নাটোরের গুরুদাসপুরে সাদাসোনা বলে বিখ্যাত মসলা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ফসল রসুন। এই রসুনের আবাদকে কেন্দ্র করে চলনবিল অধ্যুষিত গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, নাটোর সদর, সিংড়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও তাড়াশ উপজেলার মানুষের ঘরে ঘরে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। গড়ে উঠেছে নতুন নতুন হাট-বাজার, বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের শ্রমবাজার এবং কর্মসংস্থান ব্যবস্থা। কিন্তু বিদেশ থেকে রসুন আমদানি করায় ন্যায্য দাম না পাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন রসুন চাষিরা।
চলনবিলের কৃষকরা এখন রসুনকেই প্রধান ও অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসেবে গুরুত্ব সহকারে বেছে নিয়েছেন। তাই সারাবছর চলে রসুনের জমি লিজ, জমি তৈরি, সার-বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, বীজ রোপণ, নিড়ানি, সেচ, খড়-উপকরণ সংগ্রহ, উত্তোলন, ঝুটি বাঁধা, মাচাং করে সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণসহ নানারকম কর্মকাণ্ড। রসুন তোলার সময় হলেই বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের কাছিকাটা, হাজিরহাট ও নয়াবাজারে বসে শ্রমিকের হাট। চলে কৃষকের রসুন ঘরে তোলার উৎসব।
বর্তমানে গুরুদাসপুর, চাঁচকৈড়, ধারাবারিষা, নাজিরপুর, কাছিকাটাসহ রসুনের বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে আসছে মোটা অংকের রাজস্ব। বেড়েছে মানুষের জীবনযাত্রার মান। এসেছে অর্থনৈতিক সফলতা। জমির বহুমুখী ফসলের চাষাবাদ বৃদ্ধি ছাড়াও বেড়েছে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত আর্থিক সংস্থা এবং ব্যক্তি পর্যায় থেকে ঋণের প্রবাহের লেনদেনের হার।
চাঁচকৈড় রসুনের হাটে আসা কৃষক নাজিম উদ্দিন, ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান ও আড়তদার আক্তার হোসেন বলেন, চায়না রসুন আমদানি করায় হঠাৎ রসুনের দরপতন হয়েছে। বর্তমানে ছোট রসুন ২ হাজার, মাঝারি ২ হাজার ৫০০ ও বড় রসুন ৩ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
বেপারী গোলাম মোল্লা ও রহমত আলী জানান, নাটোরে রসুনের কদর সারা দেশজুড়ে। এ অঞ্চল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রসুন সরবরাহ করা হয়ে থাকে। বিদেশ থেকে রসুন আমদানি করায় হুমকির আশঙ্কায় রয়েছেন চলনবিলের রসুন চাষিরা।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসাণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নাটোরের সাতটি উপজেলায় ২৫ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে রসুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। যা দেশের মোট আবাদের ২৯ শতাংশ। এ ছাড়া ফলন হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ২০৮ মেট্রিক টন রসুন। যা দেশের মোট ফলনের ৪২ শতাংশ। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, নাটোর সদর উপজেলায় ২৮৮০ হেক্টর জমিতে ২৭ হাজার মেট্রিক টন রসুন উৎপাদনসহ গুরুদাসপুরে ৭৩৭৫ হেক্টরে ৬৮১৪৫ মেট্রিক টন, বড়াইগ্রামে ৮৯৯৩ হেক্টরে ৮৩০৯৫ মেট্রিক টন, নলডাঙ্গার ৪২৬ হেক্টরে ৩৯৩৬ মেট্রিক টন, সিংড়ায় ১০০৫ হেক্টরে ৯২৮৬ মেট্রিক টন, লালপুরে ১১০০ হেক্টরে ১০১৬৪ মেট্রিক টন এবং বাগাতিপাড়া উপজেলায় ১০৭৬ হেক্টরে ১০ হাজার মেট্রিক টন রসুন উৎপাদন হয়েছে। জেলায় মোট রসুন উৎপাদনের ৭২ শতাংশই বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর থেকে উৎপাদন হয়। এর মধ্যে বড়াইগ্রামে ৩৫% এবং গুরুদাসপুরে ২৯%।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় এবার রসুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকরা। ফলে আর্থিকভাবে তারা অনেক লাভবান হচ্ছেন। কৃষি অফিস থেকে মাঠ পর্যায়ে রসুন চাষে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় কৃষকদের কারিগরি প্রশিক্ষণসহ পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই