পুরুষ ফুটবলাররা চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছেন। নারীরা একের পর এক সাফল্য পেয়ে দেশকে অন্যন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। জাতীয় বা বয়স ভিত্তিক সব ক্ষেত্রে জয়গান চলছে। পুরুষরা সেখানে ব্যর্থতার বৃত্তেই বন্দি বলা যায়। হামজা দেওয়ান চৌধুরী, সামিত সোম, ফাহমিদুল ইসলামরা জাতীয় দলে খেলার পরও কেন জানি আশা জাগাতে পারছেন না। নারী ফুটবলারদের নিয়ে দেশ যখন মাতোয়ারা, তখন দেশের সেরা দুই ক্লাব আন্তর্জাতিক লড়াইয়ে মাঠে নেমেছিল। এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের চ্যালেঞ্জ। ঢাকায় আবাহনী ও দোহায় বসুন্ধরা কিংসের খেলা। দুই দলেই জাতীয় দলের খেলোয়াড়ে ভরা। এ অবস্থায় যদি একদিনে দুই দল হার মানে তাহলে তো পুরুষ ফুটবলাররা আরও চাপের মধ্যে পড়ে যাবে। বিকালে কিরগিজস্তানের মুরাস ইউনাইটেডের কাছে হেরে এক ম্যাচেই ঢাকা আবাহনীর চ্যালেঞ্জ শেষ। বাংলাদেশের সময় মধ্য রাতে বসুন্ধরা কিংস মুখোমুখি হয়েছিল সিরিয়ার আল কারামাহর বিপক্ষে। যারা সিরিয়ার লিগে আটবার চ্যাম্পিয়ন এবং এএফসি কাপে রানার্সআপও হয়েছে।
এএফসি ফুটবলে এক দিনে বাংলাদেশের বড় দুই দলের খেলা। যদি দুই দলই হেরে যায় তাহলে তো দেশের ফুটবলে কালো ছায়া নেমে আসত। কেননা, ক্লাব হলেও তারা তো বাংলাদেশেরই প্রতিনিধিত্ব করেছে। যাক হতাশা থেকে মুক্ত করেছে কিংসই। আবাহনী হেরে বিদায় নিলেও কিংস চ্যালেঞ্জ লিগের হার্ডেল পেরিয়ে গ্রুপ পর্বে জায়গা করে নিয়েছে। অ্যাওয়ে ম্যাচ খেললেও আল মাহকে হারিয়ে মান রেখেছে বসুন্ধরা গ্রুপের বসুন্ধরা কিংসই। যা সামনে জাতীয় দলকে অনুপ্রেরণাও জোগাতে পারে। ঢাকায় আবাহনী হারার পর ফুটবলপ্রেমীরা দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। সবাই আতঙ্কে ছিলেন কিংস পারবে কি না। কেননা, মাঠে নামার আগে কিংসের ফুটবলাররা মানসিকভাবে কিছুটা হলেও বিপর্যস্ত ছিলেন। এ ম্যাচেই অভিষেক হওয়ার কথা ছিল ব্রাজিলিয়ান কোচ সার্জিও ফারিয়াসের। তিনি কিংসের হেড কোচের দায়িত্ব পালন করবেন তা নিশ্চিত ছিল।
সেই সার্জিও যা করলেন তা পেশাদার ফুটবলে বড্ড বেমানান। বিশেষ করে ব্রাজিলিয়ানদের বেলায় তা ভাবাও যায় না। তার কথামতো কিংস প্লেনের টিকিটও পাঠিয়ে দেয়। যাতে যথাসময়ে কাতারে পৌঁছাতে পারেন। এলেন না তিনি। কিংসে চূড়ান্ত হওয়ার পরও ইরাকের ডু হক ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেন। মাঠে নামার কয়েক ঘণ্টা আগে দল যখন জানতে পারে তাদের হেড কোচ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন। তাহলে কী অবস্থা হতে পারে? তার পর আবার কিউবা মিচেল ছাড়াও চার বিদেশি মাত্র দেড় দিন অনুশীলন করে মাঠে নামবেন। এখানে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার ছিল। সবকিছু মিলিয়ে কিংস যে চাপে ছিল এ নিয়ে সংশয় নেই।
যাক, সব ভয়কে জয় করে কিংস কাতারে কিং রূপ ধারণ করেই বাধা পেরিয়েছে। ব্যবধান ১-০ হলেও যে নৈপুণ্য দেখিেেছ তা ৩-০ হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকত না। সকালে আকাশের দিকে তাকালে যেমন বলা যায় দিনটা কেমন যাবে, তেমনি কিংসের শুরুটা যেভাবে হয়েছে তাতে ঘরোয়া মৌসুমে অনন্য কিছু করার আভাস দিয়েছে কিংস। আল কারামাহকে হারিয়ে বসুন্ধরা কিংস বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে গ্রুপ পর্বে জায়গা করে নিয়েছে। ২৮ আগস্ট চ্যালেঞ্জ লিগের গ্রুপের ড্র। অক্টোবরে হবে মূল লড়াই। কিংস সভাপতি ইমরুল হাসান কাতারের ম্যাচের আগে বলেছিলেন, ‘এবার বিদায় নয়, হিসাব বদলে দিতে চায় কিংস। এ প্রত্যাশা শুধু তাঁর নয়। গোটা দেশেরই।
আসা যাক ম্যাচে কিংসের পারফরম্যান্স প্রসঙ্গে। সত্যি বলতে কি কারও একক শো নয়, সব পজিশনেই কিংস ছিল অনবদ্য। গোল কিপিং, রক্ষণভাগ, মধ্য মাঠ ও আক্রমণ ভাগে কিংসের যে রূপ দেখা গেছে তা প্রশংসনীয়। ঘরোয়া আসরের আগেই কিংসের শুরুটা হয়েছে বিদেশি দলের বিপক্ষে। দুর্দান্ত কিংসের দেখা মিলল। এমানুয়েল সানডে ছয় মিনিটে যে গোলটি করেছেন তা চোখে ধরে রাখার মতো। কেন যে তাঁকে মোহামেডান থেকে কিংস দলে ভিড়িছে তার প্রমাণ দিল। ভরিয়েল টন, রকিবের সঙ্গে জুটি বেঁধে যে আক্রমণ হয়েছে তাকে এক ম্যাচ দেখেই বলা যায় এবার কিংসের আক্রমণ ভাগ হবে বড্ড ভয়ংকর। রক্ষণভাগে সাদউদ্দিন ছিলেন অনবদ্য। অধিনায়ক তপুও ভুল করেননি। রাফায়েল, যার কথা বলি না কেন, তারা ফুল মার্কস পাওয়ার যোগ্য।
আগ্রহটা মূলত ছিল কিউবা মিচেলকে ঘিরেই। তিনি শুরুতে একাদশে ছিলেন না। ৬৫ মিনিটে বদলি হিসেবে নামেন। যতক্ষণ ছিলেন বুঝিয়েছেন পায়ের কাজ। বদলি হিসেবে নেমে ফাহিম গোল করেই ফেলেছিলেন। কাতারে যে খেলা খেলেছে তা যদি ধরে রাখতে পারে তা হলে এ কথা বলা যেতে পারে- এই কিংসকে এবার ঠেকাবে কে?