গত দেড় দশক মিরপুর স্টেডিয়ামের পরিচিত মুখ ছিলেন গামিনি ডি সিলভা। আকাশি রঙা ট্রাউজার ও সাদা ঢলঢলে পোলো শার্ট পরে রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিনভর পুরো স্টেডিয়াম চষে বেড়াচ্ছেন। কখনো উইকেটের পরিচর্যা করছেন, কখনো মাঠকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। এ ছিল মিরপুরে গামিনির নিত্যদিনের ছবি। শ্রীলঙ্কান কিউরেটরের আচরণ কিংবা কার্যক্রম নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না। তার উইকেট বানানো নিয়ে ছিল রাজ্যের সমালোচনা। ক্যারিয়ারে গামিনি ছিলেন আম্পায়ার। শ্রীলঙ্কার পক্ষে ৩টি টেস্ট ও ১১টি ওয়ানডেতে আম্পায়ারিং করা গামিনি বিসিবির কিউরেটর হিসেবে যোগ দেন ২০১০ সালে। গামিনি যুগ এখন শেষ। তার জায়গায় আগামী ২ বছরের জন্য যোগ দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যান্থনি টনি হেমিং। তাকে নিয়োগ দেওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে, মিরপুরের উইকেটের আচরণ কি এখন বদলাবে? স্পিন ট্রাকের বদলে কি স্পোর্টিং উইকেট হবে? বিসিবির পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদিন ফাহিম স্পষ্ট করে জানিয়েছেন উইকেটের পরিবর্তন হবে, ‘অ্যাবসোলুটলি... অবশ্যই...।’
২০০৬ সাল থেকে নিয়মিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা হচ্ছে মিরপুর স্টেডিয়ামে। এখন পর্যন্ত এখানে টেস্ট হয়েছে ২৮টি। ওয়ানডে ১২০টি এবং টি-২০ ম্যাচ হয়েছে ৬৬টি। পরিসংখ্যান বলছে, উইকেটে রান হলেও বোলারদের প্রাধান্য বেশি ছিল। টেস্টে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারি টাইগার বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম, ১৬ টেস্টে ৮২টি। সেরা বোলিং স্পেলও তাইজুলের, ৩৯/৮, প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে। মিরপুরের উইকেটে ডাবল সেঞ্চুরি ৫টি। পাকিস্তানের আজহার আলি সর্বোচ্চ ২২৬ এবং মুশফিকুর রহিমের ডাবল সেঞ্চুরি ২টি, ২১৯* ও ২০৩*। মিরপুরে বাংলাদেশ ওয়ানডে খেলেছে ১০৩টি। জয়ের সংখ্যা ৫০ এবং হার ৫১টি। এই মাঠে ওয়ানডেতে ব্যাক্তিগত কোনো ডাবল সেঞ্চুরি নেই। সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়াটসনের, ১৮৫ রান। বাংলাদেশের পক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৪৪ রান, ইমরুল কায়েসের। এ মাঠে ওয়ানডেতে দলগত ৩০০ রান ঊর্ধ্ব স্কোর ১৫টি। সর্বোচ্চ দলগত স্কোর, ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ভারতের ৪ উইকেটে ৩৭০ রান। টাইগারদের দলগত সর্বোচ্চ স্কোর ৬ উইকেটে ৩২৯, পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৫ সালে। দলগত দুটি সর্বনিম্ন স্কোরই বাংলাদেশের। ২০১১ সালে বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৮.৫ ওভারে ৫৮ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল। ২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে অলআউট হয়েছিল ১৭.৪ ওভারে ৫৮ রানে। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-২০ ম্যাচে বাংলাদেশের ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ২১১ রান সর্বোচ্চ দলগত স্কোর। বাংলাদেশ আরও দুবার দুই শ ঊর্ধ্ব স্কোর করেছে মিরপুরে। এ মাঠে সর্বনিম্ন স্কোর নিউজিল্যান্ডের ৬০, অস্ট্রেলিয়ার ৬২।
মিরপুরের উইকেট নিয়ে শুরুতে কোনো দলেরই অভিযোগ ছিল না। ২০১৬-১৭ মৌসুম থেকে উইকেটের আচরণ বদলাতে থাকে। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের উইকেট বানানো হয় পুরোপুরি টার্নিং। মেহেদি হাসান মিরাজ, সাকিব আল হাসান ও তাইজুল, নাঈম হাসানের ঘূর্ণিতে বাংলাদেশ সিরিজ জিতে। কিছুদিন আগে টি-২০ সিরিজ খেলে গেছে পাকিস্তান। দলটির কোচ মাইক হেসন স্পষ্ট করে জানান, মিরপুরের উইকেটে খেলে টি-২০ এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ভালো হবে না। এরপর থেকে মিরপুরের উইকেট পরিবর্তনের পথে হাঁটতে থাকে বিসিবি। নিয়োগ দেয় টনি হেমিংকে। তিনি গত কয়েকদিন মাঠ কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে উইকেট দেখেছেন। পার্থ, মেলবোর্ন, পাকিস্তান, শারজাহতে কাজ করার অভিজ্ঞ হেমিংকে দিয়েই সম্ভব মনে করছে বিসিবি। হেমিংয়ের ওপর আস্থা রাখার বিষয়ে বিসিবি পরিচালক ইফতেখার হোসেন মিঠু বলেন, ‘গামিনিতে আমরা যদি খুশি হতাম, তাহলে কিন্তু টনি হেমিংয়ের কাছে যেতাম না। আমরা অবশ্যই মনে করি, মিরপুরের উইকেট আমাদের জন্য একটি সমস্যা। ওই জায়গাটায় আমরা আপস করতে চাই না। আমরা ভালো উইকেটে খেলব। তাতে যদি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়, তাতেও সমস্যা নয়।’