অভিযান সংখ্যা বেড়েছে।
মাদক থেকে দূরে রাখতে সন্তানদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান ডিএনসি মহাপরিচালক।
বিডি প্রতিদিন/কেএ