‘দুর্গনগরী’ গলে কোনো মহাকাব্য লেখেননি নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। মহাকাব্যিক ইনিংস না খেললেও স্বস্তির দুটি সেঞ্চুরি করেছেন দুজনে। তিন অংকের জাদুকরী ইনিংস খেলে দীর্ঘসময় সেঞ্চুরি না করার আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন। গলের উইকেটে দাপুটে ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কার বোলারদের শাসন করেছেন দুই টাইগার তারকা। দুজনের জোড়া সেঞ্চুরিতে প্রথম দিনটি পুরোপুরি রাজত্ব করেছে বাংলাদেশ। জোড়া সেঞ্চুরিতে রাজকীয় দিন পার করেছে নাজমুল বাহিনী। অধিনায়ক নাজমুল অপরাজিত ১৩৬ ও সাবেক অধিনায়ক মুশফিক অপরাজিত ১০৫ রানে ৩ উইকেটে ২৯২ রান করে বাংলাদেশ। জোড়া সেঞ্চুরিতে দুজনে স্বপ্ন দেখানোর পাইপলাইনে টেনে তুলেছেন দলকে। মুশফিকের সেঞ্চুরিটি তার ক্যারিয়ারের ১২তম এবং গলে দ্বিতীয়। নাজমুলের সেঞ্চুরিটি ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ এবং অধিনায়ক হিসেবে দ্বিতীয়। স্বপ্নের দিন পার করে মিডিয়ার মুখোমুখিতে দলের সবচেয়ে বর্ষীয়ান ক্রিকেটার মুশফিক উৎসাহ জুগিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুলকে ডাবল সেঞ্চুরি করতে, ‘নাজমুল শান্তর কোনো ডাবল সেঞ্চুরি নেই টেস্টে। তাহলে এখনই কেন ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্ন দেখবে না’। মুশফিক আরও বলেন, ‘নাজমুল যদি ২০০ কিংবা ২৫০
রানে ইনিংস খেলে, তাহলে দেশের জন্য অনেক বেশি সহায়ক হবে।’ বাংলাদেশের পক্ষে ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেছেন মুশফিক ৩টি এবং ১টি করে সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের।
নতুনভাবে টেস্ট নেৃতত্ব পেয়েছেন নাজমুল। দায়িত্ব পেয়ে নিজেকে মেলে ধরেছেন। ক্যারিয়ারে টেস্ট খেলেছেন ৩৬টি। সেঞ্চুরি করেছেন ৬টি। দলকে নেতৃত্বই দিয়েছেন ১৩ টেস্টে এবং সেঞ্চুরি করেছেন ২টি। টস জিতে গতকাল ব্যাটিং করেন নাজমুল। লাঞ্চের আগে প্রথম সেশনে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে। এরপর নাজমুল ও মুশফিক জুটি গড়েন। চতুর্থ উইকেট জুটিতে দুজনে ২৪৭ রানে অবিচ্ছিন্ন থেকে দিন পার করেন। যা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চতুর্থ উইকেটে সর্বোচ্চ রান। আগের সর্বোচ্চ ছিল ১৮০ রান। ২০১৮ সালে মুমিনুল হক ও লিটন দাস এ জুটি গড়েছিলেন। তবে চতুর্থ উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ ২৬৬, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। টেস্ট ক্রিকেটে ১৫০ রান ঊর্ধ্ব জুটি রয়েছে ৩৭টি। ১০টিই শ্রীলঙ্কার এবং ৬টি জিম্বাবুযের বিপক্ষে।
নাজমুল বরাবরই ব্যাটিং করেন ৩ নম্বর পজিশনে। গত ৩ টেস্টে ব্যাট করছেন ৪ নম্বরে। টেস্ট শুরুর আগে অবশ্য নিজের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে পরিষ্কার কিছু জানাননি নাজমুল। গতকালও ৪ নম্বরে ব্যাট করেন। এ পজিশনে এটাই প্রথম সেঞ্চুরি। নাজমুল সেঞ্চুরিটি করেন ইনিংসের ৭৩.৫ ওভারে। প্রবোথ জয়সুরিয়াকে সুইপ খেলে ৯৯ রান থেকে সেঞ্চুরি তুলে নেন টাইগার অধিনায়ক। সেঞ্চুরির পরপর আগ্রাসি ব্যাটিং করেন তিনি। ১৩৬ রানের অপরাজিত ইনিংসটি খেলেন ২৬০ বলে ১৪ চার ও ১ ছক্কায়। টাইগার অধিনায়ক আগের সেঞ্চুরিটি করেছিলেন ২০২৩ সালের নভেম্বরে, সিলেটে ২০ ইনিংস আগে নিউজিল্যন্ডের বিপক্ষে। মুশফিক সেঞ্চুরি করেন ধীরলয়ে। ইনিংসের ৮৫.৩ ওভারে আশেথাকে ডিফেন্স খেলে। কিন্তু বল ইনার এজ হয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে। বল ফাইন লেগে যেতেই দৌড়ে রান নিয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক। ৯৭ টেস্ট ক্যারিয়ারে এটা তার ১২তম সেঞ্চুরি এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চতুর্থ। ১৩ সেঞ্চুরি নিয়ে তার চেয়ে ওপরে মুমিনুল হক। মুশফিক ১০৫ রানে অপরাজিত ইনিংস খেলেন ১৮৬ বলে ৫ চারে। তিনি সেঞ্চুরি করেন ১৩ ইনিংস পর। সর্বশেষ সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেছিলেন ২০২৪ সালের আগস্টে রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে।
গল টেস্ট দিয়ে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম চক্রে কোনো জয় পায়নি টাইগাররা। দ্বিতীয় চক্রে সাকল্যে জয় ছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। তৃতীয় চক্রে ১২ টেস্টে জিতেছিল ৪টি।