বর্তমান ডিজিটাল যুগে প্রতিটি অনলাইন অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের (যেমন : ইমেইল, ব্যাংক, সোশ্যাল মিডিয়া, নেটফ্লিক্স) জন্য আলাদা পাসওয়ার্ড প্রয়োজন হয়। এমনকি যে ওয়েবসাইটগুলো আপনি হয়তো একবার ব্যবহার করেছেন, সেগুলোর জন্যও পাসওয়ার্ড মনে রাখতে হয়। গবেষণা বলছে, এক ব্যক্তির শত শত পাসওয়ার্ড থাকে, যা মনে রাখা প্রায় অসম্ভব। এ পরিস্থিতিতে অনেকেই একই পাসওয়ার্ড বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করেন, যা খুবই বিপজ্জনক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতি এড়াতে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো আজকের ডিজিটাল দুনিয়ায় বেশ কিছুদিন ধরেই প্রচলিত আছে এবং আপনার লগইন তথ্যগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে খুবই কার্যকর টুল হতে পারে।
কেন পাসওয়ার্ড ম্যানেজার?
যদি কোনো একটি সাইবার ব্রেইচে আপনার পাসওয়ার্ড ফাঁস হয়ে যায়, তাহলে হ্যাকাররা সেই একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে আপনার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টেও প্রবেশ করতে পারে। এ ছাড়া জন্মদিন, পরিবারের নাম, প্রিয় দলের নাম অথবা ‘abc123’-এর মতো সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করাও সাইবার নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সবচেয়ে ভালো কৌশল হলো প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য একটি ভিন্ন, দীর্ঘ এবং জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। সম্ভব হলে টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) যোগ করা উচিত। কিন্তু এতগুলো পাসওয়ার্ড মনে রাখা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আর এখানেই প্রয়োজন সমাধান।
সমাধান : পাসওয়ার্ড ম্যানেজার
একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার হলো আপনার এ সমস্যার সবচেয়ে কার্যকর সমাধান। এটি একটি ডিজিটাল ভল্টের মতো, যেখানে আপনার সব পাসওয়ার্ড নিরাপদে সংরক্ষিত থাকে। এর মূল ধারণাটি সহজ :
► নিরাপদ সংরক্ষণ : আপনার সব পাসওয়ার্ড সুরক্ষিতভাবে একটি ডিজিটাল ভল্টে জমা থাকে।
► অটো-ফিল : যখন আপনি কোনো অনলাইন পরিষেবায় লগইন করতে যান, তখন পাসওয়ার্ড ম্যানেজার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যবহারকারীর নাম এবং পাসওয়ার্ডের ঘরগুলো পূরণ করে দেয়।
► একটি মাত্র পাসওয়ার্ড : পাসওয়ার্ড ম্যানেজারটি খোলার জন্য আপনাকে শুধু একটি মাস্টার পাসওয়ার্ড মনে রাখতে হবে।
► মোবাইল ও কম্পিউটার সমর্থন : বেশির ভাগ পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের স্মার্টফোন অ্যাপ রয়েছে, যা মোবাইল ব্রাউজার এবং অন্যান্য অ্যাপের সঙ্গে কাজ করে। এটি আঙুলের ছাপ বা ফেসিয়াল আইডি স্ক্যান দিয়ে খোলা যায়। কম্পিউটারে এটি ব্রাউজার প্লাগ-ইন বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে লগইন করা যায়।
► শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি : একটি ভালো পাসওয়ার্ড ম্যানেজার স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন অ্যাকাউন্টের জন্য অক্ষর, সংখ্যা এবং প্রতীক সমন্বিত জটিল ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করতে পারে।
► ফিশিং সুরক্ষা : এটি আপনাকে ফিশিং স্ক্যাম থেকেও রক্ষা করে। যদি কোনো প্রতারণামূলক ওয়েবসাইট আসল ওয়েবসাইটের ঠিকানার সঙ্গে না মেলে, পাসওয়ার্ড ম্যানেজার স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেখানে আপনার লগইন তথ্য পূরণ করবে না।
► শুধু পাসওয়ার্ড নয় : ব্যাংক ও ক্রেডিট কার্ডের পিন এবং পাসকির মতো নতুন প্রযুক্তিও এতে সংরক্ষণ করতে পারবেন।
এটি কীভাবে কাজ করে?
মৌলিক ধারণাটি সহজ, পাসওয়ার্ডগুলো একটি ডিজিটাল ভল্টে নিরাপদে সংরক্ষিত থাকে। যখনই অনলাইন পরিষেবা অ্যাক্সেস করার প্রয়োজন হয়, তখন এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে লগইন এবং পাসওয়ার্ডের ক্ষেত্রগুলো পূরণ করে দেয়। এ ক্ষেত্রে আপনাকে শুধু একটি পাসওয়ার্ড মনে রাখতে হবে, যা দিয়ে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার খোলা যাবে। বেশির ভাগ পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের একটি স্মার্টফোন অ্যাপ থাকে, যা মোবাইল ব্রাউজার এবং অন্যান্য অ্যাপের সঙ্গে কাজ করে এবং এটি আঙুলের ছাপ বা ফেসিয়াল আইডি স্ক্যান দিয়ে খোলা যায়।
সেরা পাসওয়ার্ড ম্যানেজার
বাজারে ডজনখানেক পাসওয়ার্ড ম্যানেজার রয়েছে, তাই আপনার জন্য কোনটি সেরা তা নির্ধারণ করা কঠিন হতে পারে। তবে অনলাইনে বেশি পরিচিত প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে : 1Password, Bitwarden, Dashlane, Bitdefender, Nordpass, Keeper এবং Keepass। অনেক প্রযুক্তি পর্যালোচনা ওয়েবসাইট পরীক্ষা করে এই পরিষেবাগুলোর র্যাঙ্কিং পাবেন। ব্রিটেনের ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি সেন্টারের একটি ক্রেতার নির্দেশিকাও রয়েছে।
তথ্যসূত্র : অ্যাসোসিয়েড প্রেস (এপি)