দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর সঙ্গে বিএনপিকে জড়িয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে এমন অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কুমিল্লার মুরাদনগরে হিন্দু নারী ধর্ষণ থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাম্য হত্যা ও মিটফোর্ডের ঘটনায় এমন শক্তি জড়িত, যারা ‘তাবেদার শক্তির এ দেশীয় ধারক ও বাহক’।
তিনি বলেন, বিএনপির প্রতি জনগণের সমর্থন ক্ষুণ্ণ করার জন্য এ গুলো আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং তাতে যুক্ত হয়েছে দুই একটি ইসলামিক দল। এর মধ্যে একটি ইসলামি দল আমরা জানি যে, তারা যুগ যুগ ধরে আওয়ামী পন্থী ও পার্শ্ববর্তী দেশের পন্থী। তারাই সবচেয়ে বেশি ষড়যন্ত্র করছে। কারা এসব করছেন তাদের পরিচয় আমরা জানি।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের ভেতর ও বাহির থেকে গভীর চক্রান্ত চলছে এবং টার্গেট করা হয়েছে তারেক রহমানকে। জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দুর্বল করার লক্ষ্যেই এসব হামলা চালানো হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রিজভী এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একটি গুপ্ত সংগঠন কর্তৃক অপপ্রচার ও অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতিবাদে ড্যাব ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা মহানগর উত্তর ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীমের সভাপতিত্বে বৃষ্টির মধ্যে সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করা যায়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ড্যাবের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার ও ড্যাবের সদ্য সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, তারেক রহমান টার্গেট হওয়ার কারণ হলো-তিনি ১০ হাজার মাইল দূরে থেকে দেশের মানুষকে সংগঠিত করছেন। গ্রামাঞ্চল থেকে শহর এবং শহরাঞ্চল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত তিনি মানুষকে সংগঠিত করেছেন। এ জন্যই কয়েকটি রাজনৈতিক দলের যত প্রতিহিংসা। তারেক রহমান কোনো অপরাধীকে প্রশ্রয় দেননি, এখন পর্যন্ত ৫ থেকে ৬ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছেন। বিএনপি বৃহৎ পরিবার, বিভিন্ন জায়গায় অনেকে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অপকর্মের চেষ্টা করছে, তবে এসব জানার সাথে সাথে ব্যবস্থা নিচ্ছেন তারেক রহমান। নেতাকর্মীদের প্রতি কোনো উসকানির মুখে প্রতিক্রিয়া না দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
রিজভী বলেন, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সমস্ত অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র আমরা সামাল দিতে পারব, কারণ জনগণ আমাদের সাথে আছে। শাসকগোষ্ঠী জনগণকে ভয় পাচ্ছে। যদি জনগণ তাদের সঙ্গে থাকত, তাহলে তারা কখনোই নির্বাচন পেছানোর কথা বা পিআরের কথা বলত না। তারা ধোঁয়াশা তৈরি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, আধিপত্যবাদী শক্তি জাতীয়তাবাদী শক্তিকে কখনোই পছন্দ করে না। কারণ, তারা জানে জাতীয়তাবাদী শক্তি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারের প্রশ্নে কোনো আপোস করবে না। এই কারণেই একের পর এক সংঘাতমূলক ও সহিংস ঘটনা এবং রক্তপাত ঘটানো হচ্ছে।
রিজভী আরও অভিযোগ করেন, বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন প্রোপাগান্ডা ও কন্টেন্ট তৈরি করে ফেসবুকে ছড়াচ্ছে। কুমিল্লার মুরাদনগরে এক হিন্দু মেয়ে ধর্ষণের ঘটনায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যুবদলকে দায়ী করা হয়েছে। যদিও ভুক্তভোগীর স্বামী নিজেই বলেছেন, এতে বিএনপির কেউ জড়িত ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোবাইল চুরির দায়ে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে পিটিয়ে হত্যা এবং ছাত্রদলের সাম্যকে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে রিজভী প্রশ্ন তোলেন, এগুলো কিসের আলামত?
তিনি বলেন, লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক ও একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশের পর থেকেই বাংলাদেশে পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি শুরু হয়েছে। এর উদ্দেশ্য এখন পরিস্কার।
মিটফোর্ডের সামনে ব্যবসায়ী সোহাগকে হত্যার প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, এ ঘটনা দুই দিন পরে ভাইরাল হলো কেনো? ভিডিওতে যাদের ছবি দেখা গেছে তাদের অনেকের নাম মামলায় নেই, তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ, তারা যেন সত্য তথ্য উদঘাটন করে।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আধিপত্যবাদী শক্তি এবং আধিপত্যবাদী শক্তির দালালরা গভীর চক্রান্ত করছে। তাদের পাতানো ষড়যন্ত্রের জালে আমাদের নেতাকর্মী বা আমাদের পক্ষের সমর্থক, পেশাজীবী সংগঠন কাউকে পা দেওয়া যাবে না।
ড্যাবের সদ্য সাবেক সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. মো. মেহেদী হাসান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ড্যাবের সাধারণ সম্পাদক ডা. নিয়াজ শহীদ রানার সঞ্চালনায় ড্যাবের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত