যুক্তরাজ্যে প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে ইতিহাস গড়লেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত শাবানা মাহমুদ। তাকে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। এর মধ্য দিয়ে প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেন শাবানা মাহমুদ।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যাঞ্জেলা রেইনার ফ্ল্যাট কেলেঙ্কারির জেরে উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর শাবানা মাহমুদকে এই পদে নিয়োগের ঘোষণা আসে।
দায়িত্ব পাওয়ার পর শাবানা তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়া আমার জন্য জীবনে সবচেয়ে বড় সম্মানের। নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের প্রথম দায়িত্ব। আর আমি এ লক্ষ্যেই প্রতিনিয়ত কাজ করব।”
১৯৮০ সালে বার্মিংহামে জন্মগ্রহণ করা শাবানা মাহমুদের বাবা-মা পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরের মিরপুর থেকে বহু বছর আগে ঝেলামের কাছে লুধারের ভোহরিয়ান গ্রামে চলে আসেন। পরবর্তীতে পরিবার নিয়ে তিনি সৌদি আরবে কিছু সময় ছিলেন। পরে ফিরে আসেন যুক্তরাজ্যে। অক্সফোর্ডের লিংকন কলেজ থেকে আইন পড়েন শাবানা মাহমুদ। কর্মজীবন শুরু করেন ব্যারিস্টার হিসেবে।
২০১০ সালে বার্মিংহাম লেডিওয়ুড আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন শাবানা। এটিই মূলত তার রাজনৈতিক জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এরপর তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০২৪ সালের নির্বাচনে লেবার পার্টি জয়ী হওয়ার পর শাবানা বিচারমন্ত্রী ও লর্ড চ্যান্সেলর হন। তিনি অতিরিক্ত বন্দিতে ঠাসা কারাগার নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নেন এবং বিচারব্যবস্থার জট কমাতে আইন প্রণয়ন করেন। গত সপ্তাহেই তিনি কারাগার সংস্কার নিয়ে বড় একটি বিল পার্লামেন্টে উপস্থাপন করেন।
তবে এবার আরও কঠিন দায়িত্ব আর চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে যাচ্ছেন শাবানা। অভিবাসন সংকট, আশ্রয়প্রার্থী হোটেল, রেকর্ড সংখ্যক চ্যানেল পাড়ি দেওয়া অভিবাসী এবং সীমান্ত নিরাপত্তা এসবের মধ্যে অন্যতম।
সম্প্রতি অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের ওপর তার অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। এছাড়া মানবাধিকার সুরক্ষার ইউরোপীয় কনভেনশন নিয়েও তিনি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, অভিবাসন সংক্রান্ত মামলায় ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের অধিকার (আর্টিকেল ৮) ব্যবহারে কড়াকড়ির প্রস্তাব শিগগিরই আনা হবে।
এছাড়া বিচারমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় বিদেশি কোনও অপরাধী কারাদণ্ড পেলেই তাকে দ্রুত দেশ থেকে বহিষ্কার করার প্রস্তাব করেছিলেন শাবানা। তবে, তার এই দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন সহজ ছিল না। নানা হয়রানি, ভুয়া খবর এবং ঘৃণার শিকারও হতে হয়েছে তাকে।
এর আগে স্থানীয় পাকিস্তানি কমিউনিটি থেকেও হয়রানির মুখে পড়েছিলেন তিনি। বর্তমানে মুসলিম এই নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর কট্টর ডানপন্থীদের ইসলামবিরোধী আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন। তিনি বলেন, “মুসলিম নারী হয়েও সংসদে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হওয়া অনুপ্রাণিত করে আমাকে।”
এছাড়া গাজায় আগ্রাসনে বিষয়ে ইসরায়েলের সমালোচনা করেন শাবানা। নিরীহ ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যাকাণ্ডকে অমানবিক বলেও উল্লেখ করেন। এই সমস্যার সমাধানের বিষয়ে তিনি জানান, তার দল লেবার পার্টি, একমাত্র শান্তির পথ দুই রাষ্ট্র সমাধানে বিশ্বাসী। সূত্র: জিও নিউজ
বিডি প্রতিদিন/একেএ