সার্বিয়ায় সরকারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়ে দেশের ক্ষমতাসীন মহলের রোষানলে পড়েছেন কিংবদন্তি টেনিস তারকা নোভাক জোকোভিচ। যার ফলে জন্মভূমি সার্বিয়া ছেড়ে পরিবারসহ গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছেন ২৪ গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী এই তারকা।
জার্মান সংবাদমাধ্যম এনজেডজেড এবং ব্রিটিশ ডেইলি মেইল–এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সার্বিয়ায় রাজনৈতিক চাপ, সরকারি সমর্থকদের কটাক্ষ এবং নেতিবাচক প্রচারণার মুখে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জোকোভিচ। প্যারিস অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়ের পর থেকেই তিনি সার্বিয়ার বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলনের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়ে আসছিলেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে নোভি সাদ শহরের একটি রেল দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হওয়ার পর সার্বিয়ায় শুরু হয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। এই আন্দোলনে প্রথম থেকেই শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন জোকোভিচ। সামাজিক মাধ্যমে তিনি লিখেছিলেন, আমি তরুণদের শক্তিতে বিশ্বাস করি। তাদের কণ্ঠস্বরই আমাদের ভবিষ্যৎ গড়বে। তারা আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি, এবং তাদের প্রতি আমাদের সম্মান জানানো উচিত।
চলতি বছরের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের পর, আন্দোলনে নিহত এক শিক্ষার্থীকে উৎসর্গ করেন জোকোভিচ। এছাড়া, বেলগ্রেডে একটি বাস্কেটবল ম্যাচে তিনি পরেছিলেন ‘Students Are Champions’ লেখা একটি সোয়েটার—যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
এমন অবস্থান গ্রহণের পর তাকে নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। একসময় যাকে প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুচিচ ‘সার্বিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ দূত’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন, সেই জোকোভিচকেই এখন সরকারপন্থি সংবাদমাধ্যমগুলো সমালোচনার মুখে ফেলেছে। এমনকি তাকে ‘দেশের জন্য কিছুই করেননি’ বলেও কটাক্ষ করা হয়েছে।
সার্বিয়ার নিরপেক্ষ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দেশের ভেতরে জোকোভিচ ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সেই কারণেই এথেন্সে স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তার ছেলে স্টেফান (১১) এবং মেয়ে তারা (৮)–কে ইতোমধ্যেই এথেন্সের বিখ্যাত সেন্ট লরেন্স স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে।
জোকোভিচ এথেন্সে একটি বাড়িও কিনেছেন এবং ভবিষ্যতে গ্রিসের ‘গোল্ডেন ভিসা’ প্রোগ্রামের আওতায় স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতির আবেদন করতে পারেন বলেও জানা গেছে।
এরইমধ্যে তার ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তেও পরিবর্তন এসেছে। বেলগ্রেডে পরিবার-আয়োজিত ‘বেলগ্রেড ওপেন’ টেনিস টুর্নামেন্ট এবার গ্রিসে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন নাম হবে ‘হেলেনিক চ্যাম্পিয়নশিপ’। আয়োজকদের ভাষ্য, “সার্বিয়ায় এখন টুর্নামেন্ট আয়োজনের মতো অনুকূল পরিস্থিতি নেই।”
জোকোভিচ সম্প্রতি একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছেন গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস–এর সঙ্গে। যদিও উভয় পক্ষই এ সাক্ষাৎকে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ বলে দাবি করেছে, তবে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন রয়েছে—জীবনের পরবর্তী অধ্যায়ের জন্য গ্রিসকেই বেছে নিচ্ছেন সার্বিয়ার একসময়ের জাতীয় নায়ক।
বিডি-প্রতিদিন/শআ