ইতিহাস ও সংস্কৃতিজুড়ে মানুষের অবিচ্ছেদ্য উপাদান সমুদ্র। সমুদ্রে রয়েছে প্রচুর মাছ। ব্যবসাবাণিজ্য, ভ্রমণ, খনিজ উত্তোলন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, যুদ্ধকালীন পথ- সমুদ্র হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ। এই বিশাল জলরাশিতে রয়েছে নানা অজানা রহস্য। সেসব নিয়ে আজকের রকমারি-
মহাসাগরের কথা
১. প্রশান্ত মহাসাগর : এটি পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগর। এর মাধ্যমে এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমেরিকা বিভক্ত হয়েছে। এর আয়তন ও গভীরতা সবচেয়ে বেশি। আয়তন ১৬,৬২,৬৬,৮৭৭ বর্গকিলোমিটার। সর্বোচ্চ গভীরতা ১০,৯২৪ মিটার। গড় গভীরতা ৪,০৭৯ মিটার।
২. আটলান্টিক মহাসাগর : এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর। এর মাধ্যমে ইউরেশিয়া ও আফ্রিকা থেকে আমেরিকা বিভক্ত হয়েছে। আয়তন ৮,৬৫,০৫,৬০৩ বর্গকিলোমিটার। সর্বোচ্চ গভীরতা ৯,২১৯ মিটার। গড় গভীরতা ৩,৯২৬ মিটার।
৩. ভারত মহাসাগর : এটি দক্ষিণ এশিয়াকে ঘিরে রেখেছে। আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়াকে বিভক্ত করেছে। আয়তন ৭,৩৫,৫৫,৬৬২ বর্গকিলোমিটার। সর্বোচ্চ গভীরতা ৭,৪৫৫ মিটার। গড় গভীরতা ৩,৯৬৩ মিটার।
৪. উত্তর মহাসাগর বা আর্কটিক মহাসাগর : এটি আটলান্টিক মহাসাগরের একটি সমুদ্র হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। যা আর্কটিকের অধিকাংশ এলাকা এবং উত্তর আমেরিকা ও ইউরেশিয়ার একাংশকে ঘিরে রেখেছে। আয়তন ১,৩২,০৮,৯৩৯ বর্গ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ গভীরতা ৫,৬২৫ মিটার। গড় গভীরতা ১,২০৫ মিটার।
৫. দক্ষিণ মহাসাগর বা অ্যান্টার্কটিকা মহাসাগর : এ মহাসাগর অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশকে ঘিরে রেখেছে। এটি প্রশান্ত, আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরের বহিরাংশ হিসেবে নির্দেশিত হচ্ছে। এর আয়তন ৫,২৬,৪৬,৫০৩ বর্গ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ গভীরতা ৫,৭৪৫ মিটার। গড় গভীরতা ১,০৪৯ মিটার।
রহস্যের আড়ালে টাইটানিক
যুক্তরাজ্য থেকে বিলাসবহুল প্রমোদতরী টাইটানিক নিউইয়র্কের উদ্দেশে যাত্রা করে ১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল। রাত ১১টা ৪০ মিনিটে উত্তর আটলান্টিকে বরফখণ্ডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে এটি ডুবতে শুরু করে। বিশাল জাহাজটি ডুবতে সময় নিয়েছিল ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। ইতিহাসে অন্যতম বিয়োগান্ত ঘটনা এটি। এতে প্রাণ যায় দেড় হাজারের বেশি মানুষের। জাহাজটি যে প্রথম যাত্রায়ই ডুবে যাবে, এমনটা কেউ কল্পনাও করেনি। ডুবুরিরা সমুদ্রের গভীরে গিয়ে বারবার দেখে এসেছেন ধ্বংসাবশেষ। দীর্ঘ ৭৩ বছর পর ১৯৮৫ সালে যন্ত্রচালিত অনুসন্ধান শুরু করে একদল বিজ্ঞানী। যেই স্থানটিতে টাইটানিক জাহাজ ডুবেছিল, সেখানের ১৩ হাজার মিটার জলের নিচে সন্ধান পান টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের। রবার্ট বালার্ড নামক ফরাসি বিজ্ঞানীর ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল টাইটানিককে খুঁজে বের করবেন। বড় হয়ে তিনি সে কাজেই নামলেন। কিছু তথ্যের সন্ধান পেলেও এর পুরোপুরি রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেননি। টাইটানিক ও অলিম্পিক জাহাজ নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। আসলে সেদিন দুর্ঘটনায় কোন জাহাজটি ডুবেছিল? ১৯৯৯ সালে ৬৪ বছর বয়স্ক অক্সফোর্ডের রবিন গার্ডনার তার লেখা বই ‘টাইটানিক : দ্য শিপ দ্যাট নেভার স্নাক’-এ দাবি করেন, টাইটানিক কখনোই ডোবেনি। তার দাবি অনেকটাই মিলে যায় কথিত টাইটানিকের বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের দেওয়া সাক্ষ্যের সঙ্গে। বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের মতে, ডুবে যাওয়া টাইটানিকের মনোগ্রাম ছিল অন্যরকম। তা কোনোমতেই টাইটানিকের সঙ্গে মেলে না। তবে এসব দাবির পক্ষে শক্ত কোনো প্রমাণ নেই।
পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে
যেখানে পানির বিশাল সম্ভার ও গভীরতা রয়েছে এবং তা বিভিন্ন নদীর সঙ্গে যুক্ত, সহজ ভাষায় এটাই সমুদ্র। পৃথিবীর অধিকাংশ অঞ্চল সমুদ্র দ্বারা আচ্ছাদিত। এটি ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের ৭১ শতাংশ; বাকি ২৯ শতাংশ স্থলভাগ দ্বারা গঠিত। সমুদ্র লবণাক্ত পানির বৃহৎ অংশ। সমুদ্র পৃথিবীর জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে। পানি, কার্বন ও নাইট্রোজেন চক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গভীরতম স্থান
মারিয়ানা ট্রেঞ্চ সমুদ্রের গভীরতম স্থান। এটি মারিয়ানা আইল্যান্ডের পাশে অবস্থিত। দেখতে অনেকটা ইংরেজি ভি আকৃতির মতো। এর গভীরতা এতটাই, এভারেস্ট পর্বতের সর্বোচ্চ চূড়াও এখানে দিব্যি বসে যাবে। এর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৫০০ মিটার। ধারণা করা হয়, এখানে সর্বোচ্চ গভীরতা ১৫ হাজার মিটার হতে পারে।
৭০০ ফুট গভীরে সাবমেরিনগুলো চলে। ৮৩১ কিলোমিটার গভীরে পানির চাপ অনেক বেশি। এই চাপে মানুষের ফুসফুস অকেজো হয়ে যায়। ২৭২২ মিটার নিচের গভীরতায় বিশ্বের সর্বোচ্চ দালান বুর্জ খলিফাও বেশ ছোট মনে হবে। ৩২৮০ মিটার গভীরতায় সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারে না। মারিয়ানা ট্রেঞ্চ তাই অন্ধকারে ঢাকা বহু রহস্যের ভান্ডার। এখানের জীবনযাত্রার সঙ্গে পৃথিবীর যোগাযোগ নেই বললেই চলে। ৭ হাজার ৫০০ ফুট তলদেশকে বলা হয় মিডনাইট জোন। এত নিচেও অনেক প্রাণী বসবাস করে।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্য
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল হলো আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিমাংশে ত্রিভুজাকৃতির একটি বিশেষ অঞ্চল। এর এক কোণে বারমুডা দ্বীপ; অন্য দুই প্রান্তে মায়ামি বিচ ও পুয়ের্তে রিকোর সান জুয়ান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে ১৯৪৫ সালের ৫ ডিসেম্বর পাঁচটি টিভিএম অ্যাভেঞ্জার উড়োজাহাজ ও একটি উদ্ধারকারী উড়োজাহাজ রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায়। সেই থেকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্য কথাটার চল। এরপরও বেশ কিছু জাহাজ ও উড়োজাহাজ সেখানে নিখোঁজ হয়েছে। তবে নির্ভরযোগ্য উৎসগুলো বলে, এখানে কোনো রহস্য নেই। কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে বটে। ওগুলো নিছক দুর্ঘটনাই। ওই এলাকা দিয়ে ইউরোপ, আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে প্রচুর জাহাজ চলাচল করে। উড়োজাহাজের যাতায়াতও খুব বেশি। এ রকম এলাকায় মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। এটি অচিন্তনীয় হলেও অনেকে এর মধ্যে রহস্য খোঁজেন। ওই এলাকায় উপসাগরীয় স্রোতধারার প্রবল ঢেউ রয়েছে। আছে টর্নেডোর ঝড়ঝাপটাও। এসবের পাল্লায় পড়লে আকস্মিক দুর্ঘটনার প্রকোপ একটু বেশি মনে হতেই পারে। তাই মনে হয়, ওই এলাকাটাই রহস্যজনক বিপদের একটি আখড়া। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ওসব কথার ভিত্তি নেই। যদি তাই হতো, তাহলে সেখান দিয়ে চলাচলকারী জাহাজ-উড়োজাহাজের বিমার হার অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি হতো।
অতলে গুপ্তধন
অ্যাসপারেঞ্জার গুপ্তধন : প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝামাঝি প্রায় ১২ বর্গকিলোমিটারের এমন স্থান রয়েছে, যার নাম পালমিরা। ধারণা করা হয়, এখানেই লুকিয়ে আছে জলদস্যুদের বিপুল পরিমাণ ধনসম্পদ। ১৮১৬ সালে পেরু থেকে লুট করা বিপুল পরিমাণ সোনা, রুপা, মহামূল্যবান রত্নবোঝাই স্পেনিশ জাহাজ অ্যাসপারেঞ্জা অ্যান্টিলেসের দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ঝড়ের কবলে পড়ে এ জাহাজের মাস্তুল ভেঙে যায়। এ অবস্থায় জাহাজটি জলদস্যুদের একটি সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটি শেষ পর্যন্ত ডুবে যায়। তবে ডুবে যাওয়ার আগেই এর সমস্ত ধনসম্পদ জলদস্যুরা তাদের জাহাজে বোঝাই করেছিল। পরে ওই জাহাজও ম্যাকাও যাওয়ার পথে ঝড়ের কবলে পড়ে। পালমিরার প্রবাল প্রাচীরময় এলাকায় ধ্বংস হয় জাহাজটি।
ক্যাপ্টেন কিডের গুপ্তধন : সপ্তদশ শতকে ভারত মহাসাগরের আতঙ্ক বলা হতো স্কটল্যান্ডের ভয়ংকর জলদস্যু ক্যাপ্টেন উইলিয়াম কিডকে। সে সময় ভারত মহাসাগর দিয়ে যাতায়াতকারী বিভিন্ন জাহাজের নাবিকদের স্বপ্নের মধ্যে ক্যাপ্টেন কিড এসে হানা দিত। দুঃস্বপ্নে চিৎকার করে ঘুম ভেঙে যেত তাদের। ডাকাতি আর লুটের মাল দিয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছিল কিডের জাহাজ। কিন্তু ভারত মহাসাগর থেকে জলযাত্রা শেষ করে ফেরার পথে জলদস্যুতার অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ব্রিটেনের আদালত। এরপর ১৭০১ সালের ২৩ মে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলেও অজ্ঞাত থেকে যায় তার লুটের বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসের খোঁজ।
দ্য এসএস সিটি অব কায়রোর গুপ্তধন : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ডুবে যাওয়া একটি জাহাজ থেকে পাওয়া যায় কয়েক হাজার রৌপ্যমুদ্রার বস্তা। যার বর্তমান আনুমানিক বাজারদর ৪ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৪২ সালে বম্বে থেকে ইংল্যান্ড যাচ্ছিল ব্রিটিশ স্টিমবোট ‘দ্য এস এস সিটি অব কায়রো’। তাতে মজুত ছিল কয়েক হাজার বস্তা রুপার কয়েন। অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে সেন্ট হেলেনা দ্বীপ থেকে ৪৮০ মাইল দক্ষিণে অ্যাডল্ফ হিটলারের নাৎসি বাহিনীর আক্রমণে ডুবে যায় ‘দ্য এস এস সিটি অব কায়রো’। জার্মান ডুবোজাহাজ ইউ-বোটের ধাক্কায় ডুবে যায় রুপাভর্তি ব্রিটিশ স্টিমবোটটি।
সমুদ্রতলে কবরস্থান
সমুদ্রের তলদেশে গায়ে কাঁটা দেওয়া দৃশ্য দেখে চমকে উঠবেন যে কেউ। চাক দ্বীপপুঞ্জের কাছে পানির নিচে সারি সারি কঙ্কাল ও জাহাজ রয়েছে। ডুবে যাওয়া জাহাজের সেই ছবি দেখে অনেকেই বলেছেন, এটিই বিশ্বে পানির নিচে থাকা সবচেয়ে বড় কবরস্থান। সমুদ্রতলের গহিন অন্ধকার, সাদা বালি; তাতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে মানব কঙ্কাল, জাহাজ, বিমানের ধ্বংসাবশেষ। সেই ধ্বংসাবশেষ একত্রিত করে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হয়। সমুদ্রের গভীর তলদেশে নৌ-জাহাজ, জাপানি ট্রাক ও পুরনো ড্রাইভিং স্যুটও মেলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলো ইতিহাসের ধ্বংসলীলার প্রমাণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার নানা ধ্বংসাবশেষ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থেকে গেছে সমুদ্রের অতলে। এর মধ্যে কিছু ধ্বংসাবশেষ ‘অপারেশন হেইলস্টোনে’র সময় ডুবে যাওয়া জাহাজ ও বিমানের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এ অপারেশনই ৪ হাজার ৫০০ জাপানি সৈন্যের মৃত্যু হয়। দ্য সান-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ অভিযানে শত শত বিমান ও ডজন খানেক জাহাজ ডুবে যায়। দুই দিনব্যাপী অপারেশন হেলস্টোন-এ ২৫০টি জাপানি বিমান ধ্বংস করা হয়। তাতে বিপুলসংখ্যক জাপানি সেনা নিহত হন।
সমুদ্রের নিচে অদ্ভুত মাছ
বৈদ্যুতিক ঈল : এটি বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। ৬.৭ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ২০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত এর ওজন। মাছটি দক্ষিণ আমেরিকার অ্যামাজন নদী ও অরিনোকো নদীর অববাহিকায় পাওয়া যায়। এর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারে বলেই এমন নামকরণ। ইংরেজিতে ঈল বা বাইম মাছের সঙ্গে মেলানো হলেও প্রকৃতপক্ষে মাছটি ছুরি মাছের প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। দেখতে অনেকটা মাগুর জাতীয় মাছের মতো। বৈদ্যুতিক ঈল নিশাচর প্রাণী। এটি নদী, জলস্রোত, জলাশয় ও নিমজ্জ্বিত জলজ এলাকার তলদেশে কর্দমাক্ত স্থানে থাকতে পছন্দ করে। যদিও মাছটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব তেমন নেই, তবু বহু বছর ধরে একে নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চলছে।
তিমি : তিমিকে মোটা দাগে শিকারি প্রাণী ধরা যায়। এর খাদ্য তালিকায় আণুবীক্ষণিক প্লাংকটন থেকে শুরু করে বড়সড়ো মাছ পর্যন্ত সবই আছে। তিমি দিনে প্রায় তিন থেকে চার হাজার কেজি ছোট চিংড়ি-জাতীয় ক্রিল খায়। স্তন্যপায়ী এরা। এ কারণে তিমির নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য অক্সিজেনের দরকার পড়ে। তাই তিমিকে পানির ওপর ভেসে উঠতে হয়। এ কাজটি তিমি তার সুবিশাল নাসারন্ধ্রের মাধ্যমে সম্পন্ন করে। অনেক তিমি পানির ওপর ভেসে জলক্রীড়া ও লেজ দিয়ে পানিতে আঘাতের খেলায় মাতে। সব স্তন্যপায়ীর মতো তিমিকেও ঘুমাতে হয়।
উড়ন্ত মাছ : অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, সাগরে এক ধরনের আজব মাছ আছে, যারা অনায়াসে শূন্যে ভেসে বেড়ায়। এরা হলো উড়ন্ত মাছ। এদের পাখনা দুটো বেশ বড়। দশ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে দেখা যায়। পাখনার সাহায্যেই এ মাছ উড়ে বেড়ায়। লাফ দিয়ে পানি ছেড়ে আকাশে উঠে আসার সময় পাখনা দুটো দু’পাশে মেলে ধরে। সাধারণত পানির ভেতর সাঁতরানোর সময় উড়ন্ত মাছের রং সবুজ দেখায়। আসলে এদের পাখনার রং হালকা বেগুনি। অথচ কি আশ্চর্য, আকাশে ওড়ার সময় পাখনার রং কখনো দেখায় কালচে নীল, আবার কখনো সোনালি হলুদ। পানিতে চলাফেরার চেয়ে শূন্যে উড়তেই এরা বেশি পছন্দ করে। আকাশে ওড়ার গতিবেগও এদের আশ্চর্য রকম। ঘণ্টায় এরা ৫৬ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ পাড়ি দিতে পারে।
গবলিন হাঙর : কাঠের মেঝেতে শুয়ে থাকে এটি। পাগলের মতো চিৎকার করে ওঠে। এর নাক হয় লম্বা। এক ধরনের নরকীয় ইউনিকর্নের মতো দেখায়। এর মাংস গোলাপি। একে এমন দেখায়, যেন এর কোনো চামড়া নেই। বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন, এদের সর্বোচ্চ উচ্চতা প্রায় ১৩ ফুট। এখনো বাস্তব ধারণা মেলেনি।
ল্যাম্প্রে : পানির নিচে পাথরের ওপর থাকে এরা। এরা প্রাচীন, শক্তপোক্ত ও অবিশ্বাস্যভাবে বহুমুখী। লবণাক্ত জল বা মিঠা পানি, হ্রদ বা নদী, অগভীর জলাভূমি বা গভীরতায় যে কোনো পরিবেশে বেড়ে ওঠে। এমনকি এরা সঙ্গমের জন্য অভ্যন্তরীণ দিকে যাওয়ার সময় জলপ্রপাতেও আরোহণ করে। ল্যাম্প্রে শিকার করে। ভ্যাম্পায়ারদের মতো প্রাণ কেড়ে নেয়।
স্বচ্ছ মাথার এলিয়েন : এলিয়েনের মতো দেখতে এক ধরনের মাছ বাস করে সমুদ্রে। এর শরীরের বেশির ভাগ অংশ কালো বা অস্পষ্ট। মাথার ওপরের অংশটি স্বচ্ছ। এ স্বচ্ছ অংশের ভেতরেই রয়েছে সবুজ চোখজোড়া। ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূল থেকে সমুদ্রের প্রায় দুই হাজার ফুট নিচে দেখা মেলে এর। অন্য যে কোনো সামুদ্রিক প্রাণী থেকে ভিন্ন। মন্টেরি বে অ্যাকুরিয়াম রিচার্স ইনস্টিটিউট (এমবিএআরআই)-এর রিমোট অপারেটিং যানের সাহায্যে গভীর সমুদ্রে একে আবিষ্কার করা হয়। এটি সমুদ্রের এতই গভীরে থাকে, যেখানে রয়েছে খাদ্যের সংকট। তবে এদের চোখের অবস্থান এমন জায়গায়, জলরাশি ভেদ করে এরা খুঁটিয়ে খাবারের সন্ধান করতে পারে।
জাহাজের ধ্বংসাবশেষের খোঁজে
সাগর-মহাসাগরের নিচে ঠিক কতগুলো জাহাজ পড়ে আছে, তা এখনো জানা যায়নি। বিশ্বে জাহাজডুবি নিয়ে বেশ কয়েকটি তথ্যভাণ্ডার রয়েছে। সেখানে থাকা পরিসংখ্যানে পার্থক্য দেখা যায়। অনলাইনভিত্তিক এমনই একটি ডেটাবেজ ‘রেক সাইট’। তারা নিজেদের এ সম্পর্কিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডেটাবেজ হিসেবে দাবি করে। রেক সাইটে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪০টি নৌডুবির তথ্য আছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৭৯ হাজার ১১০টির অবস্থান জানা বলে ডেটাবেজে উল্লেখ রয়েছে। অন্যদিকে গ্লোবাল মেরিটাইম রেকর্ডস ডেটাবেজে ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি নৌযান ডুবির তথ্য রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিছু নৌযান এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। এক হিসাব অনুযায়ী, শুধু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ই প্রায় ১৫ হাজার জাহাজ ডুবে গিয়েছিল। এ যুদ্ধের সময় প্রশান্ত থেকে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যাওয়া অনেক যুদ্ধজাহাজ ও ট্যাংকারের কথা আজ বিস্মৃত। সমুদ্রে নৌযান বা জাহাজের ধ্বংসাবশেষের যে তথ্য এখন পর্যন্ত নথিভুক্ত রয়েছে, তাকে মোটেই পূর্ণাঙ্গ চিত্র বলা যাবে না। প্রাপ্ত তথ্যকে প্রকৃত সংখ্যার একটি ছোট ভগ্নাংশ মনে করা হয়। পানির নিচের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সুরক্ষার বিষয়ে ইউনেস্কোর একটি কনভেনশন রয়েছে। ২০০১ সালে কনভেনশনটি গৃহীত হয়। ইউনেস্কোর এক বিশ্লেষণে বলা হয়, সমুদ্রের নিচে ৩০ লাখের বেশি অনাবিষ্কৃত নৌযান বা জাহাজের ধ্বংসাবশেষ আছে।