একসময় মানবদেহের অভ্যন্তর কেবল পুষ্টি আর খাদ্য উপাদানের স্থান হিসেবে বিবেচিত ছিল। কিন্তু সে ধারণা এখন অতীত। বর্তমানে ভিটামিন আর খনিজ থেকে শুরু করে নানা পুষ্টি উপাদান আমরা ত্বক, নখ, এমনকি চুলের যত্নে ব্যবহার করছি। নিঃসন্দেহে সুস্থ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু খাবার থেকে আসে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ত্বকের ওপর অর্থাৎ টপিক্যাল প্রয়োগেও রয়েছে অবিশ্বাস্য উপকারিতা।
আমাদের চুল এবং মাথার ত্বকে কোনো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো বেশি উপকারী, তা জানিয়েছেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ হান্না কোপেলম্যান, ডিও এবং সেরেনা মরাজ। বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক...
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কী, কেন জরুরি?
সহজ ভাষায় বললে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হলো এক ধরনের বিশেষ যৌগ যা অক্সিডেশন নামক প্রক্রিয়াকে প্রতিরোধ করে। এই অক্সিডেশন তৈরি করে ফ্রি র্যাডিকেল- ক্ষতিকারক অণু যা আমাদের কোষের ক্ষতি করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বার্ধক্য প্রতিরোধে সেরা অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত। যা শরীরকে বাতাস বা প্রাকৃতিক বার্ধক্য প্রক্রিয়ার কারণে তৈরি ফ্রি র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। মজার ব্যাপার হলো- এটি কেবল শরীরের ভিতরেই কাজ করে না; খাদ্য সংরক্ষণে বা প্রসাধনীতে স্থিতিশীলতা আনতে এর ব্যবহার হয়ে থাকে। খাবারের মাধ্যমে আমরা যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাই, তা রোগপ্রতিরোধে সহায়তা করে।
চুলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কতটা উপকারী?
ড. কোপেলম্যান ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অপরিহার্য, কারণ এটি ফ্রি র্যাডিকেলগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে। এই ক্ষতিকারক অণুগুলো কোষীয় স্তরে চুলের ক্ষতি করতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই ক্ষতি চুলের দুর্বলতা, অতিরিক্ত চুল পড়া, এমনকি অকালপক্বতার কারণ হতে পারে।’ তাহলে সমাধান? ‘খাবার থেকে অথবা সরাসরি চুলে পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণ করা যায়, যা চুলকে পরিবেশগত চাপ থেকে রক্ষা করে, বার্ধক্য এবং ক্ষতির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।’ অর্থাৎ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং চুলের সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
চুলের সেরা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
► ভিটামিন-এ (রেটিনল) : চুলের বৃদ্ধি ও মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি। পর্যাপ্ত ভিটামিন-এ চুলকে শুষ্ক ও ভঙ্গুর হওয়া থেকে বাঁচায়, চুল পড়া কমায় এবং অকালপক্বতা রোধ করে। মিষ্টি আলু, গাজর ও সবুজ শাকসবজিতে এটি প্রচুর পরিমাণে থাকে। তবে মনে রাখবেন, বেশি পরিমাণে ভিটামিন-এ কিন্তু চুলের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
► ভিটামিন-সি : এটি কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা চুলের গঠন ও শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ। আয়রন শোষণে এর ভূমিকা অপরিহার্য, যা চুল বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন। পাতলা চুল ও ঘনত্ব বাড়াতে চান এমন রোগীদের ড. কোপেলম্যান এটি গ্রহণের সুপারিশ করেন। এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাগুণ মাথার ত্বক সুস্থ রাখে ও খুশকি কমায়। সাইট্রাস ফল, বেল পেপার, ব্রোকোলিতে এটি পাওয়া যায়।
► ভিটামিন-ই : এটি চুলের স্বাস্থ্যের ‘পাওয়ারহাউস’। রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের ফলিকলে পুষ্টি পৌঁছাতে সাহায্য করে, ফলে চুল বৃদ্ধি পায়। অ্যাভোকাডো ও বাদামে পাওয়া যায়। তেল বা সেরাম ব্যবহারে চুল আরও উজ্জ্বল ও ঝলমলে হয়। শুষ্কতা বা ইরিটেশনযুক্ত মাথার ত্বকের জন্যও এটি দারুণ কার্যকর।
► পলিফেনল : অলিভ অয়েল, গ্রিন টি ও ডার্ক চকোলেটের স্বাস্থ্যগুণের পেছনে এটিই মূল কারণ। মরাজ জানান, পলিফেনল অকালপক্বতা রোধ করে, চুলের শক্তি বাড়ায়, সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি থেকে রক্ষা করে এবং চুলের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে। ড. কোপেলম্যান ঘন ও স্বাস্থ্যবান চুলের জন্য পলিফেনল-সমৃদ্ধ খাবার ও পণ্য ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
► সেলেনিয়াম : এটি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, পাশাপাশি চুলের স্বাস্থ্যেও সহায়ক। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টিভ প্রভাব ফেলে এবং চুলের বৃদ্ধি ও রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করে। এর শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য খুশকি ও মাথার ত্বকের প্রদাহ কমায়। বাদাম, সামুদ্রিক খাবার ও ডিমে এটি পাওয়া যায়। খুশকির শ্যাম্পুতেও এর উপস্থিতি রয়েছে।