জাপানের যুবরাজ হিসাহিতো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাপ্তবয়স্কে পা রেখেছেন। চার দশকের মধ্যে তিনি রাজপরিবারের প্রথম পুরুষ সদস্য যিনি প্রাপ্তবয়স্ক হলেন। শনিবার তার প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় পরিবারের বাসভবনে। সেখানে সম্রাটের দূতের কাছ থেকে তিনি ঐতিহ্যবাহী ‘কানমুরি’ মুকুট গ্রহণ করেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি গতকাল রবিবার তাদের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯ বছর বয়সি হিসাহিতো সম্রাট নারুহিতোর ভাতিজা এবং জাপানের ক্রিস্যানথিমাম সিংহাসনের উত্তরাধিকার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। তার পর আর কোনো পুরুষ উত্তরসূরি না থাকায়, আবারও জোরালো হয়েছে উনবিংশ শতকের পুরুষকেন্দ্রিক উত্তরাধিকার আইনে সংস্কারের দাবি।
পরিবারের বাসভবনে আয়োজিত ‘কানমুরি’ মুকুট গ্রহণ অনুষ্ঠানে যুবরাজ বলেন, ‘‘আজকের এই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার অনুষ্ঠানে মুকুট দেওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। একজন প্রাপ্তবয়স্ক রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থেকে আমি আমার কর্তব্য পালন করব।’’
এরপর তিনি ইম্পেরিয়াল প্রাসাদে প্রাপ্তবয়স্কতার প্রতীক ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেন। পরে আনুষ্ঠানিক পোশাকে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে প্রাসাদের তিনটি পূজাস্থলে যান। এ ছাড়া তিনি ইসে মন্দির, জাপানের প্রথম সম্রাট জিম্মুর সমাধি এবং তার প্রপিতামহ সম্রাট শোওয়ার সমাধিতেও শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা ও অন্যান্য বিশিষ্টজনদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।
১৯৮৫ সালে যুবরাজ হিসাহিতোর বাবা ক্রাউন প্রিন্স আকিশিনোর পর এটিই কোনো জাপানি যুবরাজের প্রথম প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার অনুষ্ঠান।
২০০৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া হিসাহিতো ক্রাউন প্রিন্স আকিশিনো ও ক্রাউন প্রিন্সেস কিকোর একমাত্র পুত্র। বর্তমানে তিনি সুকুবা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। জীববিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছেন এবং বিশেষভাবে পোকামাকড়, বিশেষত ফড়িং নিয়ে গবেষণায় আগ্রহী। ইতোমধ্যে টোকিওর আকাসাকা প্রাসাদের পোকামাকড় নিয়ে একটি গবেষণাপত্রে সহলেখক হিসেবেও তার নাম রয়েছে। তিনি নগর এলাকায় পোকামাকড়ের প্রজাতি রক্ষায় কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
হিসাহিতোর দুই বড় বোন আছেন— প্রিন্সেস কাকো এবং প্রাক্তন প্রিন্সেস মাকো। তবে মাকো সাধারণ নাগরিককে বিয়ে করার পর রাজপরিবারের মর্যাদা হারিয়েছেন।
অন্যদিকে সম্রাট নারুহিতোর একমাত্র কন্যা ২৩ বছর বয়সি প্রিন্সেস আইকো বর্তমান আইনের কারণে সিংহাসনের উত্তরাধিকার তালিকায় নেই। ১৯৪৭ সালের ইম্পেরিয়াল হাউস আইন অনুসারে কেবল পুরুষরাই সিংহাসনে বসতে পারেন।
বর্তমানে সম্রাট পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক সদস্য সংখ্যা ১৬ হলেও, তরুণ পুরুষ উত্তরাধিকারী হিসেবে রয়েছেন শুধু ক্রাউন প্রিন্স আকিশিনো ও যুবরাজ হিসাহিতো।
জাপানের সম্রাট পরিবারের সাবেক প্রধান শিনগো হাকেতা বলেন, ‘মূল প্রশ্ন হলো পুরুষ না নারী উত্তরাধিকার, সেটা নয়। আসল প্রশ্ন হলো কীভাবে রাজতন্ত্রকে রক্ষা করা যায়।’
ইতিহাসে জাপানে আটজন নারী সম্রাট সিংহাসনে বসেছিলেন। তবে বর্তমান আইন নারী উত্তরাধিকার নিষিদ্ধ করেছে। ২০০৬ সালে যুবরাজ হিসাহিতোর জন্মের পর আইন পরিবর্তনের প্রস্তাবও স্থগিত রাখা হয়। এখনো বিতর্ক চলছে— নারী সদস্যরা বিবাহের পর রাজপরিবারের মর্যাদা রাখবেন কি না, কিংবা রাজপরিবারের দূর সম্পর্কীয় পুরুষ সদস্যদের দত্তক নিয়ে উত্তরাধিকার সংরক্ষণ করা হবে কি না। সূত্র: এনডিটিভি
বিডি প্রতিদিন/নাজিম